• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

এনবিআরের আরেক কর্মকর্তার হাজার কোটি টাকার সম্পদ! 

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ২৭ জুন ২০২৪

ফন্ট সাইজ
এনবিআরের আরেক কর্মকর্তার হাজার কোটি টাকার সম্পদ! 

কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল

ছাগলকাণ্ডে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের হাজার কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর এবার সন্ধান মিলেছে সংস্থাটির অপর কর্মকতা  প্রথম সচিব (কর) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়। স্ত্রী-সন্তান ও আত্মীয়-স্বজনের নামে-বেনামে ৮৭টি ব্যাংক একাউন্ট এবং ১৫ টি সঞ্চয়পত্রে কোটি কোটি টাকার পাশাপাশি এই কর্মকর্তার রয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় একের পর একর জমি। 

অনেক এই কর্মকর্তার এমন সম্পদের পাহাড়ের হিসাব অনেকটা গোপনেই অনুসন্ধান করে জব্দ করার জন্য আদালতে আবেদন করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) আদালত আবেদন আমলে নিয়ে হিসাব এবং সম্পদগুলো জব্দের আদেশ দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ আদেশ দেন। 

দুদক জানায়- কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে বদলী বাণিজ্য, আয়কর দাতাদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকার আত্মসাত করেছে। তার এমন অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং এর অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে জানিয়ে সংস্থাটি এসব সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দের আবেদন করে।

জানা গেছে- অস্থাবর সম্পদের মধ্যে কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকার দুটি সঞ্চয়পত্র, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ৪টি সঞ্চয়পত্রে ৫০ লাখ টাকা, আফতাব আলীর নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, কাজী খালিদ হাসানের নামে একটি সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা, খন্দকার হাফিজুর রহমানের নামে দুটি সঞ্চয়পত্রে ৪০ লাখ টাকা, আহম্মেদ আলীর নামে ৩টি সঞ্চয়পত্রে ৫০ টাকা ও মাহমুদা হাসানের একটি সঞ্চয়পত্রে পাঁচ লাখ টাকা রয়েছে।

ফয়সালের ব্যাংক হিসাব ছাড়াও তার আত্মীয় শেখ নাসির উদ্দিন, মমতাজ বেগম, রওশন আরা খাতুন, আহম্মেদ আলী, খন্দকার হাফিজুর রহমান, ফারহানা আফরোজ, আশরাফ আলী মুনির, আফতাব আলী তানির, মাহফুজা আক্তার, মাইনুল হাসান, আফসানা জেসমিন, মাহমুদা হাসান ও কাজী খালিদ হাসানের ব্যাংক হিসাব জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

তাদের স্থাবর সম্পদের মধ্যে আফসানা জেসমিনের নামে ১০ কাঠা জমি, ২০০ বর্গমিটারের প্লট, আবু মাহমুদ ফয়সাল নামে ভাটারা, খিলগাঁও ও রূপগঞ্জে থাকা স্থাবর সম্পদ, আহমেদ আলীর নামে থাকা ফ্ল্যাট ও কার পার্কিংয়ের ৩২২৮ বর্গফুট স্থাবর সম্পদ ও মমতাজ বেগমের নামে থাকা ১০ কাঠা জমি জব্দ করা হয়েছে।

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার নিজ নামে ও তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এর নামে জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পে মোট দুই কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ৫ কাঠার প্লট ক্রয় করেছিলেন। অনুসন্ধান চলাকালীন জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্পের প্লট বিক্রয় করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন হতে অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অপরাধলব্ধ সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। অপরাধসহ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত বর্ণিত সম্পদ/সম্পত্তির বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ মানিলন্ডারিং আইনের ১৪ ধারা মতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিপণ্যের নামে নিম্নবর্ণিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাস্বত্ব বদল রোধের নিমিত্ত ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দ করা একান্ত প্রয়োজন।

দুদক আরও জানায়- আবু মাহমুদ ফয়সাল সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঘুষ লেনদেন, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয়ের উৎস গোপনের উদ্দেশ্যে শাহজালাল ব্যাংক কাওরান বাজার শাখায় তার নিজ নামে বিভিন্ন এফডিআর হিসাব খোলেন। মেয়াদপূর্তির পর এফডিআর ভাঙানো টাকা ও নতুন করে নগদ আনয়ন করে ফারহানা আক্তার, মমতাজ বেগম, মাহমুদা হাসান, খন্দ্যকার হাফিজুর রহমান, কারিমা খাতুনের নামে বিভিন্ন এফডিআর স্কিম খোলেন। পরে এসব অর্থ এবি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, লংকা বাংলা ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স এবং সর্বশেষে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শাখায় আহম্মেদ আলী, আফতাব আলী ও শেখ নাসির উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের নামে ৭০০ এর অধিক হিসাব খুলে অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিং অপরাধ সংঘটিত করেছেন।

দুদকের অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ২৪তম বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বিসিএস (কর) ক্যাডারে সহকারী কর কমিশনার হিসাবে ২০০৫ সালের ২ জুলাই চাকরিতে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রথম সচিব (কর) কর্মরত আছেন। তিনি চাকরিতে যোগদান থেকে এ পর্যন্ত চাকরিরত অবস্থায় ঘুষ লেনদেন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেন। তিনি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ হস্তান্তর/রূপান্তর করে নিজ নামে ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণের নামে ১৬ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৯০২ টাকা মূল্যের অধিক স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিনের নামে ইস্ট ওয়েস্ট প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট (প্রা.) লিমিটেড থেকে পাঁচ কাঠার প্লট ক্রয় করেছেন। এ প্লটের ৭৫ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে মাহমুনা হাসানের ওয়ান ব্যাংক হিসাব থেকে। আদিবা ট্রেডিং (প্রো. কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল)-এর শাহজালাল ব্যাংক, কাওরান বাজার শাখায় ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি চেকের মাধ্যমে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড এক কোটি ইস্যু করা হয়। তবে এ টাকা ফয়সালের হিসাব থেকে গেলেও সম্পদ অর্জন করেছেন শ্বশুর আফতাব আলীর নামে।

বিভি/এসএইচ/এজেড

মন্তব্য করুন: