• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

যেভাবে লেখা হয়েছিল-ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২ মে ২০২২

ফন্ট সাইজ
যেভাবে লেখা হয়েছিল-ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ

পবিত্র রমজান শেষে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে আনন্দ নিয়ে হাজির হয় হিজরি শাওয়াল মাসের ১ তারিখ। যেদিন সমগ্র মুসলিম বিশ্ব মেতে ওঠে সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। আর বাঙালিদের জন্য এই ঈদের একটাই মাত্র আগমনী গান আছে। আর সেটা হলো- ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ। যার রচয়িতা বিদ্রোহী কবি খ্যাত আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

এই গানটির যে মাহাত্ম, তা নতুন করে লেখার কিছু নেই। আজ এই গানটি রচনা করার ইতিহাস তুলে ধরা হলো-

সময়টা তখন ১৯৩১ সাল। বাঙালি মুসলমানের কাছে কাজী নজরুল ইসলাম তখন একজন ‘কাফের’। এমনকি শিক্ষিত মুসলমানরাও তাঁকে ‘কাফের’ বলতো। এর পেছনে কিছু কারণও ছিল। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার চেষ্টায় হিন্দু-মুসলিম সবার সাথেই সমান তালে মিশতেন নজরুল। এমনকি হিন্দুদের শ্যামা সঙ্গীত ও ভজন সঙ্গীতও লিখেছেন তিনি। যার কারণে কিছু ধর্মান্ধ তাঁকে কাফের বলতো। এতে মনোকষ্টে ভুগতেন খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী আব্বাসউদ্দীন।

তিনি একদিন নজরুলকে বললেন, ‘কাজী দা, আপনি দুটো ইসলামিক গান লিখুন নাহ! আমি গেয়ে দেবো। দেখবেন সবার ধারণা পাল্টে যাবে।’

নজরুল এ কথায় রাজি হয়েছিলেন বটে। কিন্তু বলে দিলেন যদি ভগবতী বাবু রাজি হয় তবে গান লিখবেন। (ভগবতী বাবু, মানে ভগবতী ভট্টাচার্য, গানের ক্যাসেট প্রকাশকারী কোম্পানি এইচএমভি রেকর্ডিং-এর ইনচার্জ।  এই লোকটির ভূমিকা চিরদিন উজ্জ্বল থাকবে)

একথা শোনার পর আব্বাসউদ্দিন তখন যান ভগবতী বাবুর কাছে। ভগবতী বাবু শিল্পবোধ সম্পন্ন এবং সঙ্গীতের সমঝদার ছিলেন। কিন্তু সমস্যা হলো, তখনকার কলকাতায় রক্ষণশীল হিন্দু সমাজে শ্যামা সঙ্গীত, ভজন এসবের রমরমা বাজার।  আবার ইসলামে গান হারাম, মুসলিম সমাজেও সঙ্গীত নিষিদ্ধ। ফলে ভগবতী বাবু বিষয়টাকে অসম্ভব বলে এড়িয়ে যেতে চাইলেন। 

কিন্তু তখন কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান যেমন সমাদৃত, তেমনি কোচবিহারের উদীয়মান তরুণ শিল্পী আব্বাসউদ্দিনও জনপ্রিয়। ফলে ভগবতী বাবু ঝুঁকিটা নিলেন। 

আব্বাসউদ্দিন আহমেদ তাঁর স্মৃতিকথায় লিখে গেছেন, ‘সেই সময়কার রেকর্ড কোম্পানি এইএমভির কর্মকর্তা ভগবতী ব্যানার্জি তখন বলেছিলেন, আব্বাস সাহেব মুসলমানদের পয়সা নেই। তারা রেকর্ড কিনতেও পারবে না। পুঁজোর সময় গান বিক্রি হয়। ঈদের সময় কোন গান বিক্রি হবে না।’

নাছোড়বান্দা আব্বাসউদ্দিন রাজি করিয়েছিলেন সেসময়কার এইচএমভি কোম্পানির ভগবতী ব্যানার্জিকে।

ভগবতী বাবু রাজি হয়েছে শুনে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখলেন- ' ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' সংগীতটি। সাথে আরও একটি সংগীত। সুর করে তুলে দিলেন আব্বাসউদ্দিনের কণ্ঠে। গানটি এরপর এক বসায় লেখা ও সুর করা।

আব্বাস উদ্দীনের ছেলে শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসি বিবিসি বাংলাকে বলেন, নজরুল আব্বাকে বললো পান নিয়ে আসো আর চা। আব্বা অনেকগুলো পান নিয়ে এলো। আর বললো চা আসছে। নজরুল একটা কাগজ নিয়ে এই গানটি লিখলেন। তারপর বললেন সুরটা এখনই করি না পরে করবো? আব্বাসউদ্দিন বললেন, কাজিদা আপনার মনের যে অনুভূতিটা, যেটা গানের মধ্যে প্রকাশ করেছেন এখন না করলে সেই মজাটা হবে না। এই সেই ইতিহাস।

গানটি প্রথম গেয়েছেন আব্বাসউদ্দিন নিজেই। লেখার কদিন পরেই রেকর্ড করা হয়েছিলো। এরপর সে কী কাণ্ড। কলকাতার অলিতে গলিতে ছড়িয়ে পড়লো এই ইসলামিক সংগীতটি। মানুষ মুগ্ধ হয়ে শুনতে লাগলো আর ভাবছিলো ইসলামিক গানও এত সুন্দর হতে পারে!

এইচএমভি কোম্পানি দ্বিগুন মুনাফা অর্জন করতে লাগলো। ভগবতী বাবু কবি কাজী নজরুল ইসলামকে আরও ইসলামিক সংগীত লিখতে উৎসাহ দিলেন। এরপর কবি গোলাম মোস্তফা, কবি জসীমউদ্দীনও এগিয়ে এলেন।
 
কিন্তু ইসলামিক সংগীত গাওয়ার এত শিল্পী কোথায়? বিশেষত মুসলিম ঘরে। ফলে অনেক হিন্দু শিল্পীরা মুসলমান নাম নিয়ে গান গাইতে লাগলেন। যেমন: ধীরেন দাস-গনি মিয়া নামে,চিত্ত রায়- দেলোয়ার হোসেন নামে,আশ্চর্যময়ী দাসী- আমিনা বেগম নামে,গিরীন চক্রবর্তী- সোনা মিয়া নামে প্রমূখ। 

এভাবেই শুরু হলো কবি কাজী নজরুল ইসলামের  ইসলামিক সংগীতের নতুন যাত্রা। যার শুরুর ফলটা ওই তিনজনের- কবি কাজী নজরুল ইসলাম,আব্বাসউদ্দিন এবং ভগবতী ভট্টাচার্য।

যে কবিকে কাফের ডাকতো অবুঝেরা,সেই অবুঝেরা বুঝে শুনে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ইসলামিক কবি বলতে বাধ্য হয়েছে। 

কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু ইসলামিক সংগীতেই নয়,তিনি শ্যামা সংগীত ও ভজন সংগীত রচনা করেছেন। কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো এতো জনপ্রিয় এবং এতো ইসলামি সংগীত,শ্যামা সংগীত ও ভজন সংগীত আর অন্য কোন কবি লিখেছেন কি না এ তথ্য কেউই দিতে পারেননি।

আগামী ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মদিন। আসন্ন ঈদের আগের দিন রইলো বিদ্রোহী ও সাম্যবাদী এই কবির প্রতি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা ও সামজিক মাধ্যম

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2