শ্রীমঙ্গলে পাহাড়-বনে সাপ বেড়েছে, সাপে কামড়ালে দ্রুত অ্যান্টিভেনম নেয়ার পরামর্শ

চলতি বর্ষার মৌসুমে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকা ও বনাঞ্চলে সাপের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। প্রায়ই পাহাড়ি এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে সাপের কামড়ে আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিষাক্ত সাপের কামড়ের রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে।
শুক্রবার (৭ জুলাই) শ্রীমঙ্গল ৫০ শয্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলে গত দুই দিনে বিষাক্ত সাপের কামড়ে আহত হয়ে ৩জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) বিকেলে আহত হয়েছেন উপজেলার সাতগাঁও ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামের মোঃ সালেক মিয়া (৩৭) এবং ভূনবীর ইউনিয়নের ভূনবীর গ্রামের মোঃ কামরুজ্জামান (২৬)।
এর আগে গত বুধবার (৫ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টায় সাপের কামড়ে আহত হয়েছেন শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের তেলিআব্দা গ্রামের ইলিয়াস মিয়া (৪৬)।
আরও জানা যায়, পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান মোঃ কামরুজ্জামান। তিনি লাইনম্যানের কাজের জন্য আলিয়াছড়া পুঞ্জিতে দায়িত্ব পালনকালে বিষাক্ত সাপের কামড়ের শিকার হন। গুরুতর আহত কামরুজ্জামানকে তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে, রোগীকে এন্টিভেনম ইঞ্জেকশন প্রদান করেন, ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সম্রাট কিশোর পোদ্দারসহ চিকিৎসকের একটি টিম।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বর্ষাকালের অতিবৃষ্টির কারনের পাহাড়ি অধ্যুষিত শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সাপের কামড়ের রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুইদিনে ৩ জন সাপের কামড়ের রোগী জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে সাপে কাটা কামরুজ্জামান নামের এক রোগীর অবস্থা গুরুতর খারাপ হওয়ায় তাকে চিকিৎসকদের একটি টিম সফলভাবে এন্টিভেনম ইঞ্জিকেশন প্রদান করেন।
এন্টিভেনম দেওয়ার পর রোগী ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে আসে। পরবর্তীতে আরও উন্নত চিকিৎসার জন্য এ রোগীকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। এছাড়া সালেক ও ইলিয়াস মিয়া নামের আরও দুইজন রোগী সাপে কাটা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। সেটা বিষাক্ত সাপের কামড় না হওয়ায় এই দুইজনকে ২৪ ঘন্টা হাসপাতালের তত্ত্বাবধানে রোগী রাখা হয়, পরে রোগী সুস্থ থাকায় ছাড়পত্র দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
বন্য প্রাণী সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক সজল দেব ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে বহু সাপ উদ্ধারের ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি প্রচুর পরিমাণে সাপ শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকায়, বিশেষ করে শ্রীমঙ্গলের দোকান, বাড়ি, বাজার ও গাড়ি থেকে উদ্ধার হচ্ছে।
বছর দশেক আগের এক গবেষণায় ৫২ প্রজাতির সরীসৃপের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা উল্লেখ করে জানান শ্রীমঙ্গলের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম, তিনি বলেন, এসব সাপের মধ্যে লাউয়াছড়া বনে অজগর, কিং কোবরা, দাড়াশ, আইড ক্যাট স্নেক, সবুজ বোড়া, লাউডগা, কালনাগিনী, দুধরাজ, ধোড়া, হিমালয়ান ধোড়াসহ ৩৯ প্রজাতির সাপের সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন সাপের সংখ্যা বেড়েছে। বনকর্মীরা টহলে গিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন প্রজাতির সাপ দেখতে পায়।
আরও বলেন, বাংলাদেশে ২৭টি বিষধর সাপসহ ৭৯ প্রজাতির সাপের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেগুলোর বেশিভাগের অস্তিত্ব লাউয়াছড়া বনসহ শ্রীমঙ্গলে রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, বিষাক্ত সাপের কামড়ে কেউ আহত হলে তাকে যেনো দ্রুত শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সাপের কামড়ের এন্টিভেনম ইঞ্জেকশন রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বিষধর সাপ কামড়ালে দ্রুত অ্যান্টিভেনম নেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেন তিনি।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: