মোবাইল ব্যাংকিংয়ে রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন

মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় (এমএফএস) রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গ্রাহকরা মোট ৭৭ হাজার ২২ কোটি টাকার লেনদেন করেছেন। যা একক মাস হিসেবে লেনদেনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গত জানুয়ারি মাসে ৭৩ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা লেনদেন করেন গ্রাহকরা। যা একক মাস হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন। ২০২১ সালে মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয় ৭১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা।
মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেছেন, মোবাইল ব্যাংকিং (এমএফএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা বলেছেন, এক মাসে এত লেনদেন এর আগে কখনও হয়নি। দ্রুত শহর থেকে গ্রামে বা গ্রাম থেকে শহরে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় গ্রাহক সংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণ। আর লেনদেনের সীমা বাড়ানোর ফলে রেকর্ড লেনদেন হয়েছে।
বিকাশ, রকেট, এমক্যাশ, উপায়সহ দেশে বর্তমানে ১৩টি প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আর্থিক সেবা (এমএফএস) দিচ্ছে।
তবে ডাক বিভাগের সেবা ‘নগদ’ একই ধরনের সেবা দিলেও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির এই সেবা উল্লিখিত হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের পরিমাণ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এমএফএস মাধ্যমে লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতিদিন এজেন্ট থেকে ৩০ হাজার টাকা এবং ব্যাংক হিসাব বা কার্ড থেকে ৫০ হাজার টাকা জমা করতে পারবেন। যা আগে ছিলেন দৈনিক ৩০ হাজার এবং কার্ড থেকে টাকা জমার সীমাও নির্দিষ্ট ছিল না। এখন একজন গ্রাহক আরেকজনকে মাসে দুই লাখ টাকা পাঠাতে পারবেন। আগে এ সীমা ছিল ৭৫ হাজার টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেয়া গেছে, লেনদেনের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বাড়ছে এজেন্ট সংখ্যা। মার্চ শেষে ১১ লাখ ৫১ হাজার এজেন্ট ছিল। অবশ্য গত বছরের চেয়ে গত মার্চে গ্রাহক সংখ্যা কিছু কমেছে বলে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৯। মার্চ শেষে সেটা কমে হয়েছে ১০ কোটি ৯১ লাখ ৩০ হাজার ৪০৫ জন। গ্রাহকের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ও শহরের গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ২৫ লাখ। নিবন্ধিতদের মধ্যে পুরুষ ৬ কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ও নারী গ্রাহক প্রায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ ২৬ হাজার।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবার পরিধি অনেকে বেড়েছে। মার্চ মাসে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে জমা পড়েছে (ক্যাশ ইন) ২৩ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা, উত্তোলন করা হয়েছে (ক্যাশ আউট) ২০ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। এমএফএস সেবায় ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে ২২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা লেনদেন হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বাবদ বিতরণ হয় ২ হাজার ৮৭৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন পরিষেবার ১ হাজার ২৩২ কোটি টাকার বিল পরিশোধ হয়। কেনাকাটার ২ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকার বিলও পরিশোধ হয় এ মাধ্যমে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। এরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। তবে এক্ষেত্রে নগদ বাংলাদেশ ব্যাংকের থেকে চূড়ান্ত লাইসেন্স পেলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন ও গ্রাহক সংখ্যা হিসাব নম্বর সবই বাড়বে।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: