• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

১৬ বছর অনিয়ম

শ্রমিক শোষণ করে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

জামালপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫:১৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফন্ট সাইজ
শ্রমিক শোষণ করে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ

জামালপুর জেলার ট্রাক শ্রমিকদের একমাত্র সংগঠন জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরির শ্রমিক ইউনিয়ন ৩৬৪০। জামালপুর শহরের ফেরিঘাটে অবস্থিত এই সংগঠনের জন্মের ইতিহাস রক্ত ঝরার ইতিহাস। সেই অধ্যায় পেরিয়ে এ জেলার ট্রাক সেক্টরের সকল শ্রমিকদের আস্থার কেন্দ্র বিন্দু এখন এই সংগঠনটি।

অরাজনৈতিক এই শ্রমিক সংগঠনটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলেরই শ্রমজীবি মানুষের কর্মস্থল। বিগত ১৬ ধরে বছর এ সংগঠনটিতে নির্বাচিত শ্রমিক নেতৃত্ব থাকলেও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শ্রমিক নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমিক শোষণ করে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে ট্রাক ও ট্যাংকলরি মালিক সমিতির কতিপয় নেতা। প্রতিটার্মেই এই সংগঠনের নির্বাচনে মালিক সমিতির নেতারা কারচুপি করে সরকার সমর্থিত শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের নির্বাচিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শ্রমিকরা তাঁদের সেই অপতৎপরতা দৃশ্যমান হতে দেয়নি। 

প্রতি তিন বছর পর পর এই শ্রমিক সংগঠনটির নেতৃত্ব নির্বাচন হয় শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ ভোটে। ২০২৩ সালেও এই সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার কথা ছিলো। এই সংগঠনের সাধারণ সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্তও হয়েছিলো সংগঠনের নির্বাচন হবে। গঠন করা হয়েছিলো নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা ও জামালপুর জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি মালিক সমিতি রেজি নং-ঢাকা ৩২৬৩ এর সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরীকে। সদস্য সচিব করা হয় জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এবং জামালপুর জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন খানকে। 

এই নির্বাচন কমিশনের সদস্য করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মো. আওলাদ হোসেন তালুকদার খসরুকে। সংগঠনের নিয়মানুয়ী নির্বাচন পরিচালনা কমিটি নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করেন। কমিটি মনোনয়ন ফরম বিক্রি করে ও জমা নেয়। কিন্তু নির্বাচনের ঠিক দুই দিন পূর্বে বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি প্রাপ্ত কতিপয় শ্রমিক কর্তৃক দায়ের করা এক মামলার কারণে আদালতের নির্দেশে সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে। পরবর্তীতে জামালপুর জেলা ট্রাক ও ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের ফেডারশনের নেতৃবৃন্দের একান্ত সহায়তায় সেই মামলার বাদী ও বিবাদীদের মধ্যে সমজোতা হওয়ায় মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় স্থগিত হওয়া নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠানের আর কোনো প্রতিবন্ধক থাকে না। কিন্তু শ্রমিকরা বারবার সেই নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণার জন্য নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কাছে ধর্ণা দিলেও তারা তালবাহানা করছেন বলে জানায় শ্রমিক ইউনিয়নের বিভিন্ন নেতারা। তাদের প্রশ্ন করলে জানান- এই নির্বাচন নিয়ে শ্রমিকদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনো সময় এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ হতে পারে ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে জেলার মালামাল পরিবহন সংক্রান্ত জটিলতা সৃষ্টি হওয়াসহ রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

সাধারণ শ্রমিক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ আরও জানান, জামালপুর জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি মালিক সমিতির বর্তমান কমিটি গঠন করা হয়েছিলো ২০০৯ সনে।সেই থেকে এই মালিক সমিতি সরিষাবাড়ির তারাকান্দির যমুনা সার কারখানা, ধানুয়া কামালপুরের এলসি পয়েন্ট, জেলা শহরের ফেরিঘাটের অফিস কেন্দ্রীক শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ও সার্ভিস চার্জের নামে কেটি কেটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে এই ১৬ বছর। ট্রাক মালিক সমিতির নামে ব্যাংক একাউন্ট থাকলেও সেই একাউন্টে কোনো টাকা নেই, সবই লুটপাট করে খেয়েছে মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন খান ও সিনিয়র সহসভাপতি মো. আওলাদ হোসেন তালুকদার খসরু গং। দীর্ঘদিন থেকে ট্রাক মালিক সমিতির কোনো সভা নেই, কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ। বর্তমানে কমিটির ঐ তিন নেতা ছাড়া আর কারা এই কমিটিতে আছে শ্রমিকরা তা জানে না। 

জামালপুর জেলার ট্রাক শ্রমিকরা এই চাঁদাবাজ ও শ্রমিকদের অর্থ তসরুপকারী কমিটির পরিবর্তন চায় এবং বিগত ১৬ বছর যাবৎ কল্যান তহবিল ও সার্ভিস চার্জের নামে উত্তোলিত কোটি কোটি টাকার হিসাব চায়। অবিলম্বে শ্রমিকবান্ধব নতুন কমিটি গঠন করে বিগত দিনের হিসাবের অডিট রিপোর্ট দেখতে চান শ্রমিকরা। শ্রমিকের শ্রম এবং ঘামের বিনিময়ে সমিতির নামে ১৭ বছরের উত্তোলিত অর্থের সঠিক হিসাব না দিলে শ্রমিকরা আইনের আশ্রয় নিবেন বলেও জানান তারা। জামালপুর জেলা ট্রাক মালিক সমিতির লুটেরাদের কবল থেকে জেলার ট্রাক শ্রমিকরা মুক্তি চায়।

এই বিষয়ে জানতে জামালপুর জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতির নম্বরে ফোন করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বিভি/এজেড

মন্তব্য করুন: