বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিক কে এই মজিবুর রহমান

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কেশবপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার তিনদিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু আগুন এখনও নেভেনি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
এছাড়া দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ ৪ জন মন্ত্রী। এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ৪১ বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ। আহত চার শতাধিক মানুষ। বেসরকারি হিসাব ও বিভিন্ন সূত্র মৃতের সংখ্যা ৫১।
জানা গেছে, বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিক চট্টগ্রামের বাঁশখালী এলাকার বাসিন্দা ও স্মার্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মজিবুর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখা আওয়ামী লীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক। এছাড়া তিনি একাধিক পোশাক কারখানার মালিক।
জানা গেছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি চট্টগ্রাম–১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন চেয়েছিলেন মজিবুর রহমান। তবে সে সময় দলীয় হাই কমান্ড তার সিদ্ধান্তে সাড়া দেয়নি।
বিএম কন্টেইনার ডিপোর মালিকানার তথ্য ঘেটে দেখা যায়, ২০১১ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের দুটি প্রতিষ্ঠানের ১৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগে চালু হয়েছিল বিএম কন্টেইনার ডিপো। এর ৩৫ লাখ শেয়ারের মধ্যে ১ লাখ ৩৮ হাজার শেয়ার রয়েছে ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমানের নামে। তার ভাই পরিচালক মুজিবুর রহমানের নিজের নামে আছে ১৫ হাজার শেয়ার। আর স্মার্ট জিন্সের নামে ১৮ লাখ ৩৬ হাজার শেয়ার রয়েছে। নেদারল্যান্ডসের প্রতিষ্ঠান ২০১৭ সালে এই ১৮ লাখ ৩৬ হাজার শেয়ার স্মার্ট জিন্সের কাছে হস্তান্তর করে। নেদারল্যান্ডসের মেসার্স প্রঙ্ক পার্টিসিপেটের নামে আছে ১৫ লাখ ১১ হাজার শেয়ার।
জানা গেছে, গত ২৪ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত দেশের বেসরকারি মালিকানাধীন ১৯টি ডিপোর মধ্যে সবচেয়ে বড়গুলোর একটি এই বিএম ডিপো। এখানে একসঙ্গে প্রায় সাড়ে ৪ হাজারের বেশি কনটেইনার রাখা যায়। অর্থাৎ দেশের আমদানি-রফতানির কাজে ব্যবহৃত কন্টেইনারগুলোর ১০ শতাংশ এখান থেকে লোড-আনলোড করা হয়।
রবিবার বিকালে বিএম কন্টেইনার ডিপোর পরিচালক মজিবুর রহমান বলেন, ‘ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে আমার ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। আমার সব শেষ। তবে আমি আহত ও নিহতদের পরিবারের পাশে আছি।’
মজিবুর আরও বলেন, ‘কী কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারিনি। তবে কন্টেইনার থেকেই আগুন ধরেছে বলে ধারণা করছি। নৈতিকতা ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে হতাহতদের পাশে থাকবো। আহতরা যাতে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পায় সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার আমরা বহন করবো। দুর্ঘটনায় যারা হতাহত হয়েছে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি হতাহতদের পরিবারের দায়িত্ব নেওয়া হবে। প্রশাসন যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবে সহায়তা করা হবে।’
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক নিউটন দাশ বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের সব ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এখনও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। তবে তীব্রতা কিছুটা কমেছে।’
প্রতি বছর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ডিপোগুলোর অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাপনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সে সময় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কোনো সুপারিশ করা হয়েছে কি-না জানতে ডিপো ম্যানেজারের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তিনি ‘ব্যস্ত আছেন’ বলে কল কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দিয়ে এবং এসএমএস পাঠিয়েও তার কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাভিশনকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মোট ২৮টি পোশাক শিল্প কারখানার প্রায় ১শ কোটি টাকার রফতানিপণ্য পুড়ে গেছে। এসব কারখানার ১৬টি ঢাকার এবং ১২টি চট্টগ্রামের।
বিভি/এইচএস/এনএ
মন্তব্য করুন: