• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ

বাড়বে সুদ হার, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ মূল চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:০০, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪

আপডেট: ১৬:২১, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪

ফন্ট সাইজ

সুদের হার আরও বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি ও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়ে আজ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (জানুয়ারি-জুন) চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে এই মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে আর্থিকখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

এমন সময় মুদ্রানীতিটি ঘোষণা হচ্ছে যখন টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যখন সাধারণ মানুষের নাভিঃশ্বাস উঠছে, ঠিক তখন নতুন মুদ্রানীতিকে জনবান্ধব করাই সরকারের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ধারনা করা হচ্ছে, এবারের মুদ্রানীতিতেও সংকোচনমূলক নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে। এছাড়া বৈদেশিক লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত নিয়ন্ত্রণে আনারও জোর উদ্যোগ নেওয়া হবে এবারের মুদ্রানীতিতে।

ক্রলিং পেগ হলো নিজ দেশের মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি; যেখানে একটি নির্দিষ্ট বিনিময় হারসহ একটি মুদ্রাকে একটি সীমার মধ্যে ওঠা-নামা করার অনুমতি দেওয়া হয়। অস্থিরতার সময় দেশীয় মুদ্রার মূল্য এবং হারের সীমাও ঘন ঘন সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ মুদ্রার মূল্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণকেই ক্রলিং পেগ বলে।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ছিলো ৮ শতাংশে। আগামী জুনের মধ্যে তা ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। তবে গত নভেম্বরের শেষে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে ঋণের সুদহার কিছুটা বাজারভিত্তিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পাশাপাশি নীতি সুদের হারও বাড়িয়েছে। এতে ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এদিকে তারল্য সংকট ও সুদহারের কারণে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ ঋণাত্মক। গত নভেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণে ১০ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের।

ডলার–সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অর্ধেকের বেশি কমেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি অনুযায়ী দেশের বরতমান রিজার্ভ ২০ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৩৮ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত বা নিট রিজার্ভ বর্তমানে ১৬ বিলিয়ন ডলারের কম। যা দিয়ে তিন মাসের ব্যয় বহন করা যাবে। এটা যথেষ্ট নয় বলেও দাবি করছেন আর্থিকখাত সংশ্লিষ্টরা।  

অন্যদিকে ব্যাংকগুলোর তদারকিতে দুর্বলতা ও নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে খেলাপি ঋণ বেড়ে দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এক ডজনের বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। তার মধ্যে ১৭টির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫০ শতাংশের ওপরে। আর্থিক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে। পাশাপাশি শরিয়াহভিত্তিক পাঁচ ব্যাংক চাহিদা মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা রাখতে পারছে না, তাদের চলতি হিসাবেও ঘাটতি রয়েছে। আবার কিছু ব্যাংক পরিদর্শনে গিয়ে অনিয়ম ধরায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের বদলি করার ঘটনাও ঘটছে। এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবারের মুদ্রানীতিও হবে সংকোচনমূলক। অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের মূল কাজ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা মূল অস্ত্র হচ্ছে মুদ্রানীতির কার্যকর ব্যবহার। যা দিয়ে করা হবে দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান

এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান বাংলাভিশনকে বলেন, চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের  মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্যই থাকবে মুল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। এবারের মুদ্রানীতিতে এটিই যে প্রাধান্য পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মূল্যস্ফীতি কমানোর নানা উপায় আছে। তার মধ্যে মুদ্রানীতি দিয়ে একটা বড় ইমপেক্ট আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংককে যে দামে ঋণ দেয় তাকে পলিসি রেট বলে। অর্থাৎ পলিসি রেটের সঙ্গে মুদ্রানীতি উঠা-নামা করে। তবে এক্ষেত্রে আমাদের মানি মার্কেট যথেষ্ট টাইট না, যথেষ্ট লুজ আছে। প্রচুর টাকা বাজারে আছে। যার কারণে জিনিসপত্রের দাম কমানো যাচ্ছে না। এই কারণেই আমার বিশ্বাস এবারের মুদ্রানীতিতে পলিসি রেট বাড়বে। তবে কত বাড়বে তা শেষ মুহূর্তে গভর্নর ঠিক করবেন।

তিনি আরও বলেন, নিঃসন্দেহে বলা যায় এবারের মুদ্রানীতি হবে সংকোচনমূলক। যার মাধ্যমে আমদানি করা পণ্যগুলোর দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ। পাশাপাশি ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে এবারে মুদ্রানীতিতে ক্রলিং পেগ নীতি অনুসরণ করা হবে। অর্থাৎ ডলারের দাম উঠা-নামা করবে। দ্রব্যে মূল্য নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতি কোনো কাজ করে না। তবে শুল্ক কমিয়ে আনতে হবে যাতে বাজারে দ্রব্য মূল্য কমে আসে। তিনি বাজার ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণের ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। মুদ্রানীতি মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের একমাত্র টার্গেট হতে পারে না। মুদ্রানীতি হতে হবে মাল্টি টার্গেটেড। যাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হয়। একই সঙ্গে আমদানি করা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি কাজ করতে হবে এনবিআরকে। যাতে আমদানি করা পণ্যের দামও মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। 

আতিউর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ ) প্রোগ্রামের মধ্যেই আছি। তারা বিনিময় হার করিডোরের মধ্যে রাখতে বলেছে। ডলারের দাম বাজার দরের কাছাকাছি রাখতে হবে। এটা করা হলে রেমিট্যান্স ফ্লো বাড়বে। এতে করে রিজার্ভ স্থিতিশালী হবে। সবমিলিয়ে সমাষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল হবে।’ 

ডিসিসিআই সভাপতি আশরাফ আহমেদব্যবসায়ী বান্ধব মুদ্রানীতির দাবি জানিয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আশরাফ আহমেদ বাংলাভিশনকে বলেন, নতুন মুদ্রানীতি থেকে আমাদের তিনটি চাওয়া আছে। গেলো বছর আমরা এলসি খোলা নিয়ে অনেক সমস্যার মধ্যে দিয়ে গিয়েছি। আমাদের দরকার এসমস্যার সমাধান। মনিটরি পলিসিতে এ সংক্রান্ত দিক নির্দেশনা থাকবে বলে আমরা আশা করি। দ্বিতীয়ত, আমাদের দুই তৃতীয়াংশ মূলধন খরচ হয় ওয়ার্কিং ক্যাপিটালে। যদি সুদের হার বাড়ে তাহলে সাপ্লাই সাইডে একটা চাপ পড়ে। তৃতীয়ত, যদি ঋণ প্রবাহ না বাড়ানো যায় তাহলে আমাদের পক্ষে গ্রোথ সাসটেইন করা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করাটা কঠিন। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছে এটা আশা করি সফল হবে। এতে আমাদের একটাই চাওয়া এই উদ্যোগ দ্রুত কার্যকর করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এগিয়ে আসতে হবে। ঋণে সুদের হার বাড়লেও যদি প্রবাহ বাড়ে তাহলে ব্যাপারটা সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2