চীন ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় উদ্বিগ্ন আমেরিকা?

চীন সরকার রাশিয়ার সঙ্গে তার প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করছে বলে সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে। আর এটি স্বাভাবিক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার দ্বিপাক্ষিক কাঠামোর মধ্যে ঘটছে বলে জানিয়েছে বেইজিং। এদিকে রাশিয়াকে চীনের সামরিক সহায়তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা বেইজিংয়ের ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
চীন বারবার যুক্তরাষ্ট্রকে তার অভ্যন্তরীণ বিষয়ের পাশাপাশি তার বিদেশ নীতির বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করতে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছে। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে এবং তাদের বাজেটের ওপর চাপ সৃষ্টির কারণে আমেরিকা ও তার মিত্ররা এখন গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার সাফল্যের কারণ হিসেবে আমেরিকা ও তার মিত্ররা এখন চীন ও অন্যান্য দেশকে দায়ী করে তাদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছে। তাই মে মাসে জাপানে G7 নেতাদের শীর্ষ বৈঠকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি তারা ইউক্রেনকে আরও সামরিক সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ হি সিং সো এ সম্পর্কে বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টার পাশাপাশি চীনকেও দুর্বল করার নীতি অনুসরণ করছে আমেরিকা। প্রকৃতপক্ষে, চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দ্বৈত নীতি অনুসরণ করে যা রাশিয়া এবং চীনের পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে এমন দেশগুলোকে টার্গেট করে থাকে। এদিকে চীন ও অন্যান্য স্বাধীন দেশ তাদের আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী রাশিয়ার সাথে তাদের সম্পর্ক রক্ষা করে আসছে।
এই কারণে, আমেরিকান মিডিয়া সম্প্রতি দাবি করেছে যে রাশিয়ান শুল্ক তথ্য থেকে দেখা যায় যে চীনা সরকারের সামরিক ঠিকাদাররা রাশিয়ায় ন্যাভিগেশন সরঞ্জাম, ফাইটার যন্ত্রাংশ, ড্রোন এবং অন্যান্য পণ্য সহ সামরিক কাজে ব্যবহারের জন্য আরো অনেক পণ্য পাঠিয়েছে। এদিকে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র "মাও নিং" এর মতে, রাশিয়াসহ বিশ্বের সমস্ত দেশের সাথে চীনের স্বাভাবিক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা রয়েছে। চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে আমেরিকা বেইজিংয়ের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে এবং সম্ভবত নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের অজুহাত খুঁজছে।
ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্ণিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজেকে এবং তার মিত্রদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে শক্তিহীন বলে মনে করে। তারা রাশিয়ার সামরিক শক্তিকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন দেশকে অভিযুক্ত করে। অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ প্রদানের পাশাপাশি বোমা হামলার শেষ ঘটনায় এই দেশকে গুচ্ছ বোমা সরবরাহ করেছে।
আন্তর্জাতিক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ "ড্যানিয়েল কোওয়ালিক" বলেছেন, আমেরিকা ও তার মিত্ররা কল্পনাও করেনি যে ইউক্রেন যুদ্ধ তাদের জন্য চরম হতাশা বয়ে আনবে। কারণ এই পরিস্থিতি ইউরোপীয় দেশগুলোর অর্থনীতিতে বিশাল আর্থিক বাজেট চাপিয়ে দিয়েছে এবং এর ফলে এসব দেশে জনবিক্ষোভের সৃষ্টি করছে। আর এ বিষয়টি আমেরিকা এবং তার মিত্রদের ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে আরও সমস্যায় ফেলেছে।
যাই হোক ইউক্রেন সংকট সমাধানে সহায়তা করার জন্য চীন ১২-দফা শান্তি প্রস্তাব করেছিল যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধিতা করেছিল। এদিকে, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে এ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে এক বৈঠকে তাদের সরকারের সীমাহীন বন্ধুত্বের ঘোষণা করেছিলেন। তাই ইউক্রেন যুদ্ধে নিরপেক্ষতা ঘোষণা করা সত্ত্বেও বেইজিং জাতিসংঘে রাশিয়ার নিন্দা করার পশ্চিমা প্রচেষ্টাকে বাধা দিয়েছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অবস্থানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।#
বিভি/ এসআই
মন্তব্য করুন: