• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

সিপিসি মিউজিয়াম: চীনের শত বছরের ইতিহাস

ইমরুল কায়েস, চীন থেকে

প্রকাশিত: ১৯:৫৮, ৬ জুলাই ২০২২

ফন্ট সাইজ
সিপিসি মিউজিয়াম: চীনের শত বছরের ইতিহাস

সুন্দর আবহাওয়া। ঝকঝকে রোদে চারদিকের পরিবেশ বেশ উজ্জ্বল। বেইজিং পৌঁছার পরদিন ২৯ জুন সকালে সিআইপিসিসি কর্মসূচির সাংবাদিকদের কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না-সিপিসি জাদুঘর দেখাতে নিয়ে যাওয়া হলো।

আমাদের আবাস ডিপ্লোম্যাটিক রেসিডেন্সিয়াল কমপাউন্ড থেকে জাদুঘরে পৌঁছাতে আধা ঘণ্টার মতো সময় লাগলো। করোনা সতর্কতা থাকলেও জাদুঘরে লোকজনের উপস্থিতি ভালো। ৫-৬ তলা ভবন। চীনে ১৯২১ সালে  কমিউনিস্ট পার্টি গঠন, এর বিকাশ, ১৯৪৯ সালের বিপ্লব থেকে শুরু করে ক্ষমতারোহণ এবং পরবর্তী বিভিন্ন সময়ের উন্নয়ন পর্যন্ত সবকিছু আছে এই জাদুঘরে। ভবনের প্রতিটি তলায় একেক সময়কার পার্টির অবস্থা বোঝাতে সে সময়ের স্থিরচিত্র দিয়ে সাজানো। স্থিরচিত্রগুলো অবশ্যই দুর্লভ। তাছাড়া সে সময়কার পার্টির কার্যে ব্যবহার্য জিনিসপত্রও স্থান পেয়েছে প্রদর্শনীতে। এসব জিনিসপত্রের মধ্যে আছে চেয়ার, টেবিল, চায়ের কাপ, প্লেটসহ নানা জিনিসপত্র। তাছাড়া নেতাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন মডেলের গাড়িও শোভা পাচ্ছে প্রদর্শনীতে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টির অস্ত্রধারণ ও যুদ্ধ, পশ্চিমাদের সঙ্গে নানা সময়ের যুদ্ধসহ সবকিছুর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস সংরক্ষণ করা হয়েছে এই জাদুঘরে। এমনকি সেসব যুদ্ধ ও আন্দোলনে যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তাও বাদ পড়েনি গ্যালারি থেকে। ধাপে ধাপে পার্টি কিভাবে বিকশিত হয়েছে, কার অবদান কি, কোথায় বৈঠক হয়েছে কোন কিছু বাদ যায়নি। ঘুরে ঘুরে এসব দেখতে লাগলাম আমরা। 

সব ক্যাপশন চাইনিজ ভাষায় লেখা। এজন্য বুঝতে অসুবিধা হয়। আমাদের সঙ্গে দ্বোভাষী ছিল। জাদুঘরের নিয়োগ করা কিছু গাইড আছে। তারা আগতদের বিভিন্ন তলা ঘুরে ঘুরে দেখান আর বর্ণনা করেন। তবে বর্ণনা করেন মান্দারিন অর্থাৎ চাইনিজ ভাষায়। আমাদের একজন প্রিয়দর্শী মহিলা গাইড সবকিছুর বর্ণনা করলেন এবং আরেকজন দ্বোভাষী ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিলেন। আমাদের পরিচালক হলেন ইউলিয়ে। তিনি সিআইপিপিসির এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দায়িত্বে। সবকিছু দেখার পর আমি তাকে ভাষার সমস্যার কথা বললাম। তাকে জানালাম অন্তত বিদেশি দর্শনার্থীদের কথা মাথায় রেখে চাইনিজের পাশাপাশি ইংরেজিতে ক্যাপশন ও বর্ণনা লিখলে ভালো হয়। তাহলে চীনের বাইরে থেকে আসা মানুষের জন্য এই জাদুঘরের বিস্তারিত জানতে ও বুঝতে সুবিধা হবে।

আমার উপলব্ধি হলো, একবার গিয়ে আসলে সবকিছু বোঝা সম্ভব না। পুরোটা বুঝতে হলে জাদুঘরটিতে কয়েকবার যেতে হবে। এক জায়গায় দেখলাম কার্ল মার্কস ও ফ্রেডেরিক অ্যাঙ্গেলসের পাশাপাশি দাঁড়ানো ম্যুরাল। কার্ল মার্কসের বহু উক্তিও আছে।  শেষ তলার পুরোটা শি জিনপিংয়ের শাসনামল, তার বায়োগ্রাফি, উক্তি এবং বক্তব্য দিয়ে সাজানো। এর আগ পর্যন্ত প্রায় সব জায়গায় আধুনিক চীনের প্রতিষ্ঠাতা মাও সেতুংয়ের অবদান, ভাষণ, উক্তি দিয়ে ভরা। এসব তলায় অবিরাম মাও সেতুংয়ের বাছাইকরা ভিডিও ভাষণ বেজে চলেছে। শেষ তলায় অবশ্য শি জিনপিংয়ের ভাষণও শোনা যায়। এর বাইরে আধুনিক চীনের রূপকার দেং শিওপিংয়ের খোলামেলা নীতি স্থান পেয়েছে। ১৯৭৯ সাল থেকে চীন নিজস্ব ধাঁচের সমাজতন্ত্র চালু করে ব্যাপক সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়। দেং শিওপিং সারাবিশ্বের জন্য চীনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। তখন থেকেই চীনের নয়া বিপ্লব শুরু হয়। দ্রুতগতিতে চীন অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও উন্নয়ন লাভ করে।

সিপিসি জাদুঘরটি চীনে তুলনামুলক নতুন। ১৪৭ হাজার বর্গমিটার জায়গার ওপর ২০২১ সালের মে মাসে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় একই বছরের ১৫ জুলাই। এরপর থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন হাজার দর্শক জাদুঘরটি পরিদর্শন করে। আগতদের বেশিরভাগ চাইনিজ। করোনা সতর্কতার  কারণে একসঙ্গে অনেক লোক ঢুকতে পারে না। বেইজিংয়ের উত্তরাংশের অলিম্পিক ভিলেজের কাছে এই জাদুঘর অবস্থিত। ৫০ হাজার লোকের এক হাজার দিনের প্রচেষ্টায় জাদুঘরটি নির্মিত হয়। ভবনটির আকার ইংরেজি এইচ অক্ষর বা চাইনিজ কং অক্ষরের মত। কং অর্থ শ্রমজীবী মানুষ। ২ হাজার ৬শর বেশি ছবি এবং ৩ হাজার ৫শ জিনিস দিয়ে প্রদর্শনীস্থান সাজানো।

সিপিসি জাদুঘরটি দেখলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির ইতিহাস যেমন জানা যাবে তেমনি চীনের গত একশ বছরের রূপান্তর সম্পর্কে জানা যাবে।

শেষ পর্যন্ত জাদুঘরে রক্ষিত পরিদর্শন খাতায় মন্তব্য লিখে বেরিয়ে এলাম আমরা।

বিভি/এনএ

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2