দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এক পরিবারের পুতিন

মা মারিয়া ইভানোভনা শেলোমোভার সঙ্গে পুতিন
২য় মহাযুদ্ধের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত এক পরিবারের সন্তান ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিস পুতিন।
দাদা ছিলেন মহামতি লেনিন ও স্টেলিনের ব্যক্তিগত রান্নাঘরের বিশ্বস্ত বাবুর্চি ও কমরেড।
তার বাবা ভ্লাদিমির স্পিরিনোভিস পুতিন ১৯৩০ তে সোভিয়েত নৌবাহিনীর সেনা হিসেবে সাবমেরিনে দায়িত্ব পালন করতেন। ২য় মহাযুদ্ধ শুরু হলে দুরন্ত সাহসিকতার জন্য তাকে সোভিয়েত সেনাবাহিনীর কমান্ডো ব্যাটালিয়নে নিযুক্ত করা হয়। সেখানে জার্মান বিরোধী একটি স্যুইসাইডাল আক্রমণে সফল হন তবে একটি পা হারানোসহ মারাত্মক আহত হলে হসপিটালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর সেরে উঠেন। তার দুই ছেলে একজন আগে মারা যায়, আরেকজন ২য় মহাযুদ্ধে লেনিনগ্রাদ অবরোধের প্রভাবে ডিফথেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। তারা লেনিনগ্রাদে (সেন্ট পিটাসবার্গ) বাস করতেন। তার নানী জার্মান সৈন্যদের হাতে মারা যায়। একমাত্র মামা সোভিয়েত সৈন্য হিসেবে যুদ্ধে নিখোঁজ হয়। মা মারিয়া ইভানোভনা শেলোমোভা শিল্প শ্রমিক ছিলেন। ২য় মহাযুদ্ধে স্বামীর থেকে দুরে থাকতে বাধ্য হয়ে সোভিয়েত সেনাবাহিনীতে কাজ করেন ও যুদ্ধে মারাত্মক আহত হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন প্রায়ই চুড়ান্তের দিকে, রাশিয়ার এই সৈন্য হসপিটাল থেকে মুক্তি নিয়ে ছুটি নিয়ে বাড়ি আসছিলেন। বাড়ির অদুরে একটি ট্রাকে জার্মানির বোমা হামলায় নিহতদের মৃতদেহ তোলার দৃশ্য দেখতে পান। কৌতূহলী হয়ে ট্রাকটির কাছে গিয়ে গাদাগাদি করে রাখা লাশের মধ্যে একটি মহিলার পা'য়ের স্যান্ডেল তাঁর নিকট পরিচিত মনে হয়। আরেকটু কাছে গিয়ে সে বুঝতে পারেন - ঠিক এমন একজোড়া স্যান্ডেল উনি তাঁর স্ত্রীকে কিনে দিয়ে যুদ্ধে গেছিলেন। কিন্তু লাশের চেহারার এমন বিকৃত অবস্থায় উনি নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, মৃত দেহটা তাঁর স্ত্রীর কিনা।
অতঃপর উনি দ্রুত বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে খোঁজাখুঁজি করেন, না পেয়ে আবার ট্রাকের নিকট ফিরে আসেন এবং লাশের সবকিছু ভালোভাবে পরীক্ষা করে গলায় পরিচিত দাগ দেখে তিনি নিশ্চিত হন, এই লাশ তাঁর স্ত্রীর। পরবর্তীতে উনি তাঁর স্ত্রীকে নিজে সৎকার করার ইচ্ছে প্রকাশ করলে কমান্ডার লাশটি তাঁকে হস্তান্তর করেন। সেই সৈনিক স্ত্রীর লাশ বাড়িতে নিয়ে গোসল করানোর সময় হটাৎ ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়ার বিষয়টি লক্ষ্য করেন এবং তাৎক্ষণিক দ্রুত কাছাকাছি ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে - ডাক্তারের প্রচেষ্টা এবং সৈনিকের সেবাযত্নে দীর্ঘ দুই মাস পর স্ত্রী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।
এই ঘটনার কয়েক বছর পর ১৯৫২ সালের ৭ ই অক্টোবর, নাটকীয়ভাবে সেদিনের বেঁচে যাওয়া ঐ মহিলা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। আর সেই সন্তানই আজকের বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
তার মা ও বাবা সোভিয়েত সরকারের দেয়া একটি ছোট ফ্লাটে থাকতেন। ফ্লাটের লগ কেবিনে ভ্লাদিমির ভ্লাদিমিরোভিস পুতিন এর জন্ম হয়। সে লেনিনগ্রাস ষ্টেট ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেন। এ সময়ে কার্ল মার্ক্স, ফ্রেডারিখ এংগেলস ও লেনিনের রচনাবলি স্টাডি করেন। তখনই জানতে পারেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনও একটি লগ কেবিনে জন্ম নিয়েছিলেন। পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ও লেফটেনেন্ট কর্ণেল হয়ে কেজিবিতে যোগ দেন। সোভিয়েত ভাঙনের পর প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেতসিনের নিরাপত্তা কর্মকর্তার দায়িত্ব পান। ইয়েলেৎসিন ক্ষমতা ত্যাগ করার সময় তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধামন্ত্রী করেন। সেখান থেকে প্রেসিডেন্ট ও মহাশক্তিধর হয়ে উঠা।
মন্তব্য করুন: