অনলাইনে বেটিং সাইটে ২০ কোটি টাকার নিষিদ্ধ খেলা, গ্রেফতার ৩

ফুটবল, ক্রিকেটসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন খেলাকে পুঁজি করে অনলাইনে বেটিং সাইট পরিচালনা করতো একটি চক্র। ওই চক্রের দেশিয় এজেন্ট হিসেবে কাজ করতো অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ। চক্রের এই সদস্যরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সক্রিয় থেকে সাধারণ মানুষদের প্রলুব্ধ করতো জুয়া খেলায়। আর এই সুযোগে জুয়ার মতো নিষিদ্ধ এই খেলা থেকে তারা মাসে আয় করতো ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা।
বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান এ কে এম হাফিজ আক্তার।
তিনি বলেন, নিষিদ্ধ জুয়া খেলে অল্প পুঁজিতে কোটি কোটি টাকা কামানোর মাধ্যমে অল্প দিনে বাড়ি গাড়ির মালিক হয়েছে একটি চক্র। তাদের এই আয়ের মূল উৎস ছিলো অনলাইনে বেটিং সাইট পরিচালনা করা। তবে আমাদের সাইবার এড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম ও অর্গানাইজ ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে এই চক্রের বাংলাদেশের ২ জন মাস্টার এজেন্টসহ ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- তরিকুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৮), রানা হামিদ (২৬) ও সুমন মিয়া (২৫)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ঢাকা মেট্রো-গ-৩৬-০৩৫১ নম্বর প্লেটের একটি প্রাইভেটকার, নগদ ১১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৪ টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন, ৫ টি সিম কার্ড, বিভিন্ন ব্যাংকের ১৩ টি ব্যাংক একাউন্ট ও ২৩ টি মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃত তরিকুল ইসলাম বাবু, রানা হামিদ এবং সুমন মিয়া, পলাতক আসামি সাথী আক্তারসহ অন্যান্য পলাতক ও অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০-৬০ জন আসামিদের সহায়তায় দীর্ঘদিন যাবৎ তাদের ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিকস ডিভাইস ব্যবহার করে অনলাইনে জুয়া (বেটিং) খেলার সাইট পরিচালনা করছিলো। ওই সাইট থেকে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমি, গাড়িসহ বিভিন্ন অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছে তারা। গ্রেফতারকৃত ও পলাতক আসামিরা অবৈধ জুয়ার (বেটিং) সাইট পরিচালনা করে মোবাইল ব্যাংকিং ও ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে অবৈধ অর্থের লেনদেন (ই-ট্রানজেকশন) করে। গ্রেফতারকৃতরা দেশের বাইরে থাকা সুপার এজেন্টের কাছ থেকে প্রতিটি পিবিইউ (নিজস্ব ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি) ৬০ টাকার বিনিময়ে কিনতো। পরে সেগুলো জুয়া খেলতে ইচ্ছুকদের কাছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করতো। সেই সংগে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৮-১০ লাখ টাকার বিনিময়ে লোকাল এজেন্ট নিয়োগ করে যা চইট কারেন্সিতে ওই লোকাল এজেন্টকে দেয়া হয়। ওই লোকাল এজেন্ট তার ব্যবহারকারীদের কাছে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রতিটি পিবিইউ ১৫০ টাকা দিয়ে বিক্রয় করতো।
তিনি বলেন, এই কাজে অবৈধ অর্থের আদান-প্রদান নিজেদের মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংক একাউন্টে মাধ্যমে করা হতো। এখানে কারেন্সি হিসেবে চইট নামক এক প্রকার সাইটের নিজস্ব ভার্চ্যুয়াল কারেন্সি ব্যবহৃত হয়। এভাবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের অর্থ গ্রেফতারকৃত আসামিদের মাধ্যমে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছিলো। তাদের ছদ্মনামে দু’টি ফেইক ফেইসবুক একাউন্ট রয়েছে, যার মাধ্যমে ওই এজেন্টরা গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। বেটিং সাইটগুলো গ্রেফতারকৃত আসামিরা ছাড়াও তাদের অজ্ঞাতনামা প্রায় ৫০/৬০ পলাতক আসামিদের পারস্পারির যোগসাজশে পরিচালিত হয়। গ্রেফতারকৃতদের প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস নাই। কিন্তু জব্দকৃত ব্যাংক একাউন্ট এবং মোবাইল ব্যাংক একাউন্টগুলোতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য মিলেছে।
ডিবি প্রধান বলেন, তাদের বেটিং সাইটে বিভিন্ন ক্রিকেট খেলায় নির্দিষ্ট ওভার বা বলে কত রান হবে অথবা নির্দিষ্ট ম্যাচটি কোন দল জিতবে তার উপর ১:৩ অনুপাতে বেটিং করা হয়। সাধারণ ইউজারের নির্দিষ্ট টার্গেটকৃত রান বা তার নির্দিষ্ট দল জিতলে বেটিং এর চইট পরিমাণের তিনগুণ বা বেটিং এর শর্ত অনুসারে চইট ফেরত পায়। এভাবেই বেটিং বা অনলাইন জুয়া পরিচালিত হয় বলে জানান তিনি।
বিভি/এসএইচ/রিসি
মন্তব্য করুন: