• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

পণ্যচালান জালিয়াতি করে ৩৭৯ কোটি টাকা পাচার

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৩২, ১৪ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৪:৩১, ১৪ মার্চ ২০২৩

ফন্ট সাইজ
পণ্যচালান জালিয়াতি করে ৩৭৯ কোটি টাকা পাচার

পোশাক রপ্তানির আড়ালে ভুয়া কাগজপত্রের মাধ্যমে দেশ থেকে ৩৭৯ কোটি টাকা পাচার করেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানগুলো রপ্তানি কাগজপত্র পর্যালোচনা করে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এ তথ্য জানিয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) রাজধানীর কাকরাইলে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর উপ-পরিচালক মোঃ শাকিল খন্দকার এসব তথ্য জানান। 

কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা জানান, রপ্তানি দলিলাদি জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করছেন কিন্তু পণ্যের রপ্তানি মূল্য (বৈদেশিক মুদ্রা) দেশে প্রত্যাবাসিত হচ্ছে না মর্মে গোপন সংবাদ পাওয়ার পর কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, আঞ্চলিক কার্যালয়, চট্টগ্রামের একটি গোয়েন্দা দল চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি তারিখে এসএপিএল (ওসিএল) ডিপো, কাঠগড়, উত্তরপতেঙ্গা, চট্টগ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন। 

অভিযানে রপ্তানি জালিয়াতির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়। সে পরিপ্রেক্ষিতে সাতটি ৪০ ফিট কন্টেইনারে রক্ষিত ৯টি পণ্য চালান পরীক্ষা করা হয়। পণ্যচালান সমূহ পরীক্ষা করা হলে ঘোষণা বহির্ভূত একাধিক পণ্য পাওয়া যায়। রপ্তানিকারকের ঘোষণা মোতাবেক টিশার্ট এবং লেডিস ড্রেস রপ্তানির কথা থাকলেও পরীক্ষায় বেবি ড্রেস, জিন্সপ্যান্ট, লেগিন্স, শার্ট ও শালসহ ঘোষণা বহির্ভূত পণ্য পাওয়া যায়। 

পরবর্তীতে সার্বিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, আঞ্চলিক কার্যালয়, চট্টগ্রামের যুগ্ম পরিচালককে আহবায়ক করে ৮ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। 

তদন্তে দেখা যায়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের নামে বিগত সময়ে ৮৬টি পণ্য চালান রপ্তানি করেছেন।  রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন ৯৯৭ মেট্রিক টন মেনস ট্রাউজার, টিশার্ট, বেবিসেট, ব্যাগ, পোলোশার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট ও হুডি রপ্তানি করেছেন। যার বিনিময় মূল্য ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ মার্কিন ডলার (প্রায় ১৮ কোটি টাকা)। পণ্যচালান সমূহ সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, সৌদি আরব ও নাইজেরিয়াতে রপ্তানি করা হয়েছে। সিকোডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেম এ ইএক্সপি যাচাই এবং অগ্রণী ও ব্র্যাক ব্যাংক হতে প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় বর্ণিত ৮৬ টিবিল অব এক্সপোর্টে উল্লিখিত ইএক্সপিগুলো ভিন্ন ভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ইস্যুকৃত। যেহেতু একটি ইএক্সপি একাধিক বিল অব এক্সপোর্টে ব্যবহারের সুযোগ নেই সেহেতু উক্ত ৮৬টি বিল অব এক্সপোর্টে ভিন্ন ভিন্ন রপ্তানিকারকের ইএক্সপি ব্যবহার করা হলেও বিল অব এক্সপোর্টের ঘর-২৪  (নেচার অব ট্রান্সসেকশন) এ কোড ২০ ব্যবহার করার কারণে ইএক্সপি এবং সংশ্লিষ্ট বিল অব এক্সপোর্টের রপ্তানিকারকের বিন অটো ম্যাচ হয়নি। বর্ণিতাবস্থায়, উক্ত বিল অব এক্সপোর্টের ক্ষেত্রে ইএক্সপি এর কার্যকারিতা নেই। ফলে বৈধপন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা যার পরিমান ১৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৭ মার্কিন ডলার প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগ নেই। তদন্তপর্যায়ে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন, ইমু ট্রেডিং কোঃ  এবং ইলহাম নামক প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংক্রান্ত জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটিত হয়। 

প্রতিষ্ঠান সমূহের রপ্তানি সংক্রান্ত দলিলাদি চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সমূহে পত্র প্রেরণ করা হলে পত্রের জবাবে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সমূহ জানান যে, উক্ত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সমূহ রপ্তানিতে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করেছেন।

প্রতিষ্ঠান সমূহ জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি সম্পন্ন করেছেন, সে কারণে এই পণ্যচালানগুলোর বিপরীতে কোন বৈদেশিক মুদ্রা বৈধপন্থায় দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার কোন সুযোগ না থাকায় আলোচ্য ক্ষেত্রে মানিলন্ডারিং সংঘটিত হয়েছে। 

সার্বিক অনিয়মের বিষয়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের তদন্তকালে উপরোক্ত ৪টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিগত সময়ের ১৭৮০টি পণ্যচালানে এমন জালিয়াতি করেছেন মর্মে প্রমাণ পাওয়া যায়। রপ্তানি সম্পন্ন ১৭৮০টি চালানের বিপরীতে পণ্যের পরিমাণ ১৮ হাজার ২৬৫ মেট্রিক টন যার ঘোষিত মূল্য ৩ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ১০ মার্কিন ডলার (প্রায় ৩৭৯ কোটি টাকা)। 

প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠান সমূহটি-শার্ট, টপস, লেডিসড্রেস, ট্রাউজার, বেবিসেট, ব্যাগ, পোলোশার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি প্রভৃতি পণ্যসংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া প্রভৃতি দেশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি করে অর্থপাচার করেছেন।

এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন ১৩৮২টি পণ্যচালান রপ্তানি করেছেন। রপ্তানি কৃতপণ্য চালানগুলোতে এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন ১৪,০৮৫ (চৌদ্দ হাজার পঁচাশি) মেট্রিক টনটি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস রপ্তানি করেছেন।
 
তাছাড়া উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের রপ্তানি সংশ্লিষ্ট দলিলাদি পর্যালোচনায় দেখাযায়, অধিকাংশ পণ্য চালান সংযুক্ত আরবআমিরাত, মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, কাতার ও যুক্তরাজ্যে রপ্তানি করা হয়েছে। যার বিনিময় মূল্য ২ কোটি ৫৮ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৬ মার্কিন ডলার (প্রায় ২৮২ কোটি টাকা)। 

রপ্তানিকারকের লিয়েন ব্যাংক ব্র্যাক ব্যাংক হতে প্রাপ্ত পত্র থেকে জানা যায়, রপ্তানি কৃতপণ্য চালান সমূহের দাখিলকৃত এক্সপি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এশিয়া ট্রেডিং কর্পোরেশন এর নামে ইস্যু করা হয়নি। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে আরও জানা যায়, ২০১৮ সালের পর থেকে উক্ত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সকল লেনদেন বন্ধ রয়েছে। 

ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন, জব্বার মার্কেট, দক্ষিণখানবাজার, ঢাকা বিগত সময়েজালিয়াতির মাধ্যমে ২৭৩টি পণ্য চালান রপ্তানি করেছেন। পণ্যচালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশন ২,৫২৩ (দুই হাজার পাঁচশত তেইশ) মেট্রি কটনটি-শার্ট, ট্রাউজার, টপস (সৌদি আরব, মালয়েশিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত) রপ্তানি করেছেন। যার বিনিময় মূল্য ৬৫,০৪,৯৩২ মার্কিন ডলার (প্রায় ৬২ কোটি টাকা)। রপ্তানিকারকের লিয়েন ব্যাংক সোনালী ব্যাংক হতে প্রাপ্তপত্রে জানা যায়, রপ্তানিকৃত পণ্যচালান সমূহে ব্যবহৃত ইএক্সপিগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ইমু ট্রেডিং কর্পোরেশনের অনুকূলে ইস্যুকরা হয়নি। 

ইলহাম, প্লট-৩২বি, নিগারপ্লাজা, শপ-৫ (৪র্থ তলা), সেক্টর-৩, উত্তরা, ঢাকানামীয় প্রতিষ্ঠানটি বিগত সময়ে রপ্তানি দলিলাদি জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৯টি চালান রপ্তানি করেছেন। রপ্তানিকৃত পণ্যচালানগুলোতে উল্লিখিত প্রতিষ্ঠান ৬৬০ (ছয়শতষাট) মেট্রি কটনটি-শার্ট, ট্যাংকটপ, লেডিস ড্রেস প্রভৃতি রপ্তানি  করেছেন। যারবিনিময়মূল্য ১৬,৩৯,৪৮৫ মার্কিনডলার(১৭ কোটিটাকাপ্রায়)। উল্লেখ্য রপ্তানিকারকের লিয়েন ব্যাংক সোনালী ব্যাংক হতে প্রাপ্তপত্রে জানা যায়, রপ্তানিকৃত পণ্যচালান সমূহে ব্যবহৃত ইএক্সপিগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক ইলহাম-এর অনুকূলে ইস্যু করা হয়নি।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসমূহ ও সিএন্ডএফএজেন্ট লিম্যাক্স শিপারস লিমিটেড, ২৬৮৪, কাদের বিতান সিমেন্ট ক্রসিং, দক্ষিণ হালি শহর, ইপিজেড, চট্টগ্রাম পারস্পরিক যোগসাজশে বিলঅব এক্সপোর্টে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি এবং ভুয়া সেলস কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করেছেন। তাছাড়া রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্টের ঘরে ২৪  বিশেষ রপ্তানির জন্য প্রযোজ্য কোড ২০ ব্যবহার করেছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য সিপিসি-১০৭২ ব্যবহার করেছেন।

উল্লেখিত ৪ (চার) টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সকল রপ্তানি পণ্যচালানের বিল অব এক্সপোর্ট একটি ইসিএন্ড এফএজেন্ট লিম্যাক্স শিপার্স লিমিটেড কর্তৃক দাখিল করা হয়েছিল এবং রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের মনোনীত সিএন্ডএফ এজেন্ট লিম্যাক্স শিপার্স এর সহযোগিতা ও যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন। অন্যপ্রতিষ্ঠানের ইএফপি ব্যবহার করায় এ জাতীয় ইএক্সপির কোন প্রকার কার্যকারিতা না থাকায় বৈধপন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসিত হওয়ার সুযোগনেই অর্থাৎ এক্ষেত্রে মানি লন্ডারিং সম্পন্ন হয়েছে। উক্ত ৪টি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্য আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে এরূপ কার্যক্রমের অভিযোগের ভিত্তিতে বর্তমানে তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2