বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক সকালেই হওয়ার রহস্য উদঘাটন

প্রতীকী ছবি
তখনও সকাল হয়নি। ভোরের আলো সদ্য ফুটবে। পাখিরা জেগে উঠেই কিচির মিচির করছে। চারদিক শান্ত, স্নিগ্ধ। মানব সভ্য়তার অধিকাংশ এখনও গভীর ঘুমে। কিন্তু জানেন কি, এই মনোরম সময়ই হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষদের জন্য সবথেকে চিন্তার সময়।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত মানুষদের ভোর-রাতে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার হার সবথেকে বেশি। এ কারণেই আমরা প্রায়শই হার্ট অ্যাটাকে ঘুমের মধ্যেই মৃত্যুর ঘটনা দেখতে পাই।
কিন্তু এর পিছনে কারণ কী? তা, জানার জন্যই একাধিক বিশেষজ্ঞ গবেষণা করে কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। তাই, আপনার যদি হার্টে সমস্যা থাকে, কিছু কথা নিজের শরীরের সম্পর্কে ভালো করে জেনে রাখুন।
ব্রিগহাম অ্যান্ড উইমেন হসপিটাল এবং ওরেগন হেল্থ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটি এর কারণ হিসাবে আমাদের শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লককে ব্যাখ্যা করেছেন। বায়োলজিক্যাল ক্লক অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের মতো, শরীরেরও নির্দিষ্ট কিছু রুটিন আছে। সেই রুটিন অনুযায়ীই শরীর তার যাবতীয় কাজকর্ম করে। সাধারণত সকালবেলা আমাদের বায়োলজিক্যাল ক্লক অনুযায়ী শরীর খুব সতেজ থাকে, কারণ তখন আমাদের রক্তের প্রবাহ, হার্ট রেট ও অন্যান্য অঙ্গ খুব স্বতঃস্ফূর্ত থাকে। কিন্তু বেলা গড়িয়ে যত রাতের দিকে এগোয়, শরীর ধীরে ধীরে ঝিমোতে শুরু করে।
কারণ, বায়োলজিক্যাল ক্লক অনুযায়ী শরীর শিথিল হতে শুরু করে। রক্তের প্রবাহ কমিয়ে শরীরের অন্যান্য অঙ্গগুলিও বিশ্রামের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ঠিক তেমনই, ভোরের দিকে শরীর ঘুম থেকে উঠে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। রক্তের প্রবাহ বেড়ে যায়, ফলে রক্তের চাপও বেড়ে যায়। হৃদরোগে আক্রান্ত কোনও ব্যক্তির শরীর হঠাৎ এই উচ্চ চাপ সহ্য করতে না পারলেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন।
বিশেষজ্ঞরা ১২ জন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের উপর টানা দু’সপ্তাহ নানা পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। এর পাশাপাশি আরও একদল বিশেষজ্ঞ আরও সবিস্তরে এর ব্যাখ্যা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, ভোরবেলা হরমোন ক্ষরণের তারতম্যের কারণেও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা বেড়ে যায়।
তারা গবেষণা করে দেখেছেন, ভোরবেলা ৪ টের সময় মানুষের শরীরে সাইটোকাইনিন নামক একটি হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও বিভিন্ন অ্যাড্রিনালিন হরমোনের ক্ষরণের ফলে শরীরে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।
অর্থাৎ, আপনি যখন ঘুম থেকে উঠে স্বাভাবিক ছন্দে কাজ কারছেন, কিংবা তখনও ঘুম ভাঙেইনি তখন আপনার শরীর দিনে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে নিতে হার্ট অ্যাটাকের প্রস্তুতিও নিতে পারে। এই কারণে, যাদের হার্টে সমস্যা আছে ডাক্তার তাদের ধীরেসুস্থে ঘুম থেকে ওঠার পরামর্শ দেন। সূত্র: জিনিউজ
বিভি/এজেড
মন্তব্য করুন: