• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

চিনি রপ্তানি আরও একবছর বন্ধ রাখবে ভারত

চিনির মিষ্টি খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, কষ্ট বাড়ছে ভোক্তাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১:২২, ২ নভেম্বর ২০২২

ফন্ট সাইজ
চিনির মিষ্টি খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা, কষ্ট বাড়ছে ভোক্তাদের

ভারত আরও একবছর চিনি রপ্তানি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে দেশের বাজারে চিনির সরবরাহ না বাড়লে নিত্যপণ্যের বাজার চিনি শূন্য হয়ে যেতে পারে। দৈনিক ৬ হাজার টনের চাহিদা থাকলেও সারাদেশে সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২ থেকে আড়াই হাজার টন চিনি। এতে করে নিত্যপণ্যের বাজারে চিনির সংকট আরও বাড়ছে। বেসামাল চিনির বাজার। মুদিপণ্য এমনকি পাইকারি বাজারের বেশিরভাগ দোকানে এই পণ্যটি পাওয়া যাচ্ছে না। দু’এক প্যাকেট যা পাওয়া যাচ্ছে তাও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রতিকেজিতে ২৫-৩০ টাকা বেশি দিয়ে ১১৫-১২৫ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে।

সাম্প্রতিক অভিযানের কারণে নানা চাপের মুখে রয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাজার মনিটরিং টিম। অভিযান না থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো চালাচ্ছে বাজার। 

জানা গেছে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বা মিলগুলোতে আগামী ৩ থেকে চার মাস চলার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে চিনি মজুত রয়েছে। কিন্তু চলমান বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটকে পুঁজি করে বাজারে এক ধরনের কৃত্রিম সংকট তৈরির চেষ্টা করছে এ খাতের ব্যবসায়ীরা। উৎপাদন ও সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা করা হচ্ছে। ভোক্তাদের কষ্ট বাড়লেও চিনির মিষ্টি খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরাই। ঢাকার পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজার ঘুরে দেখা গেছে বেশিরভাগ মোকাম শূন্য। যাদের কাছে চিনি আছে তারাও বাড়তি দামে এনে বেশি দামে বিক্রি করছেন। একই অবস্থা বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। সেখানকার পাইকারি বাজারেও চাহিদা অনুযায়ী চিনির সরবরাহ নেই। 

পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিল থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে পাইকারি বাজারের বেশিরভাগ মোকামে চিনি নেই। অন্যদিকে মিলারদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- গ্যাসের অভাবে উৎপাদন কমে যাওয়ায় চিনির সরবরাহে ঘাটতি রয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী হাজি মোহাম্মদ আলী ভুট্টো বলেন, বেশিরভাগ মোকামে চিনি নেই।

 চিনি শূন্য থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দু’সপ্তাহের বেশি সময় ধরে মিলগেট থেকে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে চিনি বিক্রি বন্ধ রেখে এখন শুধুমাত্র ভোজ্যতেল বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের (বিটিটিসি) হিসাবে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। বর্তমানে সিটি, মেঘনা, এস আলম, আবদুল মোনেম ও দেশবন্ধুসহ পাঁচ গ্রুপের কাছে অপরিশোধিত চিনির মজুত আছে দেড় লাখ টনের মতো। আমদানির অপেক্ষায় আছে আরও ৩ লাখ ৩০ হাজার টন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বিপুল পরিমাণ চিনি মজুত ও আমদানির কথা জানানো হয়েছে। এ অবস্থায় চিনির সংকট কৃত্রিম কি না সেটি খতিয়ে দেখার কথা বলছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তবে চিনির সংকট দূরীকরণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন থেকে কয়েকটি উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাজার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়নি। দ্রুত বেসামাল হয়ে ওঠছে চিনির বাজার। বেশি দাম দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী অনেক দোকানে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। চিনির বাজার সামাল দিতে পরিশোধিত চিনি আমদানি করা যায় কি না সে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে সরকার।

ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা বা বিশ্বের অন্য কোন দেশ থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানির বিষয়টি ভেবে দেখা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। পরিশোধিত চিনি আমদানির মাধ্যমে যদি বাজার পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায় তাহলে সে পথে হাঁটবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সাময়িক সময়ের জন্য পরিশোধিত চিনি আমদানির সুযোগ দেওয়া হতে পারে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত পূর্বাভাস সেলের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চিনির সরবরাহ বাড়াতে মিলারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরবরাহ অব্যাহত থাকলেও ঘাটতি রয়েছে।

এ কারণে বাজার স্বাভাবিক করার লক্ষ্যে পরিশোধিত চিনি আমদানি করা যায় কিনা সে বিষয়ে ভেবে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক করা হতে পারে।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, চিনির সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ করা হচ্ছে। মিলারদের বেশ কয়েকটি দাবি পূরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। আশা করছি দ্রুত চিনির বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।

এদিকে, ক্রেতারা দোকান দোকান ঘুরে চিনির খোঁজ করছেন। সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি ফ্যামিলি কার্ডের বাইরে খোলা ট্রাকে চিনি বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী তা সামান্য। ক্রেতারা দীর্ঘলাইন ধরে টিসিবির ৫৫ টাকা দরের প্রতিকেজি চিনি কিনতে পারছে না। একই অবস্থা বিরাজ করছে বেসরকারি চারটি চিনি উৎপাদনকারীর প্রতিষ্ঠানের ট্রাকসেল কার্যক্রমে। ট্রাকে চিনি আসামাত্র তা দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। আর যারা দোকান দোকান ঘুরে বেশি দাম দিয়ে চিনি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তাদের অসন্তুষ্টি বাড়ছে। 

রাজধানীর নাখালপড়ার শিল্পী আক্তার জানান, পাঁচ দোকান ঘুরে একটি দোকানে চিনি পেয়েছেন। কিন্তু এক কেজির প্যাকেট চিনি কিনতে গুণতে হয়েছে ১২০ টাকা।

এদিকে চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ আরও এক বছরের জন্য বাড়িয়েছে বিশ্বের শীর্ষ চিনি উৎপাদনকারী দেশ ভারত। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি। চলতি নভেম্বর মাস থেকে চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরও একবছর বাড়িয়েছে দেশটি। আগামী ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। 

দেশটির শিল্প কর্মকর্তাদের বরাতে প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতে চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণ চিনি উৎপাদনের প্রত্যাশা করা হয়েছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী উৎপাদন হলে প্রায় আট মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

ভারত গত মে মাসে চিনি রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে; যা চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বহাল রাখা হয়েছিল। মূলত, চিনির দামে লাগাম টানতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

বিভি/এইচএস

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2