“ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রে তামাক কোম্পানির সহায়তা ছিল”

ঢাকা অ্যাটাক চলচ্চিত্রের পোস্টার
ঢাকা অ্যাটাক সম্প্রতি বছরগুলোতে নির্মিত অন্যতম আলোচিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র। মানুষের নিরাপত্তায় পুলিশের বিভিন্ন অবদান তুলে ধরে বানানো হয় এই চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সময় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা অ্যাটাকে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ পুলিশ পরিবার কল্যাণ সমিতি। কিন্তু একটি তামাক বিরোধী সংস্থা বলছে, ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নির্মাণে অপ্রকাশ্য সহাযোগিতা ছিলো একটি তামাক কোম্পানির।
বুধবার (৬ এপ্রিল) বিকেলে এফডিসিতে আয়োজিত ‘চলচ্চিত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে এই গবেষণা তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি এবং দি ইউনিয়নের সহায়তায় এই সেমিনারের আয়োজন করে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।
সেমিনারে গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন দি ইউনিয়নের কারিগরী পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য যুবদের উপর নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শনের জন্য তামাক কোম্পানির দ্বারা বিপুল অর্থ ব্যয় করার উদাহরণ রয়েছে। যা পরোক্ষভাবে তামাক কোম্পানির এক ধরনের প্রচারণা কৌশল।
গবেষণার উদৃতি দিয়ে তিনি জানান, ২০০৪ ও ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ৮৯ শতাংশ হিন্দি চলচ্চিত্রে তামাকের ব্যবহার দেখানো হয়েছে। ৬৭ শতাংশ চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রকে ধূমপান করতে দেখা গেছে। ৪১ শতাংশ চলচ্চিত্রে তামাকের ব্র্যান্ড দেখানো হয়েছে। আমাদের দেশেও পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ২০১৭ সালে দীপংকর দীপন পরিচালিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্র নির্মাণে তামাক কোম্পানি সহায়তা করেছে। এছাড়াও অসংখ্য চলচ্চিত্র, নাটক, ওয়েব সিরজ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি লঙ্ঘণের ফলে বিতর্কিত।
‘মহানগর’সহ সম্প্রতি আলোচিত বেশ কয়েকটি ওয়েব সিরিজে ধূমপানের দৃশ্য অত্যাধিক প্রদর্শনের সমালোচনাও উঠে আসে সেমিনারে। দাবি উঠে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘণ করে নির্মিত ও বির্তকিত চলচ্চিত্র, নাটক ও কলা-কূশলীদেরকে জাতীয় পুরস্কার না দেওয়ার।
সেমিনারে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থার (মানস) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্বা অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, মানুষের আচরণগত পরিবর্তনে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। চলচ্চিত্রের চরিত্রের দ্বারা নেতিবাচক দৃশ্য প্রচার (বিশেষ করে ধূমপানের দৃশ্য) পরিহার করা উচিৎ। কেননা, ধূমপানের মাধ্যমেই অন্যতম সামাজিক সমস্যা ‘মাদকাসক্তি’ শুরু হয়। মাদকাসক্তদের মধ্যে ৯৮ শতাংশ ধূমপায়ী। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম যেন তামাক ও অন্যান্য নেশায় আসক্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি। ওয়েব সিরিজের প্রতি তরুণদের আগ্রহ বেশি বিধায় এগুলো আইনের আওতায় আনতে হবে। তরুণদের নেশার জগতে ধাবিত করার মহোৎসব থামাতে হবে।
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি’র সভাপতি চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এমনভাবে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে যেন মানুষ ক্ষতিকর নেশায় আসক্ত না হয়। এর ক্ষতির দিক বেশি প্রচার করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ করা গেলে মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল’র সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, তামাক বা ধূমপানের কোন ভালো দিক নেই। সুতরাং, জাতির স্বার্থে আইন ও বিধি মেনে চলচ্চিত্রে ধূমপানের দৃশ্য বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। এতে রাষ্ট্রীয় আইন প্রতিপালনের পাশপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন সহজ হবে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মকবুল হোসেন, পিএএ। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচারিত নাটক, সিনেমা, ওয়েব সিরিজগুলোতে আইন লঙ্ঘণ করে প্রতিনিয়ত ধূমপানের দৃশ্য প্রচার করা হচ্ছে, এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
তামাকের পেছনে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে জানিয়ে তাদের বিরুদ্ধে লড়তে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তথ্য ও সম্প্রচার সচিব।
মানস-এর প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আবু রায়হানের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতি: সচিব) নুজহাত ইয়াসমীন, গণযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জসীম উদ্দিন, বাংলাদেশ ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান মুহ. সাইফুল্লাহ, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি’র সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, অভিনেত্রী নিপুন আক্তার, প্রত্যাশা’র সাধারণ সম্পাদক হেলাল আহমেদ প্রমুখ।
এ সময় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, এইড ফাউন্ডেশন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট, গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, শিল্পী সমিতি’র প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিভি/কেএস
মন্তব্য করুন: