দেশে প্রতিদিন গড়ে কোটিপতি হচ্ছেন ২৫ জন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এসে দেশে কোটিপতি হিসাব নম্বর হু হু করে বাড়ছে। দেশে প্রতিদিন গড়ে কোটিপতি হচ্ছেন ২৫ জন। গেল একবছরে দেশে কোটিপতি আমনতকারীর সংখ্যা বেড়েছে ৯ হাজার ৩২৫টি (বছরে ৩৬৫ দিন হিসাব করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায়)। এর ফলে দেশে কোটিপতির মোট সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৫৯৭তে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন ২০২২ পর্যালোচনা করে এমন তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কোটি টাকার হিসাব মানেই কোটিপতি ব্যক্তির হিসাব, বিষয়টি এমন নয়। কারণ ব্যাংকে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ রাখার তালিকায় ব্যক্তি ছাড়া অনেক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আবার ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কতটি ব্যাংক হিসাব খুলতে পারবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সীমা নেই। ফলে এক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একাধিক হিসাবও রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কোটি টাকার হিসাবও রয়েছে।
আরও পড়ুন:
- ঈদ উপলক্ষে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে দোকানপাট
- ব্যাংকে পড়ে থাকা অলস প্রভিডেন্ট ফান্ড পুঁজিবাজারে ব্যবহার সম্ভব
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ কোটি ৭৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৩। যাদের হিসাবে জমা ছিল ১৫ লাখ ১৪ হাজার ৮৯৫ কোটি টাকা। ২০২১ সালের মার্চ আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ৮৫ লাখ ৫২ হাজার। তাদের হিসাবে জমা ছিল ১৩ লাখ ৮৪ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা।
২০২১ সালের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকার বেশি আমানতের হিসেবের সংখ্যা ছিল ৯৪ হাজার ২৭২টি। ২০২২ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫৯৭টিতে। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে ৯ হাজার ৩২৫টি। কোভিড-১৯ মহামারির এই ২১ মাসে (মার্চ ২০২০- ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত সময়ে) এমন হিসাবের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ২১ হাজার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের মার্চে দেশে যখন করোনা হানা দেয় তখন ব্যাংক খাতে কোটি টাকার বেশি আমানত রাখার হিসাবের সংখ্যা ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। মহামারি চলাকালে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরেই কোটিপতি হিসাবের ওই অংক এক লাখ ছাড়ায়। ২০২২ সালের মার্চ শেষে তা দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৫৯৭টিতে। এ হিসাবে মহামারির ২৪ মাসে দেশে কোটিপতি হিসাব (অ্যাকাউন্ট) বেড়েছে ২০ হাজার ৯৭২টি।
২০২২ সালের মার্চের তথ্য অনুযায়ী, এক কোটি এক টাকা থেকে পাঁচ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৮১ হাজার ৩৪৪টি। যাদের অ্যাকাউন্টে জমা টাকার পরিমাণ ১ লাখ ৬৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটির মধ্যে রয়েছে ১১ হাজার ৪৮৭টি অ্যাকাউন্ট। তাদের টাকার পরিমাণ ৮১ হাজার ৬৪৩ কোটি।
এছাড়া ১০ কোটি ১ টাকা থেকে ১৫ কোটির টাকার অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৩ হাজার ৮৬৫টি, ১৫ কোটি ১ টাকা থেকে ২০ কোটির মধ্যে ১ হাজার ৭৭১টি, ২০ কোটি ১ টাকা থেকে ২৫ কোটির মধ্যে ১ হাজার ১৫৫ জন, ২৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৩০ কোটির মধ্যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে ৮৮৬ জনের, ৩০ কোটি ১ টাকা থেকে ৩৫ কোটি টাকার মধ্যে ৪৫৮ জন এবং ৩৫ কোটি ১ টাকা থেকে ৪০ কোটির মধ্যে ২৯০ জন আমানতকারী অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ৪০ কোটি ১ টাকা থেকে ৫০ কোটি টাকার অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৬৪৪টি। আলোচিত সময়ে ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানত রাখা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়ে ১ হাজার ৬৯৭টিতে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি আমানতকারী ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে তা ৪৭ জনে উন্নীত হয়। ১৯৮০ সালে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৯৮টি। এরপর ১৯৯০ সালে ৯৪৩টি, ১৯৯৬ সালে ২ হাজার ৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫ হাজার ১৬২টি, ২০০৬ সালে ৮ হাজার ৮৮৭টি এবং ২০০৮ সালে ছিল ১৯ হাজার ১৬৩টি। ২০২০ সালে ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৯৩ হাজার ৮৯০টিতে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর বেড়ে কোটিপতি হিসাব দাঁড়ায় ১ লাখ ১৯৭৬টিতে।
বিভি/এইচএস/এনএ
মন্তব্য করুন: