সাইবার সিকিউরিটি মাস অক্টোবর
সাইবার সিকিউরিটিতে নারীদের উপস্থিতি কম কেন?

সাইবার সিকিউরিটি ভেঞ্চারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মধ্যে বৈশ্বিক সাইবার সিকিউরিটি ওয়ার্কফোর্সের ২৪ শতাংশ জায়গা নারীরা দখল করবে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, যদিও এই পরিসংখ্যানে অনেক কম, তবে সাম্প্রতিক সময়ে সাইবার সিকিউরিটি শিল্পে নারীর উপস্থিতি আগের তুলনায় বাড়ছে।
ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক গবেষণা বলছে, বৈশ্বিক মোট প্রোগ্রামারের মাত্র ১২ শতাংশ নারী। যেখানে গুগল বার্ড বলছে, প্রযুক্তি শিল্পে বৈশ্বিক ওয়ার্কফোর্সেইউর ২৮ শতাংশ নারী এবং প্রযুক্তি বিশ্বে ২৫ শতাংশ নারী লিডারশীপ পজিশনে আছে।
পরিসংখ্যান যেই হোক, খোলা চোখেও বিশেষ করে সাইবার সিকিউরিটি খাতে নারীদের উপস্থিতি কম। এর পেছনে অনেক কারন দেখেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষায় এবং প্রশিক্ষনের কম সুযোগ, উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া, পর্যাপ্ত সময় না থাকা, বৈষম্যসহ নানান বিষয়কে দায়ী করছেন তারা। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন এমন ক’জন নারীর সাথে কথা বলতে চাই।
সোহানা পারভিন, ডাটাবেজ অ্যাডমিনিষ্ট্রেটর হিসাবে কাজ করছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে। সম্প্রতি তিনি জাতীয় সাইবার ড্রিলে অংশগ্রহন করেন।
তিনি বলেন, আইটি সেক্টরে মেয়েদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে বাড়লেও সাইবার সিকিউরিটিতে সেভাবে বাড়ছে না। মেয়েদের উপস্থিতি না বাড়ার পেছনে কিছু কারনও দেখালেন তিনি।
তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটিতে ক্যারিয়ার গড়তে মেয়েদের ইচ্ছা শক্তি থাকতে হবে। যা তাদেরকে তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।সার্টিফিকেশন অর্জন ও একটা বড় বাঁধা বলে মনে করেন তিনি। একটা নির্দিষ্ট সার্টিফিকেশন অর্জন করতে অনেক সময় লাগে, যা একটা মেয়ের পক্ষে অর্জন করা সাধারণত খুব কমই সম্ভব হয়ে পড়ে।
মেয়েদের ক্ষেত্রে আরো একটি বড় সমস্যা হলো সময়। সাইবার সিকিউরিটি সংক্রান্ত কাজগুলো সাধারণত ২৪/৭ মনিটরিং করতে হয় তাই সাধারণত পরিচালনা বোর্ড মেয়েদের এই কাজে নিযুক্ত করতে দ্বিধা বোধ করেন। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সমর্থন ছাড়া কারো পক্ষে ক্যারিয়র গড়া সম্ভব নয়।
মেয়েদের এই শিল্পে সংযুক্ত করতে তাদের ভয় কাটাতে হবে, তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অফিসিয়াল ডিসক্রাইমিনেশনের ব্যাপারটাও দেখতে হবে।
সুপ্রিয়া ইমন স্বাতী, ঢাকা ব্যাংকের ইনফরমেশন টেকনোলজি বিভাগে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন। সাইবার সিকিউরিটি শিল্পে নারীর কম উপস্থিতির কারন হিসাবে তিনি সময় ব্যবস্থাপনাকে বড় একটি ফ্যাক্টর বলে মনে করেন। সাইবার সিকিউরিটি শিল্পে রিয়েল টাইম আপডেট থাকতে যেভাবে সময় ম্যানেজ করতে হয় তা একজন নারীর পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য।
তিনি বলেন, আমাদের টেকনিক্যাল সেক্টরে এমনিতেই নারীর সংখ্যা কম, সেখানে ছেলেদের সাথে পাল্লা দিয়ে কাজ করাটা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটও এখনো পুরোপুরি নারী বান্ধব নয় বলেও মনে করেন তিনি। পুরো পরিবেশটাই নারী বান্ধব করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মেয়েদের জন্য ট্রেনিং সহজলভ্য করা, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ নিয়োগরে ক্ষেত্রে ছেলে মেয়ের মধ্যে বৈষম্যের অবসান করতে হবে।
তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা গেছে সার্টিফিকেট না থাকলেও বাস্তবিক অভিজ্ঞতা থাকে, কিন্তু সার্টিফিকেট না থাকায় অভিজ্ঞতার কোনো মূল্যায়ন করা হয় না।
শায়লা শারমিন, কাজ করেন প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ইনফরমেশন সিকিউরিটি ডিভিশনে সাইবার সিকিউরিটি আর্কিটেক্ট হিসাবে। তার মতে, টেকনিক্যাল ইন্ড্রাস্ট্রিতে এমনিতেই মেয়েদের সংখ্যা কম। আইটিতে সংখ্যা বাড়লেও সাইবার সিকিউরিটিতে পেশাটা অনেকটা চ্যালেঞ্জিং। এই সেক্টর নিয়ে এখনো যথেষ্ট সচেতনতার অভাব রয়েছে, চাকরির স্কোপও কম।
তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি টিমে নারী সদস্য নিয়ে ম্যানেজম্যান্ট ভাবতে থাকে, তারা এই চ্যালেঞ্জিং পেশার কাজ করতে পারবে কি না।তিনি বলেন, আমার টিমকে আমি লিড দিচ্ছি, অফিস যখন বুঝেছে যে হয়তো আমি সঠিকভাবে টিম লিড করতে পারবো তখনই দায়িত্বটা আমাদের উপর দিয়েছে, তাই কোনো নারী কর্মীকে চেষ্টা করতে হবে। ঠিক তখনই পরিবর্তন টা আসবে।
সাইবার সিকিউরিটি সেক্টরে নারীদের উপস্তিতি বাড়াতে ইচ্ছাশক্তি বাড়ানো, সচেতনতা বাড়নো, এবং বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি প্রতিষ্টানের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, সার্টিফিকেশন এখন অ্যাভেইলেবল। মোটকথা, সাইবার সিকিউরিটি হলো মাইন্ডসেট, ঠিক যেভাবে আপনি সেট করবেন, সেভাবেই এগিয়ে যাবেন।
সাইবার সিকিউরিটিতে নারীদের উপস্তিতি বাড়াতে উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষন, সহযোগিতা, মেন্টরিং, জেন্ডার স্টেরোটাইপ পরিবর্তন, তাদের পেশায় যুক্ত করন নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া তাদের উৎসাহিত করতে নিয়মিত ওয়ার্কসপ, সেমিনার, ট্রেনিং, উপবৃত্তি, লিডারশীপে অর্ন্তভূক্তকরণ মোট কথা তাদের এই শিল্পে স্বাগত জানাতে হবে বলে মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী সাইবার সিকিউরিটিতে নারীদের উপস্থিতির শতাংশ এখনোও কম।
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: