পর্দা করে ভাইভাতে আসায় ছাত্রীকে জঙ্গি বলার অভিযোগ

শিক্ষার্থীর প্রতীকী ছবি, অভিযুক্ত শিক্ষক জসিম উদ্দিন
বোরখা পরে পর্দা মেনে ভাইভাতে (মৌখিক পরীক্ষা) অংশ নেওয়ায় ছাত্রীকে জঙ্গি বলার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে উঠেছে এই অভিযোগ।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ, কেন একজন শিক্ষক কোনো ছাত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চাইবে? তবে বিষয়টি মিথ্যা, ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন অভিযুক্ত শিক্ষক।
জানা যায়, গত ২১ আগস্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ সেমিস্টারের 'Business Statistics-2 ও (FIN-222) কোর্সের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পর্দা করায় এক ছাত্রীকে 'মৌলবাদী জঙ্গি' বলে সম্বোধন করে এবং ভাইভাতে ম্যানার জানেন না বলে হেনস্তা করেন। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিষয়টি সিনিয়রদের জানালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে গণমাধ্যমের সাথে কথা না বলতে নিষেধ করেন অভিযুক্ত শিক্ষক জসিম উদ্দিন।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার চারটি টেস্ট সম্পন্ন, মঙ্গলবার বসবে মেডিকেল বোর্ড
ভুক্তভোগী ছাত্রীর রেফারেন্স দিয়ে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ভাইভাতে প্রথমে স্যার বলেন, আপনি কি ভাইভা দেওয়ার ম্যানার শিখেন নাই? ভাইবা দেয়ার ম্যানার হলো মুখ খুলে আসতে হবে। এতো পড়াশোনা করে কি করবেন আগে মেনারস শিখেন। আপনি এইভাবে ভাইবা দিতে আসছেন জঙ্গী মৌলবাদীদের মতো। নিকাব খুলেও তো ভাইবা দেওয়া যায়।
এছাড়াও, ওই রুমে আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় ভার্সিটি এডমিশন দিসেন কেমনে, বলসি তখন পর্দার বুঝ ছিলো না জানতাম না পর্দা যে ফরজ, বুঝ আসার পর থেকে পর্দা করা শুরু করেছি। বলে মুখ খোলা রেখেও তো পর্দা করা যায়। আর তখন আপনি এডাল্ট ছিলেন আর একটা এডাল্ট মেয়ে তো সব বুঝে। আমি বলেছি স্যার সবাই তো আর পর্দার বুঝটা আগে থেকে পায় না। আমি নাকি তর্ক করেছি তাই আমাকে বের করে দিয়েছে।
তিনি আরও লিখেন, সংবিধানেও যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমার পর্দা নিয়ে পারসোনাল এট্যাক করার চেষ্টা। একাডেমিক টপিকের চেয়ে বেশি আমার মুখ খুলা নিয়েই প্রশ্ন ছিলো।
একই ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। ভাইভাতে গিয়ে ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরণের কথা বলে হেনস্তা করেন। বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, মেয়েরা এত সুন্দরী হয় কিভাবে, কি ধরণের ছেলে পছন্দ ইত্যাদি জানতে চায়।
তারা বলেন, মেয়েদের একাডেমিক খুবই কম প্রশ্ন করে। ছেলেদের সাথে পারসনাল কথা বলে না, একাডেমিকই বলেন। পর্দা করা মেয়েদের কে বিভিন্ন সময়ে হেনস্তা করেন বিভিন্ন কথা বলে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বলেন, এবিষয়গুলা নিয়ে কথাই হয়নি। এটি একটি মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র। কর্পোরেট ভাইভাতে পর্দা ব্যবহার করবেন কিন্তু স্মার্টলি যাবেন নমনীয়ভাবে যাবেন। ওই শিক্ষার্থীকে জাস্ট এতটুকু বলেছি, তাও বলেছি ভাইভার পরে।
বিভাগের সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, একজন শিক্ষক কিভাবে ভাইভা নিবেন এটি সম্পূর্ণ ওনার ব্যাপার। এমন বিষয়টি মাত্র তোমার থেকে শুনেছি। ছাত্রছাত্রী যদি অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা বিষয়টি দেখব।
এ বিষয়ে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও কুবি যৌন হয়রানী প্রতিরোধ সেলের সদস্য দিল নাসি মহসিন বলেন, এমন ঘটনা অবশ্যই নির্যাতন। এজন্য ছাত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়ে শিক্ষক কথা বলতে পারেন না, এটি কোন সাধারণ শিষ্টাচারে পড়ে না। শিক্ষক যদিও ওই দৃষ্টি নিয়ে বলে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যায় কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করবে। এর ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিবে।
আরও পড়ুন: ১০০ কোটি নয়, ‘দিন: দ্য ডে’ সিনেমার বাজেট ৫ কোটিরও কম
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: