• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

১০ বছরের আলোচিত সব ধর্ষণ মামলা 

হয়নি বিচার, নিভৃতে কাঁদছে আছিয়াদের মায়েরা

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ১৬ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২২:৫১, ১৬ মার্চ ২০২৫

ফন্ট সাইজ
হয়নি বিচার, নিভৃতে কাঁদছে আছিয়াদের মায়েরা

প্রতীকী ছবি

সম্প্রতি শিশু আছিয়া ধর্ষণকে ঘিরে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি 'প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড' চেয়ে আন্দোলন হচ্ছে সারাদেশে। এই ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগও দাবি করছেন অনেকে। 

দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন সংক্রান্ত আইন সংস্কারের উদ্যোগের কথা জানিয়েছে সরকার। আছিয়া ধর্ষণের দ্রুত বিচার নিশ্চিতের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু তাতেও আশ্বস্ত হতে পারছে না কেউ। কারণ গত এক দশকে এমন বহু আশ্বাস পেলেও এখন পর্যন্ত কোনো বিচার কার্যকরের নজীর দেখেনি বাংলাদেশ। তথ্য বলছে, সারাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ১৩৪টি মামলা। যার মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি। এর মধ্যে রয়েছে গত দশকের আলোচিত বেশ কিছু ঘটনাও।

২০১৫ সালের ১১ মার্চ স্কুলে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন শরীয়তপুরের জাজিরা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী চাঁদনী আক্তার হেনা। ঘটনার তিনদিন পর পাওয়া যায় তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ। এ ঘটনায় চাঁদনিকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ তুলে মামলা করেন তার বাবা আজগর খান। নিজের মেয়েসহ সকল নারী ধর্ষণের বিচার চেয়ে প্রতিষ্ঠা করেন নারী নির্যাতন দমন চাঁদনি মঞ্চ। এই মঞ্চের ব্যানারে চলে তীব্র আন্দোলনও। কিন্তু আলোর মুখ দেখেনি সেই মামলা। বিচার চাইতে চাইতে অকালে প্রাণ হারান আজগর খানও। তারপর আসামি না পাওয়ায় মামলাটি বাতিল করে দেন আদালতে।

চাঁদনি হত্যার আলোচনা যখন তুঙ্গে ঠিক তখনি কুমিল্লায় ঘটে ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যার ঘটনা। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হন তনু। তারপর পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে পাওয়া যায় তার মরদেহ। এ ঘটনায় পরদিনই থানায় মামলা করেন তনুর বাবা। তনুকে ধর্ষণের পর হত্যার প্রমাণও পায় পুলিশ। এ ঘটনা জানাজানি হলে মুহূর্তে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। তীব্র আন্দোলনে কেঁপে উঠে সারাদেশ। যা এক পর্যায়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনেও রূপ নেয়। 

সেই সময় ধর্ষণের আইন সংস্কারসহ দোষীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিতসহ নানান আশ্বাস দেয় সরকার। কিন্তু দফায় দফায় তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন হলেও আর আলোর মুখ দেখেনি তনু হত্যা মামলা। 

তনুর ঘটনার দুই বছরের মাথায় আবারও ধর্ষণের ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অপরাধে নোয়াখালীর সূবর্ণচরে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনার খবর বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে আওয়ামী লীগ সরকার। সেসময় আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার চাপও ছিলো সরকারের ওপর। বাধ্য হয়ে এই মামলাকে গুরুত্ব দিতে হয় সরকারকে। গেলো বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি।

২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ঘুরতে গেলে স্বামীকে মারধর করে স্ত্রীকে তুলে নিয়ে যায় কয়েকজন। সেই সময় ওই নারীকে সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে ধর্ষণ করে তারা। এই ঘটনায় এমসি কলেজের ছাত্রলীগের ৮ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন ভুক্তভোগীর স্বামী। কিন্তু সেই মামলায় এখনো হয়নি কোনো সুরাহা।

এদিকে ২০২১ সালের ২৬ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান-২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের একটি ফ্ল্যাট থেকে কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাতেই মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান বাদী হয়ে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের পর আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন। কিন্তু ২০২২ সালে আনভীরসহ ৮ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পিবিআই। পরে এ প্রতিবেদনে নারাজি দাখিল করেন মুনিয়ার বোন নুসরাত জাহান। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরও মুনিয়া হত্যার বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলনসহ নানা কর্মসূচি করে আসছেন তার বোন।

২০২৪ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে হল সংলগ্ন জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ করে শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক‌ মোস্তাফিজুর রহমান ও তার বহিরাগত এক সহযোগী। এ ঘটনায় তার স্বামীর করা মামলায় ছাত্রলীগের ৪ নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। 

হাসিনা সরকারের পতনের পর গেল অক্টোবরে আবারও আলোচনায় আসে ধর্ষণের ঘটনা। ২০২৪ সালের ১০ অক্টোবর পটুয়াখালীর বাউফলে নিত্যপণ্য কিনতে গিয়ে দোকানির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় চতুর্থ শ্রেণির এক শিশু শিক্ষার্থী। এই ঘটনায় দোকানি আনোয়ারকে দায়ী করে মামলা করেন শিশুটির বাবা। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে উল্টো ভুক্তভোগী পরিবারকে হুমকি ধমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত আনোয়ারকে গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। যা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ৬ মার্চ মাগুরায় বড়বোনের শ্বশুরের লালসার শিকার হয় তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী আছিয়া। এই ঘটনায় গুরুতর আহত আছিয়াকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল তারপর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেও অবস্থার অবনতি হলে তাকে নেওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে বৃহস্পতিবার সবাইকে কাঁদিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আছিয়া।

আছিয়ার এই অপমৃত্যুকে ঘিরে দেশজুড়ে চলছে তীব্র প্রতিবাদ। আবারও বিচারের আশ্বাস দিয়েছে সরকার। কিন্তু সেই আশ্বাস কী আদোও আলোর মুখ দেখবে? নাকি অন্যদের মতো নিভৃতে কেদে যাবে আছিয়ার মা-ও। সেই প্রশ্ন সবার মনে।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2