ইলন মাস্ক, আবিষ্কারর নেশায় এক খেপাটে চরিত্র: দূরদর্শী উদ্যোক্তার অসাধারণ জীবন

ইলন মাস্ক, নামটি শুনলেই অনেকের মনে ভেসে ওঠে অসাধারণ উদ্ভাবন, মহাকাশ যাত্রা এবং টেকনোলজির এক নতুন যুগ। দক্ষিণ আফ্রিকায় জন্মগ্রহণ করা এই ব্যক্তিটি আজকের বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। তিনি কেবল একজন উদ্যোক্তা নন, বরং একজন দূরদর্শী ভবিষ্যৎবাদীও। তাঁর উদ্ভাবনগুলি মানবসভ্যতাকে এক নতুন দিগন্তে নিয়ে যেতে পারে বলে অনেকে বিশ্বাস করেন।
স্পেসএক্স, মহাকাশ প্রযুক্তির এক ব্র্যান্ডিং নাম। মহাকাশ ভ্রমণকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করার লক্ষ্যে তিনি স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থাটি মহাকাশ যান, রকেট এবং উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করে। আজকের দিনে মহাকাশ উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে অন্যতম শীর্ষ সংস্থা। ফ্যালকন হেভি রকেটের মতো উদ্ভাবনগুলি মহাকাশ অভিযানকে আরও সহজ করে তুলছে।
টেসলা: বৈদ্যুতিক গাড়ির ক্ষেত্রে টেসলা একটি বিপ্লব ঘটিয়েছে। পরিবেশবান্ধব এবং উন্নত প্রযুক্তির গাড়ি তৈরি করে টেসলা, গাড়ি শিল্পকে এক নতুন দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং স্বায়ত্তশাসিত গাড়ির ক্ষেত্রেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
নিউরালিংক: মানুষের মস্তিষ্ক এবং কম্পিউটারকে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে গড়ে তোলা নিউরালিংক, ভবিষ্যতে চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে পারে মাস্কের এই আবিষ্কার। এটি ভবিষ্যতে অনেক সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি হিসেবে বিবেচিত হবে মনে করা হয়।
স্টারশিপ: মঙ্গলে মানব বসতি স্থাপনের লক্ষ্যে তৈরি করা স্টারশিপ, মহাকাশ যাত্রার ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে।
এক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে ধনকুবের ইলন মাস্ক দুই দরজা বিশিষ্ট একটি রোবোট্যাক্সি প্রদর্শন করেছেন । চালকবিহীন এই ট্যাক্সিতে থাকছে না কোনো স্টিয়ারিং হুইল বা পেডাল। রোবোট্যাক্সির পাশাপাশি একটি রোবোভ্যানেরও ঘোষণা দেন মাস্ক।
মাস্ক 'সাইবারক্যাব' নামের এই রোবোট্যাক্সিতে চড়ে মঞ্চে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, ২০২৬ সাল থেকে এর উৎপাদন শুরু হবে এবং দাম হবে ৩০ হাজার ডলারের কিছু কম, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৬ লাখ টাকার কাছাকাছি।
মাস্ক জানান, এই ট্যাক্সি চালাতে মাইল প্রতি ২০ সেন্ট করে খরচ হবে। ইনডাকশন প্রক্রিয়ায় এই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোকে চার্জ দেওয়া যাবে। যার ফলে কোনো তারের প্রয়োজন পড়বে না। তিনি জানান, তার সাইবারক্যাব
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ক্যামেরা নির্ভর। যার ফলে এতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানের রোবোট্যাক্সির মতো অন্যান্য হার্ডওয়্যারের প্রয়োজনীয়তা নেই। মাস্কের ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আছে চালকবিহীন টেসলা ট্যাক্সি সুবিধা চালু করা। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মালিকানায় থাকা ট্যাক্সিগুলোকে যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে কল করতে পারবেন। গন্তব্য মিলে গেলে নিমিষেই যাত্রীর দোরগোড়ায় চলে আসবে সাইবারক্যাব রোবোট্যাক্সি।
খেপাটে এই মানুষটির সাফল্যের সহস্য কি? অনেকেই বলেন, উদ্যমী, অবিরাম কাজের স্পৃহা, ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা, দূরদর্শিতা, কঠিন পরিশ্রমই তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।
সম্প্রতি আরো নজর কাড়া সাফল্য ধরা দিয়েছে মাস্কের ঝুলিতে। এবার ইলন মাস্কের এই কোম্পানিটির স্টারশিপ রকেটের একটি অংশ এই প্রথমবার লঞ্চ প্যাডে ফিরে এসেছে, যা বিশ্বে এবারই প্রথম। এরই মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়লো মাস্কের মহাকাশ যান স্পেসএক্স ।
পাঁচবারের প্রচেষ্ঠায় সফল হয়েছে স্পেসএক্স। এর আগে চারবার এ কাজে ব্যর্থ হয়েছে মহাকাশ নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্বে তৈরি হওয়া এ যাবৎকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট স্টারশিপের দুটি অংশ। একটি হচ্ছে ‘সুপার হেভি বুস্টার’ নামের তরল গ্যাসের জ্বালানিচালিত রকেট। আর অপর অংশটি হল ‘স্টারশিপ’ নামের মহাকাশযান- যা এই সুপার হেভি বুস্টারের ওপর বসানো আছে। স্টারশিপ রকেট ১০০ টনের বেশি যন্ত্রপাতি বা ১০০ জন আরোহী বহন করতে পারে। আর সুপার হেভি বুস্টারে আছে ৩৩টি ইঞ্জিন, যা মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার আর্টিমেস রকেটের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিশালী।
ইলন মাস্কের স্বপ্ন হল, অন্যগ্রহে মানুষের বসতি স্থাপন করতে যাওয়ার উপযোগী রকেট তৈরি করা। যা বার বার ব্যবহার করা যাবে এবং একেকবারে শ’খানেক মানুষকে মঙ্গলগ্রহ ও চাঁদে নিয়ে যাওয়া যাবে। তাই এর উপযোগী করেই বানানো হয়েছে স্টারশিপ রকেটকে।
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: