ইফাজকে কালো মাইক্রোতে তুলে নেওয়ার অভিযোগ, পুলিশের দাবি আত্মগোপন!

‘নয় মাস হয়েছে আমি বিয়ে করেছি। কিন্তু সব মেয়েদেরই প্রথম ঈদে অনেক স্বপ্ন থাকে, স্বামীকে নিয়ে এক সাথে ঘোরাফেরা করবে, নতুন পোশাক পরবে। কিন্তু আমি কোনো কিছুই করতে পারিনি। আমার স্বামী নিখোঁজ। কোথায় আছে, বেঁচে আছে নাকি আদৌ বেঁচে নেই এটাও আমরা জানি না।’
কথাগুলো বলছিলেন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা সানজিদা ইসলাম অনন্যা। নিখোঁজ স্বামী ইফাজ আহমেদ চৌধুরীর পথ চেয়ে এক মাস ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তিনি।
গত ১১ এপ্রিল দুপুর ১২টা ৪৬ মিনিট। সিসিটিভ ফুটেজে দেখা যায়- বাসা থেকে বের হয়ে জনতা হাউজিংয়ের প্রধান সড়ক ধরে পায়ে হেঁটে সনি সিনেমা মোড় পার হচ্ছেন ইফাজ আহমেদ চৌধুরী। সেখান থেকে ‘প লাইফ কেয়ার’ হাসপাতালে যান তিনি। এরপর দুপুর ১টা ৪৬ মিনিটে সেখান থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হন তিনি। কিন্তু সনি সিনেমা মোড় পর্যন্ত আসার পর আর তার হদিস মেলেনি। কোনো সিসিটিভি ফুটেজেও তাকে দেখা যায়নি।
এদিকে, ক্ষণে ক্ষণে প্রিয় নাতির কথা মনে পড়লেই অঝোরে কাঁদছেন সত্তরোর্ধ্ব নানা কাজী মমিন উদ্দীন। এক মাস ধরে নিখোঁজ তাঁর নাতি ইফাজ আহমেদ চৌধুরী। মিরপুর সনি সিনেমা হল মোড় থেকে একটি কালো গাড়িতে ইফাজকে তুলে নেওয়া হয়েছে, এমনটাই দাবি তাঁর।
তিনি বলেন, আমার নিরপরাধ নাতিকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে আজও তা জানতে পারলাম না। কার কি উদ্দেশ্য তাও জানলাম না। সে যদি কোনো অপরাধ করে থাকে তবে তাকে জেলে দেওয়া হোক। এভাবে তাকে গুম করার মানে কি। তার ধারণা, তার নাতিকে গুম করেছে প্রশাসনের কেউ!
২৪ বছর বয়সী ইফাজ আহমেদ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র। মায়ের দাবি- ছোট বেলা থেকেই নম্র-ভদ্র ইফাজের তেমন কোনো শত্রু নেই। নেই রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততাও। বিশ্ববিদ্যালয় আর বাসা ছাড়া তার তেমন কোনো আড্ডাস্থলও নেই। নয় মাস আগে বিয়ে করা ইফাজের বেশিরভাগ সময় কাটতো বাসায়। তাই কারা ইফাজকে গুম করতে পারে সেই দিশা পাচ্ছে না পরিবাওরও।
ইফাজের মা জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলাভিশনকে বলেন, আমার ছেলে গত ২৪ বছর আমাকে ছাড়া কোথাও ছিলো না। অথচ আজ এক মাস হয়ে গেলো তার কোনো হদিস পাচ্ছি না। তাকে ছাড়াই এই প্রথম ঈদ করেছি। কি অপরাধ আমার ছেলের? আমি আমার ছেলের সন্ধান চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য চাই।
তিনি বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে তাকে একটি কালো গাড়ি অনুসরণ করেছে। আমাদের ধারণা ওই গাড়িতেই তাকে তুলে নেওয়া হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় থানায় জিডি করেছি। র্যাব ও ডিবির কার্যালয়ে গেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়েছি। সবাই আশ্বাস দিয়েছেন ছেলেকে উদ্ধার করা হবে। কিন্তু এক মাস হয়ে গেলেও তার কোনো সন্ধান পাচ্ছি না। আমার সন্ধান চাই।
তার দাবি ইফাজ নিখোঁজের পর থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না। পুলিশের দাবি- ইফাজকে কেউ গুম করেনি, তিনি নিজ থেকে নিখোঁজ রয়েছেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাজিজুর রহমান বাংলাভিশনকে বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে সে নিজ থেকে নিখোঁজ হয়েছে। তাকে কেউ গুম করেনি। তবুও আমরা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনার তদন্ত করছি।
ইফাজ গুম হয়েছে নাকি নিজ থেকে আত্মগোপনে রয়েছে, সেটিও উদঘাটনের দায়িত্ব নিরাপত্তা বাহিনীর। তাই দ্রুতই স্বশরীরে সুস্থ অবস্থায় ইফাজকে ফিরে পাবে এমনটাই প্রত্যাশা পরিবারের।
বিভি/এএন
মন্তব্য করুন: