ফরিদগঞ্জে যুবদলের কাউন্সিল নিয়ে ক্ষোভ

বিএনপি ঘোষিত এক দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে সারা দেশে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে কেন্দ্র থেকে ঘোষণা পাঠানো হচ্ছে সকল বিভাগ, জেলা ও উপজেলায়। ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যস্ত বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। তারা একদিকে কেন্দ্রের নির্দেশ অপরদিকে স্থানীয় পরিকল্পনা নিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গলধঘর্ম। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নেতাকর্মীরা পড়ছেন নানামুখী হয়রানীতে। কারও ঘুম নেই। কেউ বাড়ি ছাড়া। কেউ খেয়ে না খেয়ে কর্মী-সমর্থকদের জোটবদ্ধ করতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। দফায় দফায় বৈঠকে করে চলেছেন অবিরাম।
নেতাদের নির্দেশ রয়েছে। দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ এ মুহূর্তের কোনো প্রকার কোন্দলে জড়ানো যাবে না। প্রায় সকল নেতাকর্মী এমনকি সমর্থকরা সরকার পতনের দাবি বাস্তবায়নে সমস্ত ভেদাভেদ ভুলে এক মঞ্চে থাকার জন্য শপথ নিচ্ছে।
ঠিক এমন সময়েই চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় দলের ভেতরে ল্যাং মারা ও টেক্কাবাজির খেলায় মেতে উঠেছে এক শ্রেণির নেতারা। দল ঘোষিত কর্মসূচি দূরে ঠেলে দিয়ে একটি গ্রুপ পদ-পদবী বাগিয়ে নিতে গত তিন সপ্তাহ ধরে যুবদলের সম্মেলন আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে। এতে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করা ও সরকার পতনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে উপজেলায় ভাটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা দাবি তুলেছেন আত্মঘাতি এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হোক।
বিএনপির চলমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যেই ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের প্রশ্ন এ মুহূর্তে আন্দোলন নাকি সম্মেলন কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্য একটি পক্ষের দাবি ফরিদগঞ্জে বিএনপিরই একটি পক্ষ নিজেদের স্বার্থে আন্দোলন বাদ দিয়ে অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই সম্মেলন করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সম্মেলনকে ঘিরে জেলা যুবদলে পক্ষ থেকে প্রকাশিত কাউন্সিলের তালিকা নিয়েও অনিয়ম হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নেতার্মীরা জানান, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পৌর কমিটির প্রতিটি ওয়ার্ডে ২ জন করে কাউন্সিলরের তালিকা প্রকাশিত হলেও উপজেলার কমিটির ক্ষেত্রে ৩ জন করে তালিকা প্রকাশ করে। যা গঠনতন্ত্র বিরোধী। গঠনতন্ত্র না মেনে এ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে বলে ভোটাররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জানা যায়, গত ২৬ জুলাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদল চাঁদপুর জেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক মো. ইউসুফ মিয়াজীর স্বাক্ষরিতপত্রের মাধ্যমে ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবদলের সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার জন্য যুবদলের গঠনতন্ত্র ৮(খ) ধারা অনুযায়ী সাবজেক্ট কমিটিতে কাউন্সিলর তালিকা করে জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে কাউন্সিলর তালিকা অনুমোদন করে ৪ আগস্ট ২০২৩ আপনার ইউনিটের সম্মেলনের আয়োজন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৬ জুলাই ফরিদগঞ্জ উপজেলা যুবদলের আবেদনের প্রেক্ষিতে ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রধান সমন্বয়ক আলহাজ্ব এম এ হান্নানের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে সম্মেলনের তারিখ ৪ আগস্টের পরিবর্তে ২৬ আগস্ট পুনঃনির্ধারণ করা হয়।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, এখন আমাদের আন্দোলনে সংগ্রাম করার কথা, শুনেছি ২৬ এ আগস্ট উপজেলা যুবদলের সম্মেলন হওয়ার কথা। এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবোনা। উপজেলা বিএনপির সমন্বয়ক এম এ হান্নান ও জেলা যুবদলের নেতারা জানেন।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান দুলাল বলেন, এখন মূলত আমাদের সম্মেলনের সময় না। সারা দেশের ন্যায় সকলে মিলে আন্দোলন সংগ্রাম করার কথা। সারা দেশে কোথাও যুবদলের সম্মেলন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের জানা মতে আর কোথাও হচ্ছেনা।
চাঁদপুর জেলা যুবদলের সভাপতি মানিকুর রহমান মানিক বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি উপহার দিতে। ইতোমধ্যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি এখানে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে। যেন আন্দোলনকে কোনভাবে প্রশ্নবিদ্ধ না করে সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সম্মেলন হবে কিনা আপনারা জানতে পারবেন। তৃণমূল বিএনপি'র নেতাকর্মীদের দাবি কাউকে খুশি করতে এই মুহূর্তে সম্মেলন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না আমরা কাউকে খুশি করার জন্য সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করি নাই। এর মধ্যে জোরালো আন্দোলন হলে সম্মেলনের বিষয়টি ভেবে দেখা হবে।
জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন খান আকাশ বলেন, ফরিদগঞ্জে বিএনপির মনোনয়নপ্রাপ্ত এম এ হান্নান চাচ্ছেন সম্মেলন হচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাই আমাকে ফরিদগঞ্জ যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন।
জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল হোসেন বলেন, এখন মূলত আমাদের সম্মেলনের সময় না। এখন দলের সকলে মিলে একত্রিত হয়ে আন্দোলন করার সময়। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।
এদিকে চলমান আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে যুবদলের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে মনে করেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আজিজুর রহমান আজিজ।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে সারাদেশের ন্যায় যেখানে সকলে মিলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা, এই আন্দোলন বাদ দিয়ে সম্মেলন করা বোকামির শামিল ও দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হচ্ছে। এইটা এখন ছেলে খেলার মতো হয়ে গেছে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক নাছির পাটওয়ারী বলেন, এখন আমাদের সারাদেশের ন্যায় সকলে মিলে আন্দোলন ঝাপিয়ে পড়ার কথা। এখন কমিটি করার সময় না, এখন আন্দোলনের সময়। যদি সম্মেলন করে কমিটি করতে যায় কেউ হেরে যাবে, আবার কেউ জিতে যাবে। যারা হেরে যাবে তাদের মনে ক্ষোভ থেকে যাবে আমি হতে পারলাম না এতো কষ্ট করলাম। এতে দেখা যাবে আন্দোলন করার জন্য যে প্রাণচাঞ্চলতা আছে মনের যে জোরালো ভূমিকা রাখার কথা সেটা হবেনা। এ কমিটি এখন না করে যখন সুষ্ঠু পরিস্থিতি তৈরি হবে তখন এ কমিটি করলে সবার জন্য মঙ্গল হবে।
বিভি/ এইচএস
মন্তব্য করুন: