স্কুল ব্যাংকিংয়ে কমেছে আমানত

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে এবার কমেছে স্কুল ব্যাংকিংয়ের আমানত। স্কুল ব্যাংকিংয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়লেও সাম্প্রতিক সময়ে কমেছে আমানতের পরিমান। গত ডিসেম্বর শেষে মোট হিসাব হয়েছে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৯টি। ২০২৩ সালের নভেম্বরে হিসাব বা একাউন্ট ছিলো ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৯০৭টি। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব বেড়েছে শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ৩৩২টি। আর ডিসেম্বর মাস শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। নভেম্বর মাসে আমানত ছিলো ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আমানত কমেছে ২১ কোটি টাকা।
রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারণে এখন মানুষ জমানো টাকাই ভেঙে খাচ্ছে। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন মুদ্রানীতিতে আমানতে সুদের হার বাড়িয়েছে, তবুও সাধারণ মানুষ আমানতের পরিবর্তে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। কারণে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। সন্তানদের লেখাপড়া পেছনে বড় অঙ্কে ব্যয় বহন করেই অনেকের পক্ষে স্কুল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টে টাকা রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যার প্রভাব পড়েছে গেলো নভেম্বর ও ডিসেম্বরে আমানতের পরিমাণ কমে যাওয়া।
তবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচন ও স্কুল বন্ধ থাকায় এবং ভর্তি কার্যক্রম চলার ফলে আমানতে কম এসেছে। চলতি জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের হিসাব পেলে তা বুঝা যাবে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৯টি। এর মধ্যে ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৫টি হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ২২ লাখ ৯ হাজার ২৩৪টি হিসাব গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে।
চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিল ৩৮ লাখ ৯৩ হাজার ৩৪৩টি। আগস্টে এ ধরনের হিসাব খোলা হয় ৩৯ লাখ ৮ হাজার ৮২০টি। এরপরে সেপ্টেম্বরে এসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাবের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ২১০টি। পরের মাস অক্টোবরে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৯ লাখ ৫৮ হাজার ৪৯৪টি। নভেম্বর মাসে হিসাবের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৯০৭টি এবং সবশেষ ডিসেম্বর মাস হিসাব আরও বেড়ে ৪০ লাখ ৫৫ হাজার ২৩৯টিতে দাঁড়ায়।
এর আগে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ে ৩২ লাখ ৬০৫ শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা হয়েছিল। এ সময় আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা।
শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহী করতে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচীর পুনঃপ্রবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেশ সফলতা পায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসছে। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। এর পরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: