রিজার্ভ চুরির অর্থ উদ্ধারে নতুন উদ্যোগ, গভর্নর-আইনজীবীর বৈঠক

বৈদেশিক মুদ্রার চরম সংকটের মধ্যে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৭ বছর আগে চুরি হওয়া অর্থ উদ্ধারে নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার এ বিষয়ে নিযুক্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিইউয়র্কের চেয়ারম্যান এবং দেশটিতে নিযুক্ত আইনি প্রতিষ্ঠান কোজেন ও'কনরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন গভর্নর। ওই বৈঠকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি।
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে গভর্নরের কার্যালয়ে ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসির সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান মো. মাসুদ বিশ্বাসসহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে দেশে ধারাবাহিকভাবে কমছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। অন্যদিকে রিজার্ভ থেকে আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে ইতোমধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।
জানতে চাইলে ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি টেলিফোনে গণমাধ্যমকে জানান, নিউইয়র্ক বা ফিলিপাইনে কী হচ্ছে; অর্থ উদ্ধারে নতুন কৌশল কী হবে- এসব নিয়ে নতুন গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের এখতিয়ার বিষয়ে নিইউয়র্কে একটি মামলার রায় অপেক্ষমাণ। ওই রায়ের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। পাশাপাশি অন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত পাওয়ার আশা আছে বলেই আমরা মামলা করেছি। নিইউয়র্ক ফেডের সঙ্গে আমাদের একটি ‘কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট' (সহযোগিতা চুক্তি) রয়েছে। ওই চুক্তির আওতায় তারা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে। নিউইয়র্ক ফেড আমাদের আইনি লড়াইয়ে তথ্য দিয়ে এবং প্রয়োজনে আদালতে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে সহযোগিতা করবে।’
২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে হ্যাকাররা। চুরি করে শ্রীলঙ্কায় নেওয়া ২ কোটি ডলার দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। বাকি অর্থ নেওয়া হয় ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের কয়েকটি হিসাবে এবং সেখান থেকে বিভিন্ন ক্যাসিনোতে যায়। সে দেশের আদালতের নির্দেশে একটি ক্যাসিনোর মালিক কিম অং ২০১৬ সালের নভেম্বরে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরত দেয়। বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার উদ্ধারে সহায়তার জন্য ফিলিপাইনের বিভিন্ন সরকারি সংস্থা তখন বাংলাদেশের পক্ষে ১২টি মামলা করেছিল। অদ্যাবধি এসব মামলার রায় হয়নি। যে কারণে তৃতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্রে মামলা করে বাংলাদেশ।
সংশ্নিষ্টরা জানান, রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া বাকি ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা- এ নিয়ে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। কেননা, যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্ট আন্তর্জাতিক আদালত নয়। ফলে এ আদালতে তৃতীয় দেশ ফিলিপাইনের বিভিন্ন পক্ষের বিরুদ্ধে মামলার এখতিয়ার রয়েছে কিনা- তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। গত ৮ এপ্রিল স্টেট কোর্ট যে আংশিক রায় দিয়েছেন, সেখানে ফিলিপাইনের দুই ক্যাসিনোকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে আরসিবিসিসহ অন্যরাও অব্যাহতি পেতে পারে- এমন ধারণা জোরালো হচ্ছে। আর ফিলিপাইনে যে ১২টি মামলা চলমান, তার অগ্রগতিও খুব ধীর। ফলে রিজার্ভ থেকে চুরি হওয়া অর্থ আদৌ ফেরত পাওয়া যাবে কিনা- তা নিয়ে যথেষ্ট অনিশ্চয়তা আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, রিজার্ভ থেকে চুরির অর্থ ফেরত ও দোষীদের চিহ্নিত করতে প্রথমে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে মামলা করে বাংলাদেশ। ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক, ক্যাসিনো মালিক কিম অংসহ ২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ মামলা হয়। তবে মামলা করার এক বছর দুই মাস পর ২০২০ সালের মার্চে ম্যানহাটন সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট জানিয়ে দেন- মামলাটি তাদের এখতিয়ারভুক্ত নয়। এর পর ২০২০ সালের ২৭ মে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট কোর্টে মামলার আবেদন করা হয়। মামলার বিষয়ে বাংলাদেশের আইনি প্রতিষ্ঠান কোজেন ও'কনর আরসিবিসিসহ ৬ জন বিবাদীকে নোটিশ দেয়। নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে ‘মোশন টু ডিসমিস’ বা মামলাটি না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে আবেদন করে এসব পক্ষ। গত বছরের ১৪ জুলাই দেশটির আদালতে সোলায়ের ক্যাসিনো, কিম অং ও ইস্টার্ন হাওয়ায়ে ক্যাসিনোর আবেদন শুনানি শেষে ৮ এপ্রিল আংশিক রায় হয়। এতে দুই ক্যাসিনোকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। আর ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিম অংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের ১৪ অক্টোবর আরসিবিসি, অভিযুক্ত ব্যক্তি লরেঞ্জ টান ও রাউল টানের বিষয়ে আবেদনের শুনানি হয়। এখন এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে রায় অপেক্ষমাণ।
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: