রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রশ্নে হাবিপ্রবি প্রশাসনের কালক্ষেপণ

ফাইল ছবি
ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর সারাদেশের মতো হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১১ আগস্ট থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের সকল ধরনের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
তৎকালীন রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত রাজনীতি নিষিদ্ধের অফিস আদেশে আরও বলা হয়, আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদান করা হবে এবং উক্ত আদেশ ১১ আগস্ট হতে কার্যকর।
কিন্তু নোটিশ যেন হাবিপ্রবি প্রশাসনের কাছে তুরুপের তাস। ছাত্র নেতারা জানিয়েছেন, নোটিশটা প্রশাসন নিজের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছেন। সুবিধা মতো কার্যকর করছেন আবার সুবিধামতো ফ্যাসিস্টের সিগনেচার নোটিশ বলে অগ্রাহ্য করছেন। প্রশাসনকে জিজ্ঞেস করলে বলে নোটিশ বহাল আছে ক্যাম্পাসে সকল ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ আবার ওই প্রশাসনই ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে মিটিং করছে। বিভিন্ন দিবস আয়োজন উপলক্ষে ছাত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দিচ্ছেন। রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিলেও আবার নোটিশ দেখায় বিভিন্ন শর্ত বেধে দিচ্ছেন। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নোটিশটা ব্যবহার করে ছাত্র রাজনীতি সুবিধামত নিয়ন্ত্রণ করছে। ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে মুলা ঝুলিয়ে রেখেছে হাবিপ্রবি প্রশাসন।
এর আগে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক ব্যানারে মিটিং মিছিল করলেও কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়নি প্রশাসন। এছাড়াও ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরে শিবির ও ছাত্র অধিকার পরিষদ নিজেদের কার্যক্রম চালালেও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
এদিকে রাজনীতি নিষিদ্ধের নোটিশকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক পরিষদ, জিয়া পরিষদ, সাদা দল, ইউট্যাব নামে শিক্ষকদের সংগঠন গুলো নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে নিয়মিত। অথচ ক্যাম্পাসে রাজনীতি নোটিশ বহাল রয়েছে।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক বার্নার্ড পলাশ বলেন, আমরা ফ্যাসিস্ট আমলের রেজিস্ট্রারের সিগনেচার করা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নোটিশ কখনোই মানি না। আমরা নিজেদের মতো কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। আমি মনে করি ক্যাম্পাস এগিয়ে নিয়ে যেতে ক্যাম্পাসে সুস্থ ধারার শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে। আর যে নোটিশ টা আছে সেটা প্রশাসন শুধু নিজের সুবিধা অনুযায়ী ব্যবহার করছে।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি শেখ রিয়াদ বলেন, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, হয় রাজনীতি পুরোপুরি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন,আর না হয় পুরোপুরি বন্ধ করে দেন। একটি সিদ্ধান্ত নেন। যদি বন্ধই করেন,তাহলে যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। ছাত্রশিবির ক্লিন ইমেজের রাজনীতি করতে চায়।
হাবিপ্রবি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমরা প্রশাসনকে বার বার বলেছি তারা এ ব্যাপারে স্পষ্ট করছে না। আমরা কিছু বললে বলে ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ আবার ছাত্রদল শিবির অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতেও বলে। আর ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির চেয়ে শিক্ষক রাজনীতি আরো বেশি। শিক্ষক রাজনীতি আর গ্রুপিং এ তারা নিজেরাই কাদা ছোড়াছুড়ি করে ক্যাম্পাসের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের নোটিশটাকেই বহাল রেখেছে। ভিসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা কার্যক্রমকে সামনে রেখে ছাত্র সংগঠন গুলো স্টল ও মনবতামূলক কাজ করতে পারবে তবে স্লোগান মিটিং মিছিল করতে পারবে না।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: