সেকেন্ডে ২৬ মিলিয়ন এইচটিটিপিএস ডিড্স অ্যাটাক
আশংঙ্কাজনক হারে ২০৩ শতাংশ বেড়েছে ডিডস অ্যাটাক

বিশ্বে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সাইবার হামলা, বিশেষ করে ডিডস (DDoS) অ্যাটাক। সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন ডেলিভারি সলিউশন ফার্ম ‘রেডওয়্যার’ কর্তৃক প্রকাশিত গ্লোবাল থ্রেট ইন্টেলিজেন্টস এর ফার্স্ট হাফ প্রতিবেদন ২০২২ থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
ডিডস শব্দটি আসলে একটি লম্বা লাইনের সংক্ষিপ্ত রুপ, এর সম্পূর্ণ রুপ হলো ডিসট্রিবুটেড ডিনায়াল অফ সার্ভিস (Distributed Denial of Service)। এক কথায় বলতে গেলে, এটি এমন একটি সাইবার অ্যাটাক যার ফলে কোন ওয়েবসাইটকে অ্যাটাক করা হলে সেই সাইটটি যেকোনো ব্যবহারকারীকে অ্যাক্সেস প্রদান করতে বিরত থাকবে—অর্থাৎ ওয়েবসাইটটি কিছুতেই আপনার ব্রাউজারে লোড হবে না।
রেডওয়্যারের থ্রেট ইন্টেলিজেন্স এর প্রধান পেসকেল গেনেছ বলেন, ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে ডিডস অ্যাটাক যে হারে বেড়েছে তা অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় আশঙ্কাজনক। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং এশিয়ায় বড় মাত্রায় ডিডস অ্যাটাকের টার্গেট পয়েন্ট।
সিকিউরিটিব্রিফ.এশিয়া তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাস সন্দেহজনক ডিডস অ্যাটাকের পরিমান ২০৩ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে ডিড্স অ্যাটাকের আরো একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ২০২১ সালে পুরো বছরের তুলনায় ২০২২ সালে প্রথম ছয় মাসে ডিড্স অ্যাটকের পরিমান ৬০ শতাংশ বেড়েছে।
রেডওয়্যার বলছে, ২০২২ সালে মে মাসে তারা ২.৯ পিবি’র একটি ভলোমেট্রিক কার্পেট-বোম্বিং অ্যাটাক (volumetric carpet-bombing attack) কে প্রশমিত করেছে। আক্রমণটি ৩৬ ঘন্টাব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল, আট ঘন্টারও বেশি সময় ধরে ৭০০ জিবিপিএস -এর বেশি আক্রমণের হার সহ ১.৫ টিবিপিএস-এ পৌঁছেছিল।
আক্রমনের সময়, মাত্রা এবং আক্রমনের স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে আক্রমণটিকে রেকর্ড ব্রেকিং বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
হ্যাকার নিউজের ১৭ আগস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেডআলফা (চীন সরকার কর্তৃক স্পন্সরকৃত থ্রেট অ্যাক্টিভিটি গ্রুপ) বিশ্বব্যাপী মানবিক সংস্থা, থিংক ট্যাংক এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্য করে মাল্টিলেয়ার ম্যাস ক্রিডেনশিয়াল থেফট ক্যাম্পেইন (multi-year mass credential theft campaign) পরিচালনা করছে।
এই কার্যক্রম পরিচালনায় গ্রুপটি ইমেইল অ্যাক্সেস এবং ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন যোগাযোগে হস্তক্ষেপ করে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ক্লাউডফ্লেয়ার সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ সালে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে বিশ্ব রেকর্ড পরিমান ডিড্স অ্যাটাক দেখেছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এই আক্রমনকে আরো জোড়দার করেছে।
ক্লাউডফ্লেয়ার বলছে, তাদের নেটওয়ার্কে সেকেন্ডে ২৬ মিলিয়ন এইচটিটিপিএস ডিড্স অ্যাটাক (26 million request per second HTTPS DDoS attacks) হয়েছে।
বৈশ্বিক ডিড্স আক্রমনের এই প্রেক্ষাপটে দেশের কি পরিমান আক্রমন হয়েছে বা সম্ভাবনা কতটুকু? এই বিষয়ে দেশের একাধিক সাইবার বিশেষজ্ঞ বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে সাইবার হামলা বেড়েছে। দেশেও সাইবার হামলার এ বিষয়টি কোন ভাবেই উড়িয়ে দেয়া যায় না।
সাইবার দৃষ্কৃতিকারীরা বিশেষ করে দেশের ব্যাংক, সরকারি প্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে। অসমর্থিত কিছূ সুত্র বলছে, দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে আক্রমনের স্বীকার হয়েছে। তবে বিষয়টি এখনও তদন্তনাধীন।
এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে বড় ধরনের বিপদের শঙ্কা রয়েছে বলে মত একাধিক সাইবার বিশেষজ্ঞের। সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যাক্তি পর্যায়ে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উপরও জোড় দেন কেউ কেউ। এছাড়া ব্যাংকগুলোতে দক্ষ কর্মী বাড়ানো, বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স কোর্সে সাইবার সিকিউরিটি বিষয়ক গ্রোগ্রাম যুক্ত করা, নিয়মিত আপ টু ডেট ডিভাইস এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে জ্ঞান বাড়াতে নিতে হবে কার্যকরি পদক্ষেপ।
বিভি/এসআই
মন্তব্য করুন: