• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

বিকল বেশির ভাগ চিকিৎসা যন্ত্র

কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল নিজেই ‘রোগাক্রান্ত’, বঞ্চিত সেবাপ্রার্থীরা

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১১:১৬, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

আপডেট: ১১:২৪, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল নিজেই ‘রোগাক্রান্ত’, বঞ্চিত সেবাপ্রার্থীরা

চিকিৎসাসেবায় কুড়িগ্রামবাসীর একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যার কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল। কিন্তু হাসপাতালটি নিজেই যেন ‘রোগাক্রান্ত’। জনগণের টাকায় মূল্যবান চিকিৎসা যন্ত্রপাতি কেনা হলেও হাসপাতালের বেশিরভাগ মূল্যবান যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে আছে। একদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের ঘাটতি অন্যদিকে অকেজো যন্ত্রপাতিতে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, এই হাসপাতালে ল্যাপারোস্কপি, ইকো, ইটিটি, আর্থোস্কপি, এন্ডোস্কপি, ইসিজি, ডিজিটাল এক্সরে মেশিন সহ কয়েকটি অতিপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি রয়েছে। তবে বেশিরভাগ যন্ত্র বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ইটিটি মেশিনটি সচল থাকলেও সরঞ্জামের অভাবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে না। এন্ডোস্কপি মেশিন সচল থাকলেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অনাগ্রহে এর সুবিধা পান না রোগীরা।

হাসপাতালের একাধিক সূত্রের দাবি, হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা কয়েকটি যন্ত্রের ব্যবহার জানলেও অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এসব ব্যবহারে অনীহা তাদের। অথচ ব্যাক্তিগত চেম্বার কিংবা ক্লিনিকে একই যন্ত্রে তারা রোগ নির্ণয়ের কাজ করছেন। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, লোকবলের অভাব এবং ত্রুটির কারণে এসব যন্ত্রের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে প্রায় এক দশক আগে ল্যাপারোস্কপি (পেট কাটা ছাড়াই পিত্তথলি ও পাকস্থলির পাথর অপাসারণ) মেশিন দেয় সরকার। কিন্তু ২০১৩ সালের পর এই যন্ত্রের কোনও সুবিধা পাননি রোগীরা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবে যন্ত্রটি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের এক কোণে অযত্নে পড়ে আছে। কুড়িগ্রামের অন্য কোনও হাসপাতালে এই যন্ত্র নেই। ফলে উদরীয় অপারেশনের জন্য জেলার রোগীকে সুদূর রংপুরে যেতে হয়।

হাসপাতালে ইকো মেশিন থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে এর সুবিধা পাচ্ছেন না রোগীরা। ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের ইকোকার্ডিওগ্রামের প্রয়োজন হলে তাদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হচ্ছে। আর এর সুবাদে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার গরিব রোগীদের পকেট কাটছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা শহরের চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ইকোকার্ডিওগ্রামের সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে নিয়মিত ইকোকার্ডিওগ্রাম  করেন জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত দুই হৃদরোগ চিকিৎসক।

জেনারেল হাসপাতালের কার্ডিওলজির কনসালটেন্ট ডা. মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতালের ইকো মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এটি মেরামত করার জন্য বলা হলেও তা হয়নি। ফলে রোগীরা এর সেবা নিতে পারছেন না। কুড়িগ্রামের মতো দরিদ্র এলাকায় হাসপাতালে আসা রোগীদের অনেকেই বাইরে পরীক্ষা করার সামর্থ রাখেন না। ফলে মেশিনটি মেরামত করা জরুরি।’

পাকস্থলি ও খাদ্যনালী পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত এন্ডোস্কপি মেশিনটি ব্যবহারের জন্য হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। মেডিসিন বিভাগে কর্মরত ডা. মঈনুদ্দিন আহমেদ এই যন্ত্র ব্যবহারে পারদর্শী হলেও এই যন্ত্র ব্যবহারে তার আগ্রহ নেই তার। তবে তিনি বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে একই যন্ত্রে নিয়মিত পরীক্ষা করান বলে একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে ডা. মঈনুদ্দিন বলেন, ‘ওয়ার্ডে রোগী দেখার পর এন্ডোস্কোপি করার সুযোগ থাকে না। আমি ওই যন্ত্রের জন্য নিযুক্ত চিকিৎসকও নই। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে সপ্তাহে একদিন এন্ডোস্কপি করি।’

শুধু চিকিৎসা যন্ত্র নয়, জেলার সর্ববৃহৎ এই চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রায় আড়াই মাস ধরে নিত্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম ৫ সিসি সিরিঞ্জ ও ডিজিটাল এক্স-রে ফ্লিম সরবরাহ নেই। ফলে প্রতিদিন বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন রোগীরা। জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা সেবা নিতে এসে বাইরে থেকে এসব সরঞ্জাম কিনতে বাধ্য হচ্ছেন হতদরিদ্র রোগীরা।

এসব যন্ত্রে স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ কেমন: ২০১৩ সালে কুড়িগ্রাম হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ার হোসেন। বর্তমানে তিনি রংপুরে কর্মরত। তিনি থাকাকালীন সর্বশেষ ২০১৩ সালে ল্যাপারোস্কপি মেশিন ব্যবহার করে অপারেশন হলেও গত ৯ বছরেও এই মেশিনের আর কোনও ব্যবহার হয়নি। মুঠোফোনে ডা. আনোয়ারের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, বর্তমানে এই মেশিন দিয়ে শল্যচিকিৎসায় ২৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। অথচ কুড়িগ্রাম হাসপাতালে এই মেশিন থাকা সত্ত্বেও রোগীদের রংপুরে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে এই চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।

জেলা শহরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছাড়া আর কোথাও এন্ডোস্কপি ও ইটিটি সুবিধা নেই। সেখানে এন্ডোস্কপি করেন জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মঈনুদ্দিন আহমেদ এবং ইকোকার্ডিওগ্রাম ও ইটিটি করান ডা. মো. সাজ্জাদুর রহমান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে এন্ডোস্কপি করাতে একজন রোগীকে দেড় হাজার টাকা এবং ইটিটি করাতে আড়াই হাজার টাকা খরচ করতে হয়। আর ইকোকার্ডিওগ্রাম করাতে ১৫শ’ থেকে আড়াই হাজার টাকা খরচ করতে হয়। হাসপাতাল ছাড়া জেলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে আর্থোস্কপি ও ল্যাপারোস্কপি মেশিন নেই।

সার্বিক বিষয় নিয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শহিদুল্লাহ লিংকন বলেন, ‘ল্যাপারোস্কপি মেশিনটির বিষয় আমার জানা ছিল না। অন্য সব যন্ত্র ব্যবহার হয়। যে কয়টি অকেজো সেগুলো মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।’

সিরিঞ্জ ও এক্স-রে ফিল্ম সংকটরে কথা স্বীকার করে এই চিকিৎসা কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি ভাবে এগুলোর সাপ্লাই নেই। খুব শিগগির পাওয়া যাবে।’

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2