• NEWS PORTAL

  • বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

যাত্রাশিল্পকে বাঁচাতে ৯ দিনের উৎসব, হাজারো মানুষের ভীড়

তুহিন আরন্য, মেহেরপুর

প্রকাশিত: ১৬:১০, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ফন্ট সাইজ
যাত্রাশিল্পকে বাঁচাতে ৯ দিনের উৎসব, হাজারো মানুষের ভীড়

সংগৃহীত ছবি

‘না না না আজ রাতে আর যাত্রা শুনতে যাবো না’- মান্নাদের কণ্ঠে বিখ্যাত গান। কিন্তু যাত্রার আকর্ষণ এমনই যে না গিয়েও পারা যাবে না। এক সময়ে টিকিট কেটে হাজার মানুষ রাত জেগে যাত্রা দেখেছে। তখন গ্রামবাংলার এক অবিচ্ছেদ্য বিনোদন ছিল যাত্রা। এখন এই পুরানো সেই ঐতিহ্যগত সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে বিনা টিকিটে যাত্রাপালার আয়োজন করতে হচ্ছে। মেহেরপুরে গত কয়েকবছর ধরে শীত এলেই এমন যাত্রাপালার আয়োজন হয়। এবারও ৯ রাত ব্যাপী যাত্রাপালা শুরু হয়েছে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে।

 

রাতের পর রাত জেগে বাংলার সাধারণ কৃষক, তাঁতী, কামার, কুমার, জেলে দেখেছে যাত্রায় কাহিনি। আর মেতেছে পালা গানের সুরে। কখনো ভক্তি, কখনো ভালোবাসা, কখনো দেশপ্রেম তাকে কাঁদিয়েছে, হাসিয়েছে। আবার সামন্ত রাজা, জমিদার ও অভিজাত শ্রেণির মানুষও যাত্রা দেখেছে। যাত্রাশিল্পে মেহেরপুরের ইতিহাস অনেক বর্ণাঢ্য। মৌসুমে দেশের গুণী যাত্রাশিল্পী এবং চলচিত্রের অভিনেতা অভিনেত্রীরা মেহেরপুরে গেছেন যাত্রাপালায় অভিনয় করতে। ৩০ বছর আগেও এখানে ৫০ থেকে ১০০ অথবা ২শ টাকা টিকিট কিংবা গেটপাশ কিনে সবশ্রেণীর দর্শকশ্রেতা যাত্রাপালা দেখতে ভীড় করতেন। 

পরবর্তীতে এই শিল্পের মধ্যে অভিনয়ের চাইতে অশ্লীল নৃত্যে ভর করলে ক্রমে শিল্পটি তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলে। শিল্পটি বাঁচাতে কার্যকর কোন উদ্যোগ না থাকায় এই শিল্পের সাথে যুক্ত শিল্পী যন্ত্রীরা আজ অন্য পেশা বেছে নিয়েছেন। অথচ- একসময় যাত্রা শিল্পী ও যন্ত্রীদের কদর এবং সম্মানী একটাই বেশি ছিল যে যাত্রা অভিনয়কে তারা পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিল। তখন হাজার হাজার টাকা বায়না দিয়ে শিল্পী আনতে হতো। তখন যাত্রাপালা করে বিভিন্ন ক্লাব সংগঠন আয় করে প্রতিষ্ঠান চালাতো। এখন সেই শিল্পকে বাঁচাতে এবং দর্শক আকৃষ্ট করতে বিনা টিকিটে যাত্রাপালার আয়োজন করতে হচ্ছে মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীকে। 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এই যাত্রাপালার শুভ উদ্বোধন করেন। প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক এই যাত্রানুষ্টান উপভোগ করতে পৌর শামসুজ্জোহা পার্কে ভীড় করছে। ৭ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত চলবে এই যাত্রাপালা।

প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক এই যাত্রানুষ্টান উপভোগ করতে পৌর শামসুজ্জোহা পার্কে ভীড় করছে

অংশনেয়া শিল্পীরা জানান, যাত্রাপালার পুরানো ঐতিহ্য ফিরাতে এবং অপসাংস্কৃতি রোধে আমরা আবার যাত্রা অভিনয়ে নেমেছি। 

আর দর্শকরা বলেন, এই ধরনের যাত্রাপালা দেখতে পেয়ে আমরা অনেক খুশি। আমরা চাই প্রতিবছর এই ধরনের যাত্রা উৎসব হোক।

মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, সমাজ থেকে অপসাংস্কৃতিক দুর করতে আমাদের এই যাত্রাপালার আয়োজন। আমরা প্রতি বছর এই ধরনের যাত্রাপালার আয়োজন করবো। 

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন,যাত্রাপালা আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। আমরা এটাকে লালন ও ধারন করি। অনেক দিন পর এমন ভাবে যাত্রাপালা দেখতে পেয়ে ভালো লাগছে। সেই সাথে যাত্রার অন্তরালে অশ্লিলতা আর যেন না ফিরে আসে সে আহবানও জানান স্থানীয় এই সংসদ সদস্য।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ডা. মোহাম্মদ মনসুর আলম, সরকার অনেকটা সচেতনভাবে সারাদেশে গ্রামীন ঐতিহ্যটা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। আমরা চাচ্ছি যে যারা অভিনয় করে বা এগুলো দেখার পর যারা আগ্রহী হবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের পৃষ্টপোষকতা করার নির্দেশনা আছে। 

মন্তব্য করুন: