• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

রংপুরে জমি অধিগ্রহণের নামে টাকার পাহাড় গড়েছেন এডিসি রায়হান

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশিত: ১৭:৪৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফন্ট সাইজ
রংপুরে জমি অধিগ্রহণের নামে টাকার পাহাড় গড়েছেন এডিসি রায়হান

এম ডাব্লিউ রায়হান শাহ

রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এম ডাব্লিউ রায়হান শাহ’র বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যসহ স্বেচ্ছাচারিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে দুদকে অভিযোগও করেছেন ভুক্তভোগীরা। যদিও অদৃশ্য কারণে থমকে আছে অভিযোগ।

রংপুরের সাবেক জেলা প্রশাসকের আস্থাভাজন ও প্রিয় মুখ হিসেবে পরিচিত এম ডাব্লিউ রায়হান শাহ ২০২২-২০২৩ সালে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর দায়িত্ব পালন করেন। এসময় তিনি রংপুরের চার লেন সড়কের জমি অধিগ্রহনে জেলার পীরগঞ্জ থেকে নগরীর মডার্ন মোড় পর্যন্ত অধিগ্রহণকৃত জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে গৃহীতাদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) বেশ লেখালেখি হচ্ছে।

অভিযোগে জানা গেছে, পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর এলাকায় চার লেন সড়কে জমি অধিগ্রহণ বাবদ কোটি টাকা দুর্নীতি, লুটপাট করেন। কৌশলে তিনি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, সার্ভেয়ার ও কানুঙ্গদের সাথে আতাত করে হাজার হাজার একর বাণিজ্যিক জমিকে কৃষি ও কৃষি জমিকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তর করে ৩ গুণ জমির মুল্য বাড়িয়ে দিয়ে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরের শত শত নিরীহ মানুষ অধিগ্রহণের ন্যায্য টাকা না পেয়ে পথে বসেছেন।

নাম না প্রকাশের শর্ত দিয়ে অনেক ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এম ডব্লিউ রায়হান শাহ রংপুরে থাকাকালীন সময়ে জমি অধিগ্রহণের ন্যায্য দাবি নিয়ে তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি নানাভাবে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন। এমকি জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করে অফিস থেকে তারিয়ে দিতেন। অনেকেই আবার ১৩ মাস পায়ের স্যান্ডেল ক্ষয় করেও ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। রায়হান শাহ এর আশীর্বাদে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ফরহাদ হোসেনের জীবনও পাল্টে গেছে। ইতোমধ্যে তিনি আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে রায়হান শাহ অফিস সহকারী ফরহাদের বাড়িতে মাসে দু’বার ভুরিভোজ খেতেন। 

শুধু চার লেন সড়ক নয়; পাইপলাইনের মাধ্যমে নীলফামারীর ইপিজেডে গ্যাসলাইন স্থাপনে জমি অধিগ্রহনে একই পদ বেঁছে নেন তিনি। জেলার পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর ও তারাগঞ্জ উপজেলায় শত শত কৃষককে বঞ্চিত করেছেন তিনি। স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের লোকজনদের সহযোগিতা করেছেন অন্যায়ভাবে। তাদের কৃষি জমিকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তর করে তিন গুন দাম বৃদ্ধি করেছেন। বিনিময়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। আর নিরিহ মানুষদের বানিজিক্য খাতকে অবানিজ্যিক ও কৃষি জমিকে অকৃষি চিহিৃত করে নামমাত্র মূল্য নির্ধারণ করেন। জমির ন্যায্য দাম পেতে একাধিক মানুষ জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের কাছে লিখিত আবেদনও করেন। কিন্তু দুর্নীতি পরায়ন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এম ডাব্লিউ রায়হান শাহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নানাভাবে ভুল বুঝিয়ে আবেদনগুলো বাতিল করেন।

এ নিয়ে দুদকে অভিযোগও হয়েছে কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটা থমকে আছে। যদিও দুদুক রংপুরের সাবেক উপ-পরিচালক আশিকুর রহমান অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এম ডাব্লিউ রায়হান শাহ এর আমলে জমি অধিগ্রহণে রংপুরের মানুষের চরম মানষিক নির্যাতন ও আর্থীক ক্ষতি যেমন হয়েছে; তেমনই সরকারের কাড়ি কাড়ি অর্থ জলে গেছে।

এই, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা পঞ্চগড়ের এসিল্যান্ড থাকাকালীন সময়ে ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে একটি জমির খারিজ করে দেয়ার অভিযোগের প্রমাণপত্র রয়েছে।

এছাড়া গত বছরের ২ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা রংপুরে আসেন। তখন এ কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় তিনি সার্কিট হাউজ ম্যানেজমেন্টসহ, সমাবেশ ও আওয়ামী লীগের লোকজনকে সমাবেশে আনতে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।

একটি সূত্র বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আপ্যায়ন, সার্কিট হাউজ সাজানো, সমাবেশ সফল করতে দুই কোটি টাকা খরচ দেখিয়েছেন। যা তিনি নিজেই করেছেন। এভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ সম্পন্ন করে তিনি ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। যা তদন্ত করলেই দুর্নীতির সব চিত্র বেড়িয়ে আসবে। চতুর ও দুর্নীতি পরায়ন এই কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিতি রয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবেদিত হিসেবে উপরের কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ফ্যাসিস সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ছবি তুলেন। পরবর্তীতে ওই ছবি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য জেলা প্রশাসক রংপুরের ফেসবুকে পোষ্ট দেন। এতে একর পর এক বেরিয়ে আসছে নানা অভিযোগ।
কিন্তু ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সাথেই ওই ছবি ডিলেট করা হয়।

অবৈধভাবে টাকার পাহাড় গড়া রংপুরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এম ডাব্লিউ রায়হান শাহকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রংপুরবাসী।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: