চবির আবাসিক হলে ৪বছরে ৩শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

অভিযান চালিয়ে গত চার বছরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে প্রায় তিন শতাধিক দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোনো গ্রুপ বা উপগ্রুপ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঝামেলা কিংবা হাতাহাতিতে জড়ালেই চোখে পড়ে এসব অস্ত্রের মহড়া।
গত ৮ মার্চ রাত থেকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুইদিনে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায় বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসি ও বিজয় গ্রপের নেতাকর্মীরা। এসময় উভয় পক্ষকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত বুধবার দুইটি আবাসিক হলে পুলিশের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডিসহ তল্লাশি চালায়। এসময় রামদা, হকিস্টিক, ককটেল, পেট্রোল বোমাসহ বিপুল পরিমাণ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
উক্ত অভিযানে জব্দ হওয়া বেশিরভাগ অস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়ায় মূল অপরাধীদের শনাক্ত করা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন:
- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে হল থেকে অস্ত্র ও পেট্রোল বোমা উদ্ধার
- চবিতে আবার ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, লাঠিসোঁটা–রামদা নিয়ে মহড়া
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের ১১টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এগুলো বিভক্ত রয়েছে মূলত দু’টি ধারায়। একপক্ষ সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। অপরপক্ষ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী। এসব গ্রুপ নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে হলগুলোতে বিভিন্ন পন্থায় প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করে যায়। প্রসঙ্গত, গত ৬ বছরেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি না হওয়াকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সংঘর্ষগুলো হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এ যেন পান থেকে চুন খসলে নেতাকর্মীদের হাতে দেখা যায় দেশীয় অস্ত্রের ঝনঝনানি। এসব অস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে ককটেল, দেশি-বিদেশি রিভলবার, রামদা, এসএস পাইপ, হকস্টিক প্রভৃতি। এসব ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গত দুই বছরে আহত হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীসহ প্রায় শতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী। এসব ঘটনায় অনেক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হারিয়েছে পা, করেছেন পঙ্গুত্ব বরণও।
ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘চবি ছাত্রলীগ কোনো ধরনের সংঘর্ষ ও অস্ত্রের রাজনীতির পক্ষে নাই এবং ছিল না। আমরা বারবার পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, যারা ছাত্রলীগ নাম দিয়ে অস্ত্রের রাজনীতি করে সিসি ক্যামেরা দেখে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে। আর হলগুলোতে অস্ত্রের ঝনঝনানি থাকার প্রধান কারণ হচ্ছে বগিভিত্তিক রাজনীতি চলমান থাকা। ক্যাম্পাসে বগিভিত্তিক রাজনীতি না থাকলে চবি ছাত্রলীগের সব সমস্যার সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সারা দেশের মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও শুদ্ধি অভিযান চালিয়ে প্রকৃত অপরাধীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে এলে এখানে শান্তি-শৃঙ্খলার পাশাপাশি শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং তুচ্ছ ঘটনার জেরে একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছে বিভিন্ন গ্রুপ। পুলিশের সহায়তায় আমরা অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন সময় দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছি। তবে আমরা চাই ক্যাম্পাসে সবসময় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকুক। প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে সবসময় জিরো টলারেন্স বজায় থাকবে। আমরা অস্ত্রধারী কাউকে ছাড় দিব না।
বিভি/রিসি
মন্তব্য করুন: