• NEWS PORTAL

  • রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

পাহাড়ে বেপরোয়া ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ

এইচ এম প্রফুল্ল, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:১৬, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২৩:১৭, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

ফন্ট সাইজ
পাহাড়ে বেপরোয়া ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপ

ছবি: ফাইল ফটো

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি প্রত্যাখান করে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে পাহাড়ে জন্ম নেওয়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) শুরু থেকেই অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় ও চাঁদাবাজিসহ নানা কর্মকাণ্ডে জড়িত।  রাঙামাটির নানিয়ারচরে ডেনমার্কের উন্নয়ন সংস্থা ড্যানিডার তিন কর্মকর্তাকে অপহরণ থেকে শুরু করে সর্বশেষ চলতি বছরে বৈসাবি উৎসবে খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীকে অপহরণ সবই প্রসীত খীসার ইউপিডিএফ গ্রুপের অপকর্ম।

বিগত ২৭ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামে পুনঃস্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবীতে আন্দোলনরত এই সংগঠনের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগের যেনো অন্ত নেই।

পার্বত্য চট্টগ্রামে সবগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনের জন্ম পতিত আওয়ামী লীগ আমলেই। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনংসংহতির সমিতির সশস্ত্র সংগঠন শান্তিবাহিনী, ইউপিডিএফ প্রসীত, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন) ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক, মগ পার্টি ও কুকি চিন পার্টি। তার মধ্যে প্রথম চারটি সংগঠন খাগড়াছড়িতে সক্রিয় রয়েছে। অন্য সংগঠনগুলোর তৎপরতা রাঙামাটি ও বান্দরবানে বিদ্যমান। এ সব সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধেও আধিপত্য বিস্তার লড়াই, চাঁদাবাজি ও অপহরণের অভিযোগ রয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পাহাড় বার বার রক্তাক্ত হচ্ছে। প্রায় ১৮ লাখ পাহাড়বাসী এ সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে জিম্মি।

পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ীদের এক সময়ের অধিকার আদায়ে সশস্ত্র তৎপরতা অবসানে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির প্রায় ২৭ বছর পরও পাহাড়িদের সশস্ত্র গ্রুপগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে রক্তের হোলিখেলায় মত্ত রয়েছে। এর শিকার নিরাপত্তা বাহিনী ও বাঙালিরাও। 

পাহাড়ে সন্ত্রাস ও সহিংসতা বন্ধে ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের আমলে সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী কর্ণেল (অব:) অলি আহমেদের নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনংসংহতির সমিতির সভাপতি ও বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় ওরফে সন্তু লারমার সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় প্রায় দুই দশকের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার ও সন্তু লারমার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরপর কেটে গেছে প্রায় ২৭ বছর। কিন্তু থামেনি অপহরণ, চাঁদাবাজি, মুক্তিপণ আদায় ও সংঘাত সহিংসতা। 

অভিযোগ রয়েছে- চুক্তির আগ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে প্রায় ত্রিশ হাজার বাঙালি, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ পাহাড়ি প্রাণ হারিয়েছেন। 

চুক্তির স্বাক্ষরের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ সালের ১০ ফ্রেরুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  হাতে গেরিলা নেতা সন্তু লারমার অস্ত্র সমর্পনের মধ্য দিয়ে জনসংহতি সমিতির সদস্যরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার কথা থাকলেও ঐ দিন কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)-র ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে স্টেডিয়াম জুড়ে চুক্তি প্রত্যাখান করে হাজারো কালো পতাকা উড়াতে দেখা যায়।

১৯৯৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। সেই থেকে শুরু পার্বত্য চট্টগ্রামে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলার পাশাপাশি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে সন্তু লারমার জেএসএস-এর সঙ্গে লড়াই। শুধু তাই নয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় একে একে জেএসএস (এমএন) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে আরও দুটি সশস্ত্র সংগঠনের জন্ম হয়। এ ছাড়াও রাঙামাটিতে ২০১৭ সালে মগ পার্টি ও বান্দরবানে কুকিসহ তিন পার্বত্য জেলায় বর্তমানে অন্তত ৬টি সশস্ত্র সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। 

পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘাত ও অপহরণ নতুন নয়। বিভিন্ন সময়ে এই অঞ্চলে বিদেশি নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতা অপহরণের ঘটনা বহির্বিশ্বেও আলোচিত। সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী অপহরণের ঘটনা নতুন করে ইউপিডিএফ প্রসীতকে আলোচনায় তুলে আনে।
 

বিভি/এমআর

মন্তব্য করুন: