মাত্র ১০ কিলোমিটার যেতে নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার টাকা!

সিলেটে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের থেকে যারা বের হচ্ছেন তাদের যাতায়াতে নৌকা একমাত্র বাহন। বিপদগ্রস্ত এসব মানুষের প্রয়োজন বুঝে তাদের সহায়তা করা, সুবিধা করার কথা নৌকার মালিক কিংবা মাঝিদের। কিন্তু তারা যেন সুযোগ পেয়েছেন মানুষের অসহায়ত্বের! অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে নৌকায় ১০ কিলোমিটার পার হতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হচ্ছে।
কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার সালুটিকর থেকে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার তেলিখালের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই ১০ কিলোমিটার দূরত্বে যাওয়ার জন্য নৌকা ভাড়া ৫০ হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বন্যাদুর্গত পুরো সিলেটেই নৌকার জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে। নৌকার অভাবে পানিবন্দি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রেও আসতে পারছেন না; জলমগ্ন ঘরেই আটকে আছেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের বাসিন্দা নিহাল আহমদ বলেন, ‘আমার পুরো পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে, কিন্তু তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার মতো কোনো নৌকা পাইনি। ‘বাধ্য হয়ে ১৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ডিঙি নৌকা কিনেছি। অন্য সময় এগুলো তিন হাজার টাকায় পাওয়া যায়।’
তেলিখালের বাড়িতে পানিবন্দি অবস্থায় থাকা অসুস্থ স্ত্রীকে আনতে সালুটিকরে নৌকা ভাড়া করতে গিয়েছিলেন মারুফ আহমদ (৩৫)। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় এই সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে একমাত্র ভরসা নৌকা, কিন্তু এই নৌকাই এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে। মারুফ বলেন, ‘চাকরির জন্য আমি সিলেট শহরে থাকি। বাড়িতে আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাকে আনার জন্য একটি নৌকা ভাড়া করতে এসেছিলাম, কিন্তু ৫০ হাজার টাকার নিচে কোনো নৌকা যেতে চাচ্ছে না। আমি ৪০ হাজার পর্যন্ত বলেছি। কেউ যায়নি।’
ভাড়া এমন বাড়িয়ে দেয়া প্রসঙ্গে ইঞ্জিনচালিত একটি নৌকার চালক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘আমরা মালিকের নির্দেশমতো কাজ করছি। মালিক এমন ভাড়া নিতে বলেছেন।’
সিলেটে টানা বৃষ্টিতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে। ইতোমধ্যে বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার সঙ্গে শহরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। প্রায় ২৪ বছর পর এমন বন্যা দেখতে পেলো সিলেটবাসী। এমন কঠিন মুহুর্তে দেশবাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছে বন্যায় আটকে পড়া সাধারণ মানুষ।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, ১৯৯৮ সালের জুন মাসে সিলেট বিভাগে অনেকটা এমন বন্যা হয়েছিল। বন্যার কবল থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে সাধারণ মানুষ। এজন্য তাদের একমাত্র বাহন এখন নৌকা। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কয়েকগুণ বেশি নৌকা ভাড়া আদায় করছে কিছু অসাধু ব্যক্তি। এই বিপদের মধ্যেও তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের কুৎসিত খেলায় মেতেছে।
তরুণ কন্ঠশিল্পী তাসরীফ হোসাইনের ভেরিফাইড পেইজে পোস্ট করে লিখেছেন, আজ সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ গিয়েছিলাম একজন অন্তঃসত্বা মহিলাকে উদ্ধার করার জন্যে। জানেন? এখানে কোনো কোনো নৌকা এক ঘণ্টার জন্য ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকাও ভাড়া বাবদ চাইছে।
যাওয়ার পথে দেখলাম সেনাবাহিনীও নৌকার খোঁজ করছে ঘাটে বসে। হেল্প চাইলাম, উনারাও নিরুপায়। অনেক কষ্টে একজন মাঝির হাতে পায়ে ধরে রোগীর কথা বলিয়ে রাজি করালাম।’
বিভি/এনএ
মন্তব্য করুন: