বন্ধুরা সবাই পরীক্ষা দিচ্ছে, ধর্ষণের শিকার কিশোরী হাসপাতালে কাতরাচ্ছে

প্রতীকী ছবি
গতকাল দেশজুড়ে শুরু হয়েছে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল পূর্ণিমারও (ছদ্মনাম)। কিন্তু বন্ধুরা সবাই যখন এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তখন সে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। পরীক্ষার কিছুদিন আগে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে ট্রমায় ভুগছে পূর্ণিমা। পুলিশ বলছে, মানসিক অবস্থা ভালো না থাকায় সে পরীক্ষায় বসেনি।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের গাইনি ওয়ার্ডে নির্বাক তাকিয়ে আছে পূর্ণিমা। তার মা বলেন, ‘আমার সর্বনাশ হইয়া গেছে। ছাওয়াটা তব্ধা নাগি গেছে। পরীক্ষার কথা কন কোন মুখত (মুখে)? ওর বাবা ভ্যান চালায়। কেমন করি মামলা চালামো।’
তবে সব ঠিক থাকলে শনিবার থেকে মেয়ে পরীক্ষা দেবে বলে জানান পূর্ণিমার মা। এর আগে শারীরিক পরীক্ষা ও আদালতে ধর্ষণের বর্ণনা দিতে পুলিশি হেফাজতে ছিল মেয়েটি। পুলিশ বলছে, পরীক্ষা দেওয়ার মতো মানসিক অবস্থাও ছিল না তার।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার একটি বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল পূর্ণিমার। গতকাল বৃহস্পতিবার পরীক্ষার শুরু হলেও প্রায় সারাদিনই হাসপাতালে কেটে যায় তার।
লালমনিরহাট সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোজাম্মেল হক জানান, বৃহস্পতিবার মেয়েটির শারীরিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। পাশবিকতা ও পরীক্ষা দিতে না পারায় সে প্রচণ্ড ট্রমায় রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় থেকে প্রবেশপত্র আনতে মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়। পরে সে আর ফেরেনি। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে দূরসম্পর্কের আত্মীয় হাফিজুল ইসলামের (৩৫) এসএমএস পান তার মা। তার সঙ্গে কথা বললে হাফিজুল জানান, ৫০০ টাকা দিয়ে মেয়েটিকে লালমনিরহাটগামী ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর কিছু জানাননি।
মেয়েটির পরিবার জাানিয়েছে, পরীক্ষা উপলক্ষে মেয়েটিকে নতুন কাপড় কিনে দেওয়ার কথা বলে ডেকে নেয়ে হাফিজুল। পরে তাকে একটি বাড়িতে নিয়ে তিনজন মিলে ধর্ষণের পর তাকে ঢাকাগামী বাসে তুলে দেয়। এ অবস্থায় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল করলে আশুলিয়ার পুলিশ ২ সেপ্টেম্বর ভোরে চান্দুরা থেকে তাকে উদ্ধার করে। ৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে চিকিৎসা নিয়ে পরের দিন হাতীবান্ধায় নিজের বাড়ি ফেরে সে।
৭ সেপ্টেম্বর পরিবারের সদস্যদের কাছে পূর্ণিমা জানায়, ১ সেপ্টেম্বর রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে সে। এরপর তার মা ১৩ সেপ্টেম্বর লালমনিরহাট সদর থানায় মামলা করেন। এতে হাতীবান্ধার হাফিজুল ইসলাম (৩৫), লালমনিরহাটের নাবিল পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার শামসুল হোসেন ওরফে বাবুল (৪৫) ও তছলিম উদ্দিন সরকারকে (৪৫) আসামি করা হয়। এর মধ্যে শামসুল ও তছলিমকে গ্রেপ্তার করে গত বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে পুলিশ।
লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার মেয়েটি আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মূল আসামি হাফিজুলকে ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: