• NEWS PORTAL

  • সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

Inhouse Drama Promotion
Inhouse Drama Promotion

অনলাইনে ফোন কিনে ভয়ঙ্কর বিপদের গল্প

অনলাইনে মোবাইল কিনে খাটলেন ২ মাসের জেল, দিলেন ১৫ লাখ টাকা জরিমানা

প্রকাশিত: ১৬:০৬, ১৮ জুন ২০২২

ফন্ট সাইজ
অনলাইনে মোবাইল কিনে খাটলেন ২ মাসের জেল, দিলেন ১৫ লাখ টাকা জরিমানা

"বিক্রয়.কম থেকে মোবাইল কিনার আগে হাজারবার ভেবে চিনতে কিনবেন সবাই,, আপনি বিপদে পড়বেন আপনার সব কিছু খোয়াবেন মান সম্মান টাকা পয়সা, কিন্তু বিক্রয়.কম কে তখন পাশে পাবেন না। আজ আমি বিক্রয় থেকে নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে চোরাই ফোনের মামলার ২ মাস জেল খাটা আসামি। ঘটনার সূত্রপাত ২০২১ এর ডিসেম্বরে। আমার বাসা চিটাগাং রোড নারায়ণগঞ্জ, চিটাগাং রোড এর অতি পরিচিত কাশসাফ শপিং সেন্টারে আমি buy sell exchange এর মোবাইলের শপ নেই।

১৪ ডিসেম্বর বিক্রয়. কম এ চাষাড়াতে আমার বন্ধু একটি oppo A95 মোবাইলের এড দেখে আমাকে জানায়, আমি জিজ্ঞেস করলাম বক্স এবং ক্যাশ মেমো আছে কিনা, বললো সবকিছু আছে ১০ দিন ব্যবহার করা phonomania শোরুম থেকে কিনা, সাধারণত বক্স আর ম্যামো থাকলে বাংলাদেশের যে কোন দোকানদার সেই ফোন টা কিনে রাখে, আমিও তাই করলাম, ফোনের সাথে ফুল বক্সসহ phonomania নামের মোহাম্মদপুর এর একটি জনপ্রিয় মোবাইল শপের সিল সহ ক্যাশ মেমো ছিলো সবকিছু যাচাই-বাছাই করে আমি মোবাইলটি কিনি।

ঠিক ২২ ডিসেম্বর টাংগাইল জেলার ভুয়াপুর নামক জায়গা থেকে পুলিশ এসে আমাকে নিয়ে যায় উক্ত মোবাইল তাদের চুরি গেছে বলে। আমি সাথে সাথে তাদের সকল প্রমান দেই ফুল বক্স সাথে ক্যাশ মেমো সহ আমি ফোন কিনেছি। এমন কি যার থেকে কিনেছি তার ও নাম্বার দেই এবং এও বলি যদি চোরাই হয়ে থাকে তাহলে যে দোকানের ক্যাশমেমো সেই দোকানে রেড দেন। তাদের ক্যাশমেমোর সিরিয়াল নাম্বারটা মিলিয়ে দেখেন তাহলেইতো সব প্রমান হয়ে যায়। পুলিশ তো নাছোর, বান্দা তাদের কথা হলো এত কিছু দেখার আমাদের টাইম নাই। তোমার কাছে পাইছি বাপু তুমি চুরি করছো। তারপর বললাম স্যার আমার মোবাইলটা ট্রাক করে দেখেন আমার জীবনে আমি কোনদিন টাংগাইল গেছি কিনা। কিনবা টাংগাইলের কোন মানুষের সাথে কোন দিন কথা বলছি কিনা? কোন কথাই শুনলো না।।

নারায়ণগঞ্জ থেকে রাত ১০টায় টাংগাইলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম পুলিশ ভ্যান এ। শীতের সময় ছিলো কন কনে শীত। তার উপর এমন এক অজপাড়া গাও ভুয়াপুর ইতিপূর্বে আমি এই নামের যে একটা জায়গা আছে তাও জানতাম না। থানায় নিয়ে শুরু হলো আরেক নতুন কাহিনি। তাদের ওখান থেকে নাকি শোরুম চুরি হইছে। ১১০টা মোবাইল ছিলো ৯৩টার আইএমইআই পাওয়া গেছে। যদিও আমি যে মারকেট এ ছিলাম এত বড় একটা মারকেট এও কারো দোকানে ১০০টা মোবাইল নাই। সেখানে ভুয়াপুর নামক একটা গ্রাম সেটাও কোন শপিংমল না রাস্তার পাশে একটা দোকান সেখানে ১১০টা স্মার্টফোন তাও সব দামিদামি মডেল। কিভাবে আসলো সেটা আমার বোধগম্য না বিষয়টা কোনভাবেই বিশ্বাস যোগ্য না।

যাইহোক তাদের ১১০ ফোন তারমধ্যে আমার কিনা এ ৯৫ একটা। এখন সব চোরাই ফোনই নাকি আমার কাছে আছে। এ বলে নির্মম নির্যাতন শুরু করে দিল। তখন রাত ৩টা বাজে ফজর পর্যন্ত চেস্টা করলো আমাকে দিয়ে স্বীকার করানোর জন্য। তারপর বললো হয় ১১০টা মোবাইল ফিরত দিব না হয় ১৫ লক্ষ টাকা তাদের দিব বাদিকে তারা দিবে। আর এই পুরো সময়টা জুড়ে বাদি থানার মধ্যেই ছিলো আর হাসতেছিলো। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে এমন এক বিপদে পড়বো তা কোন দিন স্বপ্নেও ভাবি নাই। আমার ১৪ গুস্টির কেউ কোন দিন থানায় জায় নাই। বাড়ী থেকে সবাই চিন্তায় শেষ। টাংগাইল কোথায় এটাই কেউ জানে না আমার বাসার মানুষ। আমাকে গুম করে দিল না কি করলো কেউ জানে না। ২ দিন থানার হাজতে আটক রাখলো আর ভয়ভীতি দেখালো  অন্যান্য মামলাতেও নাম দিয়ে দিবে মোবাইল কিনবা টাকা না দিলে। আর হাজতের অবস্থা এমন ছিল যে একটা কুকুর ও অখানে থাকার মত পরিবেশ নাই। বাসার পা মুছার মত চটের ছালার মধ্যে ঘুমাতে হয় আর টয়লেট সেটা দেখলেও যে কেউ বমি করে দিব এত নোংরা। অতপর দুদিন পর কোর্টে চালান দিল  সেখান থেকে টাংগাইল কারাগারে প্রেরণ করা হলো। সে এক আজব দুনিয়া। দুনিয়ার সব ভয়ংকর সন্ত্রাসীদের দেখা সেখানে পাওয়া যায়। ৭ দিন একটা ঘরে বন্দী করে রাখলো কোয়ারেন্টাইনের নামে। এক রুমে ৭০ জন করে, এক কাইতে ঘুমাতে হয়, নাড়াচাড়ার কোন সুযোগ নাই। 

এর মাঝে আসলো আরেক মুসিবত। খাবার হিসেবে দেয় শুধু মুলা আর শালগম গরম পানিতে শিদ্ধ করা তরকারি। আর ভাত দেয় মোটা চাল যার মধ্যে পচা গন্ধ আর পোকা থাকে। আর এক বেলা মাছ দেয় পাংগাস মাছ এত ছোট পিস যেটা দেখলে মনে হবে দুনিয়াতে সবচেয়ে দামি মাছ পাংগাস। অতপর ৭ দিন পর আবার কোর্টে জামিন শুনানি হয়। সেখানে পুলিশ এসে রিমান্ড চায়। ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব জেলগেট জিজ্ঞাসা বাদ দেয়। মামলার আয়ো এসে আমাদের জেলগেটে কিছুই জিজ্ঞেস করে নাই। কিন্তু আদালতে প্রতিবেদন দেয় যে আমরা সিকার করেছি ৯৩টা মোবাইল আমাদের কাছে আছে। অত:পর আবার রিমান্ড চায় পুলিশ। এবার বিচারক ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। একটা খুনের মামলাতেও ২ বার রিমান্ড দেয় না।

কিন্তু আমাকে এই মিথ্যা বানোয়াট চুরির মামলায় দুইবার রিমান্ড দেয়,। এরপর তো থানায় নিয়ে সে কি অত্যাচার হাত পা বেধে বেধড়ক মার। ভাই পুরা জীবনটাই শেষ করে দিছে। ২৩ হাজার টাকার একটা মোবাইল ১৮ হাজার টাকায় কিনি আর সেটার খেসারত দেই থানা পুলিশ উকিল সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ টাকা দিয়ে। সেটাও ২ মাস জেল খাটার পর। কি আমার অপরাধ ছিলো, ২ মাস আমার মোবাইলটা পুলিশের কাছে ছিলো তারা সকলভাবে যাচাই করে দেখছে আমি কোন অপরাধী নই। তবুও এই মামলা থেকে মুক্তি নাই।

প্রতিমাসে নারায়ণগঞ্জ থেকে টাংগাইল গিয়ে হাজিরে দিতে হয়। এদিকে আমার ব্যবসা দোকান সব শেষ। সবকিছু ছেড়ে দিতে হয়। আজ আমি পথের ফকির। একটি মোবাইল কিনে আজ জীবন টা নরক হয়ে গেছে। আর কিভাবে যাচাই করে আপনারা পুরাতন ফোন কিনবেন। বক্স আছে ক্যাশমেমো আছে তবুও যদি বলে সব কিছুই ফেক। তাহলে সেটা আমি সাধারণ মানুষ আমার পক্ষে যাচাই করার সুযোগ কোথায়? কিভাবে আপনি নিরাপদ থাকবেন যদি একটা ফোন কিনে শুনেন আপনি মাডার কেসের আসামি?? আর এত প্রযুক্তি এত টেকনোলজি থেকেই বা লাভ কি যদি পুলিশ প্রকৃত আসামি নাই ধরে? যার কাছে মোবাইল পেলো সেই আসামি?? জাতির বিবেকের কাছে আমার এই প্রশ্ন? আর কোন আইনের লোক থাকলে প্লিজ আমাকে সাহায্য করুন এই বিপদ থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারি???"

(লেখাটি সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া)
 

বিভি/এসআই

মন্তব্য করুন:

সর্বাধিক পঠিত
Drama Branding Details R2
Drama Branding Details R2