পুড়ে যাওয়া ট্রেনের অন্ধকার বগিতে বোনকে খুঁজছেন যুবক

দিনের আলোতেও ঘুটঘুটে অন্ধকার গোপীবাগে পুড়ে যাওয়া বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের বগিগুলোতে। এই অন্ধকারের মধ্যেই মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে কিছু একটা খুঁজছিলেন এক যুবক। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বলেন, আগুনে হারিয়ে যাওয়া বোনের অস্তিত্ব খুঁজতে এসেছেন তিনি।
শনিবার (৬ জানুয়ারি) পুড়ে যাওয়া ট্রেনটি আনা হয়েছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ওয়ার্কশপে। সেখানেই পুড়ে যাওয়া বগিগুলোতে ঘুরে ঘুরে নিখোঁজ খালাতো বোনের কোনো নমুনা পান কিনা সেটিই দেখছিলেন এই যুবক। জানান, মৃত বাবাকে কবরস্থ করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজবাড়ী থেকে ঢাকায় ফিরছিলেন তার খালাতো বোন এলিনা ও রত্না। ট্রেনটি কমলাপুর আসার আগেই আগুন লেগে গেলে আগে নিজের সন্তানসহ বোনকে পার করে দেন এলিনা। কিন্তু ততক্ষণে আটকে যান তিনি। তারপর থেকে মিলছে না তার খোঁজ। তাই বিভিন্ন হাসপাতালের মর্গ ও বার্ন ইউনিটে ঘুরে বোনের সন্ধান না পেয়ে শান্তনা হিসেবে এই পথ বেছে নিয়েছেন তিনি।
এদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ সম্প্রতি একের পর এক ট্রেনে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় রেলওয়ের নিরাপত্তা ও অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থার ঘাটতিকে দায়ী করছেন যাত্রীরা।
রেলে ফায়ার এলার্ম ব্যবস্থাসহ নিজস্ব ফায়ার সেফটি না থাকার সমালোচনা করে অগ্নি নির্বাপন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনি ব্যবস্থা নিতে হবে রেলের অগ্নি নিরাপত্তায়।
মেজর (অব.) জেনারেল শাকিল নেওয়াজ বলেন, একাধিক ঘটনার পরও রেলওয়ে সতর্ক হয়নি দেখে আমি মর্মাহত। এ ঘটনায় আগুন ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ রেল চলন্ত ছিল। প্রায় ৬০ কিলোমিটার গতিতে চলতে থাকায় ট্রেনটিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বেশি ছিল, একারণে আগুন ছড়াতে পেরেছে। এছাড়া আগুন দেখে কেউ হয়তো বের হতে দরজা বা জানালা খুলেছে একারণে অক্সিজেন সরবরাহ হওয়ায় আগুন বাড়তে পেরেছে।
শিগগিরই রেলে অগ্নি নিরাপত্তায় ব্যবস্থা না নিলে মানুষ রেল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে বলে সতর্ক করে তিনি বলেন, রেলের নিজস্ব ফায়ার সেফটিব্যবস্থা থাকা দরকার, ফায়ার এলার্ম থাকলে সেটি বেজে উঠলে অবশ্যই শুরুতেই ট্রেন থামানো যেত এবং মানুষ নিরাপদে সরে যেতে পারতো। একইসঙ্গে অন্যান্য ফায়ারফাইটিং সামগ্রী রাখা উচিত ছিল, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকা দরকার ছিল। রেলওয়ে নিজে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে পরিস্থিতির বিবেচনায় এখন ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের অন্য বাহিনীগুলোর সহযোগিতা নিতো। কিন্তু সেই দশ বছর আগের অবস্থায় বসে থাকা কোনোভাবেই মানা যায় না।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায় বেনাপেল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ৮ জন।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: