ভৈরবে মাকে বাঁচাতে গিয়ে ভাইয়ের হাতে বোন খুন

ভৈরবে সম্পত্তির ভাগ ও নেশার টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডায় আপন ভাই বাবুল মিয়ার (৪৪) হাতে বোন সোমা বেগম (২২) খুন হয়েছেন। শনিবার (২২ জুলাই) দিনগত রাতে উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সোমা বেগম ও অভিযুক্ত খুনি বাবুল মিয়া ওই এলাকার মোতালিব মিয়া ও আয়েশা বেগমের সন্তান। সোমা বিবাহিত এবং দুই শিশু সন্তানের মা। খবর পেয়ে পুলিশ আজ সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে এবং অভিযুক্ত বাবুল মিয়াকে আটক করে।
পুলিশ, নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, বাবুল একজন নেশাগ্রস্ত। সে প্রায়ই নেশার টাকা এবং নিজের সম্পত্তির ভাগ চেয়ে মা-বাবার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টার দিকে মা আয়েশা বেগমের সাথে সম্পত্তির ভাগ ও নেশার টাকা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয় বাবুল মিয়ার। বাকবিতণ্ডার এক ফাঁকে মা আয়েশা বেগমের শরীরে আঘাত করেন বাবুল। এই দৃশ্য দেখে সোমা বেগম ভাইকে বাধা দেয় এবং তর্কে জড়ায়। মায়ের পক্ষ নিয়ে কেনো সোমা প্রতিবাদ করলেন, এই রাগে-ক্ষোভে বোনকে গাছের ডাল দিয়ে মাথায় একাধিক আঘাত করে বাবুল। এতে রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন সোমা। এ ঘটনায় অপর ছোট বোন বিউটি এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে বাবুল। তাদের চিৎকার চেচামেচি শুনে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় বাবুল। পরে আহতাবস্থায় সোমাকে শম্ভুপুর গ্রামের রেল গেইট এলাকার একজন পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি ক্ষতস্থানে ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রয়োজনীয় ওষুধ দেন। রাত ৯টার দিকে বমি শুরু হলে ভৈরবের স্টেডিয়াম পাড়ার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে তারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে নিলে চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। ঢাকায় নেওয়ার পথে সোমার মৃত্যু হয়।
এ বিষয়ে নিহতের ছোট বোন বিউটি আক্তার বলেন, আমার বড় ভাই বাবুল মাদকসেবী। সে নেশা করে এসে আমার মা-বাবাকে অত্যাচার করত এবং আমার মাকে প্রায়ই মারধর করত। এই জন্য ভাইকে কয়েক বছর আগে বাবা-মা বাড়ি থেকে বের করে দেন। সে পরিবার নিয়ে শম্ভুপুর রেল গেইট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকে। তিনি প্রায় সময় মায়ের কাছে এসে নেশার টাকা দেয়ার জন্য বলতো ও সম্পত্তির ভাগ চাইতো। মাকে মেরে ফেলার হুমকি দিত।
ঘটনার দিন বিকালের দিকে মাকে নেশার টাকা ও সম্পত্তির জন্য চাপ দেয়। এক পর্যায়ে মাকে মারধর করে। পরে আমার বড় বোন সোমা বেগম বাধা দিলে তাকে গাছের ডাল দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তখন প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে বাবুল পালিয়ে যায়।
তিনি আরোও বলেন, ঘটনার দিন সকালে তার বোন শ্বশুর বাড়ি থেকে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। বিকালে সে তার শ্বশুরবাড়ি কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর এলাকায় চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে এই ঘটনা ঘটে যায়। আমার বোনের তিন বছর ও দেড় বছর বয়সী দুইজন ছেলে সন্তান রয়েছে। তার স্বামীর নাম শাহীন মিয়া। আমি আমার ভাই বাবুল মিয়ার ফাঁসি চাই।
এ বিষয়ে ভৈরব সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাবুল সম্পত্তি ভাগের জন্য প্রায় সময় তার মাকে মারধর করত। সে এর আগেও এই ধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘটনার দিন বাবুল যখন তার মাকে মারতে যায়, তখন তার বোন বাধা দিলে সে তার বোনকেও আঘাত করে আহত করে। পরে তার মৃত্যু হয়। ঘটনার খবর পেয়ে আমিসহ ওসি ও শহর ফাঁড়ির ইনচার্জ ঘটনাস্থলে যাই। আসামীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: