স্মার্ট অর্থনীতির অন্যতম মাধ্যম হতে পারে নাকুগাঁও স্থলবন্দর

শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে শেরপুর জেলা উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত হয় "স্মার্ট নাকুগাঁও স্থলবন্দর উন্নয়নে করণীয় শীর্ষক" আলোচনা সভা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য নিয়ে নাকুগাঁও স্থল বন্দর নির্মাণ করা হয়েছিল তা পূরণ হয়নি। বন্দরটি জীর্নশীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এই বন্দরকে ট্রান্স এশিয়ার অন্তর্ভূক্ত করতে হলে বন্দর পর্যন্ত ৮ লেন সড়ক বাস্তবায়ন করতে হবে।
মেঘালয়, আসাম ও ভুটানের কাছে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা তুলে ধরতে হবে এবং আমদানীর যে সীমাবদ্ধতা আছে তা দূর করতে হবে। আগামী মাসের ৭ তারিখে এশিয়া কানেক্টিভিটি’র বৈঠক রয়েছে আসামে। সেখানে শেরপুর জেলার নাকুগাঁও নিয়ে আপনাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব শাহ মো. আবু রায়হান আল- বেরুনী বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কাজের কল্যাণে এই বন্দর সম্পর্কে আমার বেশকিছু সুপারিশ এবং কার্যক্রম ইতিমধ্যেই সরকার গ্রহণ করেছে। এই বন্দর পুরোপুরিভাবে কাজে লাগানো গেলে শেরপুরের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পর্যটন খাতের ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে।
শেরপুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জনাব ড. এ.কে.এম রিয়াজুল হাসান সম্রাট বলেন, শেরপুর জেলার উন্নয়ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণেই এতদিন যাবত আটকে আছে। শেরপুর জেলার এই বন্দর দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি লাভ করলে শুধু শেরপুর না জাতীয়ভাবেই বৈপ্লবিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তন সাধিত হবে। যার মাধ্যমেই সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা সম্ভব।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ যে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তার জন্য দরকার স্মার্ট অর্থনীতি ও স্মার্ট কানেক্টিভিটি। আর এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম অর্জন করার অন্যতম মাধ্যম হতে পারে নাকুগাঁও স্থলবন্দর। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত এবং ভুটানের ত্রিপাক্ষিক সমঝোতার অভাবে এই স্থলবন্দরটি দিন দিন বিলুপ্ত হবার পথে।
২০২২-২৩ অর্থবছরে এই বন্দর থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৪৩ লাখ ৪ হাজার টাকা মাত্র। অথচ এই বন্দরের আয় হতে পারতো হাজার কোটি টাকা। যে রাজস্ব থেকে শেরপুর জেলার সার্বিক রাষ্ট্রীয় ব্যয় মেটানোর পরেও জাতীয় অর্থনীতিতে রাখতে পারতো ব্যাপক ভূমিকা। ১৯ ৯৭ সালে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী নাকুগাও স্থলবন্দরের কাজ শুরু হয়।
এ বন্দর দিয়ে ১৯ টি পণ্য আমদানির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল। কিন্তু এর ৫ বছরের পর অর্থাৎ ২০০০ সালে কয়লা ও পাথর ছাড়া সব ধরনের পণ্য বাণিজ্যিকভাবে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে কয়লা আমদানি ও বন্ধ হয়ে গেছে। স্থল বন্দরে কর্মরত প্রায় ২ হাজার ৫শত কর্মজীবী মানুষ এখন বেকার হবার পথে। এই বন্দরের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা, যেমন ভুটান বাংলাদেশ থেকে পোশাক ঔষধ এবং শিল্প কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ থেকে। অন্যদিকে ভুটান থেকে বাংলাদেশে আসতে পারে ফলমূল ও কৃষি পণ্য।
ভারতের আসামের জমির উদ্দিন রোডের দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ শুটকির বাজার রয়েছে যেখান থেকে বিবরণ শুটকি বাংলাদেশে আমদানি করা যেতে পারে। তাছাড়া ভারতের সুপারির বিশেষ কদর রয়েছে আমাদের এখানে। সেই সুপারিও এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা যেতে পারে। স্থলবন্দরটি গত ৮ বছর ধরে চালু হলেও অর্থনৈতিকভাবে এখনো স্বাবলম্বী হতে পারেনি। যাতে অর্থনীতিতে যে বন্দরটি ব্যাপক ভূমিকা রাখার কথা সেই স্থলবন্দরটি ভারত সরকারের অসহযোগিতা এবং বাংলাদেশ সরকারেরও কূটনৈতিক তৎপরতার অভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। করোনা মহামারীর পর থেকে ভারতে ভ্রমণের ইচ্ছুক পর্যটকদের যাতায়াত এখন এই বন্দর দিয়ে বন্ধ রয়েছে। অথচ এই স্থল বন্দর দিয়ে চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে যাতায়াত করা খুবই সহজ এবং খরচ কম। ভারতের মেঘালয়, শিলিগুড়ি ও ভুটান যাতায়াতের সবচাইতে সহজ পথ নাকুগাঁও স্থলবন্দর।
আমরা ভারত সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ করবো এই স্থলবন্দরটিকে কিভাবে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর এবং বাংলাদেশ-ভারত ও ভুটানের সকল পণ্য আমদানি রপ্তানি এবং পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য সকল সহজ এবং কষ্ট লাঘব এর ব্যবস্থা ও ভৌত অবকাঠামো এবং স্বরূপ উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত সকল ধরনের অবকাঠামো এবং ব্যবস্থা এই স্থলবন্দরের নির্মিত হবে বলে আমরা আশা রাখি। আর এর মাধ্যমে গড়ে উঠতে পারে স্মার্ট নাকুগাঁও স্থলবন্দর।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অতিরিক্ত সচিব দিলদার আহমেদ বলেন, স্মার্ট স্থল বন্দর বিনির্মাণের জন্য ৬টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন। তার মধ্যে অন্যতম স্মার্ট ব্যাংকিং সেবার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা বন্দর এলাকায় তৈরী করতে হবে। প্রয়োজনীয় লোকবল ও ভৌত অবকাঠামো সংস্কারসহ লোকবল বৃদ্ধি করা এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা, হোটেল- মোটেলের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন।
আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্টিক সার্জন আদিলুর রহমান রূপস, শেরপুর জেলা সমিতির প্রতিষ্ঠাকালীন সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শফিউদ্দিন, শেরপুর জেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি জনাব সাদিউজ্জামান সাদী-সহ শেরপুর জেলার অন্যান্যরা।
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: