রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি
ভয়ে এখনো আঁতকে ওঠেন ২৯ শতাংশ শ্রমিক

সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতের ১০ বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ২৪ এপ্রিল। ভয়াবহ সেই দিনের কথা মনে পড়লে এখনো ভয়ে আঁতকে ওঠেন সেই দিন কারখানায় কাজ করা বেঁচে যাওয়া শ্রমিকরা। আজ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি তারা। তাদের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ এখনও কর্মহীন। যাদের মধ্যে ৮৯ শতাংশ ৫ থেকে ৮ বছর ধরে কর্মহীন, আর ৫ দশমিক ৫ শতাংশ কর্মহীন রয়েছেন ৩ থেকে ৪ বছর ধরে। তাদের বেকারত্বের পেছনে মূল কারণ শারীরিক স্বাস্থ্যগত অবস্থা। এ ছাড়া ২৯ শতাংশ এখনও মানসিক ট্রমায় (এখনো আতঙ্কে) ভুগছেন।
এ উপলক্ষে বুধবার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর একটি কনভেনশন হলে ‘রানা প্লাজা দুর্ঘটনা: ট্র্যাজেডি থেকে ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক এক বহুপক্ষীয় আলোচনায় একটি সমীক্ষার ফল তুলে ধরা হয়। অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের পক্ষে ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল বিজনেস (আইএসবি) এই সমীক্ষা পরিচালনা করে।
রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় জীবিত ২০০ জন পোশাক শ্রমিক এবং মৃত পোশাক শ্রমিকদের পরিবারের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। উত্তরদাতাদের মধ্যে ছিলেন ৬৯ দশমিক ৫ শতাংশ নারী এবং ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ পুরুষ।
সমীক্ষায় ২১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা কোনো উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পাচ্ছেন না। এ ছাড়া ২৯ শতাংশ এখনও মানসিক ট্রমায় ভুগছেন। ৫৭ শতাংশের দাবি, তারা এখনও ভবন ধসে পড়ার ভয় পান। ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ শ্রমিক তাদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
এ সময় বক্তব্য দেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেন, অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক জুলিয়া জেসমিন, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, ট্রেড ইউনিয়ন সেন্টারের সাধারণ সম্পাদক ড. ওয়াজেদুল ইসলাম খান প্রমুখ।
সমীক্ষায় আরও দেখা যায়, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে সেরে উঠে ৩৬ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক পোশাক কারখানায় কাজ করছেন। গত বছর এ হার ছিল ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের শারীরিক অবস্থার উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। সম্পূর্ণরূপে স্থিতিশীল বলে দাবি করা জীবিতদের হার কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ।
সমীক্ষায় আরও প্রকাশ পায়, বেশিরভাগ শ্রমিকের পরিবারের আয় তাদের পারিবারিক খরচ মেটাতে অপর্যাপ্ত।
সমীক্ষায় আরও ২০০ জন বর্তমান পোশাক শ্রমিকের কাছে তাদের কারখানায় নিরাপত্তা পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। যার ৮৪ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। ৫২ শতাংশ কর্মীরাই মনে করেন, কারখানায় নিরাপত্তাব্যবস্থা অপর্যাপ্ত রয়েছে। ৯৩ শতাংশ কর্মী তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রায় ৬০ শতাংশ কর্মী কারখানার বিভিন্ন ঝুঁকির কথা জানান। যেমন যন্ত্রপাতি সমস্যা, অগ্নি-নিরাপত্তাব্যবস্থার অনুপস্থিতি, অপর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ও আলোক স্বল্পতা, সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থার অভাব। ২০ দশমিক ৯ শতাংশ জানান, কারখানায় কোনো চিকিৎসাকেন্দ্র নেই।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, ’শ্রমিকরা সহানুভূতি চায় না, সহযোগিতা চায়। ট্রেড ইউনিয়নের ভূমিকা হওয়া উচিত শ্রমিকদের পক্ষে কাজ করা। কিন্তু সে ট্রেড ইউনিয়নকে দুর্বল করে ফেলা হচ্ছে। সেফটি কমিটি করা হয়েছে যারা নিজেরাই সেফ না।’
অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, ’দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের বিকল্প জীবিকা খুঁজতে সহায়তা করা জরুরি।’
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিয়াইনেন বলেন, ’কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার একটি সংস্কৃতি তৈরি করার ওপর জোর দেওয়া উচিত।’
বিভি/এইচএস
মন্তব্য করুন: