• NEWS PORTAL

  • শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

পাকিস্তানের কাছে প্রাপ্য ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার চাইবে ঢাকা

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ১৬ এপ্রিল ২০২৫

ফন্ট সাইজ
পাকিস্তানের কাছে প্রাপ্য ৪.৫২ বিলিয়ন ডলার চাইবে ঢাকা

ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাকিস্তানের সঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের একটি বৈঠক। বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের কাছ থেকে ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক দাবি উত্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে অবিভক্ত পাকিস্তানের ১৯৭১-পূর্ববর্তী সম্পদের ন্যায্য অংশ, সাহায্যের অর্থ, ভবিষ্যৎ তহবিল এবং সঞ্চয়পত্র।

১৭ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠেয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়টি উত্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে ১৯৭০ সালে ভোলায় ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাঠানো ২০০ মিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক সাহায্য। স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তানের ঢাকা শাখায় জমা হওয়া এই অর্থ মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যাংকের লাহোর শাখায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।

এ ছাড়া পশ্চিম পাকিস্তানে নিযুক্ত অনেক বাংলাদেশি সরকারি কর্মচারী স্বাধীনতার পর দেশে ফিরে এলেও তাদের জমা হওয়া ভবিষ্যৎ তহবিল ও সঞ্চয়পত্র পাকিস্তান কখনই ফেরত দেয়নি। এগুলো পাকিস্তানের কাছে ৪.৫২ বিলিয়ন ডলারের বৃহত্তর দাবির অংশ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবির সমর্থনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিস্তারিত প্রমাণ সংগ্রহ করেছে, যেখানে বকেয়া অর্থের বিভিন্ন তথ্য চিহ্নিত করা হয়েছে।

জুলাইয়ের (২০২৫) শেষের দিকে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়গুলো উত্থাপিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২৭ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং অর্থ বিভাগের সচিবকে একটি চিঠি পাঠিয়ে দাবির সাথে সম্পর্কিত বাকি সমস্ত নথিপত্র জরুরি ভিত্তিতে জমা দেওয়ার অনুরোধ জানায়।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সর্বশেষ ২০১০ সালে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছিল। সেই বৈঠকেও ঢাকা অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের ন্যায্য অংশের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়া এবং আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসনের জন্যও চাপ দেয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযুদ্ধের সময় অপব্যবহার করা ২০০ মিলিয়ন ডলারের ঘূর্ণিঝড় সহায়তা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছে। এ ছাড়া অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদের প্রায় ৪.৩২ বিলিয়ন ডলারের ন্যায্য অংশ চায় বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকা রেকর্ড অনুযায়ী, শুধু জনসংখ্যার ভিত্তিতে, বাংলাদেশ ওই সম্পদের ৫৬ শতাংশের অধিকারী ছিল। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে অবদান বিবেচনা করলে এর অংশ দাঁড়ায় ৫৪ শতাংশ। যেকোনো সমতার নীতি অনুসারে, বাংলাদেশ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ পাওয়ার অধিকারী।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পরিকল্পনা কমিশন কর্তৃক প্রস্তুত করা যুদ্ধোত্তর একটি মূল্যায়নে ধারণা করা হয়েছিল, পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি কর্মচারীদের তৎকালীন ৯০ লাখ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড আমানত আটকে রেখেছিল।

একইভাবে যুদ্ধের সময় রূপালী ব্যাংকের করাচি শাখায় থাকা ১.৫৭ কোটি টাকা কখনও ফেরত দেওয়া হয়নি। পরে পাকিস্তান এই পরিমাণকে শেয়ারে রূপান্তর করে রূপালী ব্যাংককে অবহিত করে, কিন্তু কখনও কোনো লভ্যাংশ প্রদান করেনি। শেয়ার বিক্রি করে তহবিল ফেরত পাঠানোর বাংলাদেশের প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার স্বাধীনতা-পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক বিক্রি করা বিভিন্ন চুক্তির বাধ্যবাধকতা, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সঞ্চয়পত্র এবং আয়কর বন্ডসহ কার্যকরভাবে ঋণ পরিশোধ করেছে- যা পাকিস্তানের করা উচিত ছিল।

‘স্টেট ব্যাংক অফ পাকিস্তান এবং পাকিস্তান সরকার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাপ্য দাবির বিবৃতি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে একটি বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত প্রচলিত মুদ্রার মোট মূল্য ছিল ৮৭০ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা, যার অন্তত অর্ধেক বাংলাদেশের প্রাপ্য। পাকিস্তানের ব্যাংকিং বিভাগের কাছেই বাংলাদেশের পাওনার পরিমাণ ৫৯.৬৩ কোটি টাকা।

এ ছাড়া পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের হিসাবে ৮৮ লাখ টাকা, বিধিবদ্ধ তহবিলের ৫০ শতাংশের হিসাবে ২২.৬২ কোটি টাকা, পাকিস্তানের বাইরে রাখা ৫০ শতাংশের হিসাবে ৬.০৭ কোটি টাকা এবং অন্যান্য সম্পদ থেকে আরও ২৭.৫৮ কোটি টাকা বাংলাদেশের প্রাপ্য।

বাংলাদেশ সরকার পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকারের কিছু ঋণ জামানতের ২১ দশমিক ৩৮ কোটি টাকার দায়ও গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের ঋণ হিসেবে ১৪ দশমিক ৭ কোটি টাকা, পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ঋণ হিসেবে ২ দশমিক ৭৭ কোটি টাকা, পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারি ঋণ হিসেবে ১ দশমিক ১৫ কোটি টাকা, আন্তর্জাতিক ট্রেডিং ইউনিট বিনিয়োগের বিপরীতে জারি করা সঞ্চয়পত্র হিসেবে ২ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা এবং পাকিস্তানি প্রাইজ বন্ডের সাথে যুক্ত সঞ্চয়পত্র হিসেবে ৬৫ লাখ টাকা।

বিভি/টিটি

মন্তব্য করুন: