শিক্ষকের নামে মিথ্যা অপবাদ, ছাত্রলীগ নেতাসহ বহিষ্কার ১০

প্রতীকী ছবি
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের (মমেক) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অপবাদসহ মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার অপরাধে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ শিক্ষার্থীকে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
শনিবার (৫ মার্চ) বিকালে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা শেষে সন্ধ্যায় বাংলাভিশনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ।
বহিষ্কৃতদের মধ্যে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানকে তিন বছর, দুইজনকে দুই বছর ও সাতজনকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। এ ঘটনায় অনিচ্ছাকৃত সম্পৃক্ত থাকায় প্রথম বর্ষের আরও ৮ শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়াা পর্যন্ত কলেজ ক্যাম্পাসে মিছিল, সভা-সমাবেশসহ সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে।
অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. চিত্ত রঞ্জন দেবনাথ জানান, সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে যতসব অভিযোগ উঠেছিল, তা তদন্তে মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রমাণিত হয়েছে। সম্মানিত একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এবং আবেদনপত্রে আপত্তিকর শব্দ ব্যবহার করায় এম-৫৩ ব্যাচের ছাত্র ও মমেক শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানকে শৃঙখলা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে আগামী ৩ বছরের জন্য সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি সে কলেজ ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে পারবে না।
তিনি আরও জানান, মিথ্যা অভিযোগ এনে মানববন্ধনের মাধ্যমে ভিত্তিহীন ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে একজন শিক্ষককে সম্মানহানি করা হয়েছে, যা খুবই লজ্জ্বাজনক এবং প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে। যে কারণে বিভিন্ন মেয়াদে ১০ জনকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও অনিচ্ছাকৃত সম্পৃক্ত থাকায় আট শিক্ষার্থীকে সতর্ক করা হয়েছে। ভবিষ্যতে কলেজের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার শর্তে মুচলেকা নেয়া হয়েছে।
মমেক শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি অনুপম সাহা জানায়, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমানিত না হওয়ায় একাডেমিক কাউন্সিল সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি মমেক ছাত্রলীগের কোনো বিষয় নয়।
এদিকে কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ জানান, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ও সভার সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
উল্লেখ্য, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে এম-৫৩ ব্যাচের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল হাসানের নেতৃত্বে একদল শিক্ষার্থী। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক-চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। এ ব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাঁচ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি গত ২৩ তারিখে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের ফুটেজ দেখে আন্দোলনকারি ১৮ শিক্ষার্থীর সাক্ষাতকার গ্রহণ করে। এরপর গঠিত তদন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেন।
বিভি/অআর/কেএস
মন্তব্য করুন: