অতিরিক্ত মদপানে ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু, কেন্দ্রের দাবি ভিন্ন

ফরিদপুরে অতিরিক্ত অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ায় রাকিবুল ইসলাম ওরফে রাকিব (২৭) নামে এক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু হয়েছে। রাকিবুল ইসলাম ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ময়না ইউনিয়নের বেলজানি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কনস্টেবল শরিফুল ইসলামের ছেলে। তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে সড়ক দুর্ঘটনায় রাকিবের মৃত্যু হয়েছে দাবি করে তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় কমিটি।
জানা গেছে, অ্যালকোহল বিষক্রিয়ায় সোমবার দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ (বিএসএমএমসি) হাসপাতালের আইসিইউ (ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিটে) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পক্ষ থেকে সোমবার রাতে রাকিবের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে একটি শোক বার্তা প্রকাশ করা হয়।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ এর যৌথ স্বাক্ষরিত ওই শোক বার্তায় বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফরিদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি রাকিবুল ইসলাম সোমবার বিকাল আনুমানিক ৩টা ৩০মিনিটে সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতারেল ইন্তেকাল করেছেন। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার গভীরভাবে শোকাহত। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাকিবুল ইসলামের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছে।’
জানা যায়, রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সোমবার সকাল ৯টা ১০ দিকে ৪২৭৮৩/২৩ সিরিয়ালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার বন্ধু পরিচয়ে আবির নামে এক তরুণ এসে ভর্তি করে। ভর্তির জায়গায় ‘পুলিশ কেস’ সিল দেয়া ছিল। হাসপাতালের রেজিস্টার খাতায় ভর্তির কারণ উল্লেখ করা হয়েছে-‘ভমিটিং অ্যালকোহল পয়জনিং’।
ভর্তি করতে এসে আবির জানায়, বমির প্রবণতা থাকায় রাকিবকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে ওই হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি এক নারী জানান, ভর্তি হওয়ার সময় রাকিবুল আরিফকে বলেছিল, ‘মদের সাথে কি খাওয়ালি আমার বুক ও গলা জ্বলে যাচ্ছে।’
তবে এরপর আবিরের আর কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে আবিরের যে মোবাইল ফোন নম্বরটি দেওয়া হয় তাতে ফোন করে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
মেডিকেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বমির কথা বলে রাকিবুলকে ভর্তি করা হলেও তার সমস্যা ছিল অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়া। তাকে দ্রত আইসিতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়।
ওই হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমান বলেন, এটি একটি পুলিশ কেস। রাকিবুলের মৃত্যুর পর এব্যাপারে যাবতীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ফরিদপুরের কোতয়ালী থানায় লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
রাকিবুল ইসলাম রাকিবের বড় ভাই রাজিবুল ইসলাম বলেন, যতটুকু জানতে পেরেছি থার্টি ফার্স্ট নাইটে বন্ধুদের সঙ্গে হাবিজাবি ও মদ পান করে রাকিব। পরবর্তীতে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বমি করতে থাকে। তার বন্ধুরা তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
রাকিবুল ইসলামের চাচাতো ভাই ও স্থানীয় ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, খবর পেয়ে আমরা তার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসি। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় স্থানীয় বেলজানী-খরসুতী মাদরাসা সংলগ্ন কবরস্থান তাকে দাফন করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানমজীদুল রশিদ ওরফে রিয়ান বলেন, তার জানা মতে রাকিবুল মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিএসএমএমসি হাসপাতালে মারা গেছেন। অ্যালকোহলজনিত মৃত্যুর ব্যাপারে তার কিছু জানা নেই। তিনি বলেন, রাকিবুলকে তিনি চেনেন না। কেন্দ্রীয় কমিটি অনুমোদন করার সময় তার নাম কলম দিয়ে হাতে লিখে দিয়ে অনুমোদন করা হয়।
ফরিদপুরের কোতয়ালী থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. শাহরীয়ার বলেন, এ মৃত্যু সংক্রান্ত ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় কোন তথ্য নেই।
এ ব্যাপারে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, এ ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। বিস্তারিত জেনে আপনাদের জানাতে পারবো।
বিভি/এইচএ/এইচএস
মন্তব্য করুন: