২২ বছর পার হলেও ভাতার কার্ড পাননি বাঘবিধবা রহিমা

সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে প্রাণ হারান রহিমা খাতুনের স্বামী। এরপর ২২ বছর কেটে গেছে, আজও ভাতার কার্ড কিংবা সরকারি কোনো সহায়তা পাননি তিনি। কোনোরকমে অন্যের বাড়িতে কাজ করে, মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছেন তিনি।
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ইউনিয়নে বাস করেন রহিমা খাতুন।
তিনি বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুর আগে বুঝতে পারে যে তার শেষ সময় চলে এসেছে। আমার স্বামীও বুঝতে পেরেছিলেন। মধু আহরণ করতে সুন্দরবনে যাবেন না, এ নিয়ে বড় ভাইয়ের (ভাশুর) সঙ্গে মারামারি করে বাড়ি থেকে চলে যান। ফিরে আসার পর আমার শ্বাশুড়ি বলেন, বড় ভাইয়ের সঙ্গে মারামারি করেছিস, সুন্দরবনে গেলে যেন তোরে বাঘে খায়।’
রহিমা খাতুন জানান, মা ও বড় ভাইয়ের বকাঝকা শুনে তিন দিন পর সুন্দরবনে মধু আহরণ করতে যান রেজাউল করিম। সেদিনই তাকে বাঘে ধরে নিয়ে যায়। বাঘের আক্রমণের মুখে বড় ভাইকে বলেছিলেন, তিনি আর বাঁচবেন না। ছেলেমেয়েকে দেখে রাখতে। ওই রাতে ভাই ও সঙ্গীরা ফিরে এলেও ফেরেননি রেজাউল।
এরপর হতভাগা অপবাদ দিয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় রহিমা খাতুনকে। তিন শিশুসন্তান নিয়ে বাবার বাড়ি চলে আসেন তিনি। তখন থেকে এখনও সুন্দরবনের নদীতে মাছ ধরে, মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। দুই ছেলে আমার সঙ্গে ছিল। কয়েক বছর আগে ছেলেরা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি।’
গাবুরা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবিয়ার রহমান বলেন, ‘আমার এলাকায় একাধিকবার মাইকিং করেছি। ৪০ বছরের ঊর্ধ্বে যেসব বিধবা আছেন, তাদের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এই ওয়ার্ডে ৫৫ জন নারী আছেন, যাদের স্বামী বাঘের আক্রমণে মারা গেছেন। রহিমা আমার চাচাতো বোন, কীভাবে বাদ পড়লেন জানি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে তাকে ভাতার কার্ড করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।’
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ‘রহিমা খাতুন ভাতার কার্ড কেন পেলেন না বুঝতে পারছি না। তাকে কার্ড করে দেবো।’
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আক্তার হোসেন বলেন, ‘এখন কেউ বাঘের আক্রমণে মারা গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবারকে সরকারি সহায়তা দেওয়া হয়। তবে রহিমা খাতুন এত বছরেও কেন ভাতার কার্ড পাননি বিষয়টি খতিয়ে দেখব। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে অবশ্যই ভাতার কার্ড করে দেওয়া হবে।'
বিভি/এনএ
মন্তব্য করুন: