গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর!

জিম্মি মুক্তির প্রশ্নে এবার গাজা যুদ্ধবিরতি প্রত্যাহারের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। এমন পরিস্থিতিতে জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠকেও গাজা দখলের প্রশ্নে টলেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথের ঠিক আগের দিন বহু প্রত্যাশিত গাজা যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও পাল্টাপাল্টি হুমকিতে আবারও মুখ থুবড়ে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর জন্য চাপ দিয়ে প্রশংসা কুড়ানো ট্রাম্পই এবার আলোচনার বদলে উসকানি দিয়ে বানচালের মুখ্য ভূমিকায়। উসকানির মোক্ষম ফায়দা নিতে একটুও কার্পণ্য করেননি ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ফিলিস্তিনিদের ওপর আবার বর্বর গণহত্যা শুরুর। আরব নেতাদের জোর তৎপরতায়ও সাড়া মিলছে না বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্রের।
নেতানিয়াহু হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি শনিবারের মধ্যে হামাস জিম্মিদের ফেরত না দেয়, তাহলে অস্ত্রবিরতি শেষ হবে। হামাসের চূড়ান্ত পরাজয় না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে। এজন্য ইসরাইলি বাহিনী গাজার ভেতরে ও চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে আর এই প্রস্তুতি খুব শিগগিরই শেষ হবে।
এই হুঁশিয়ারির আগেই দক্ষিণাঞ্চলে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের বিবৃতি দিয়েছে ইসরায়েলের সেনা সদর। বলা হয়েছে, যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে সেনারা। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইসরাইলকে পাল্টা হুমকি দিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বাহিনী। সতর্ক করে বলা হয়েছে, যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলা হলে ইয়েমেন থেকে পাল্টা আঘাত হানা হবে ইসরাইলের তেল আবিবে।
মূলত এখনো ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে ইসরাইলি বাহিনীর হামলা আর পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের পথে বাধা দেওয়ার অভিযোগে শনিবারের পূর্ব নির্ধারিত তিন জিম্মি মুক্তি প্রক্রিয়া স্থগিত করে হামাস। যা লুফে নেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। এবার গাজা যুদ্ধবিরতি শুরুর পর মুক্ত হয়েছেন ৫৬৬ জন ফিলিস্তিনি ও ১৬ ইসরাইলি। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী তিন সপ্তাহের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ৩৩ জিম্মি ও ১৯০০ বন্দি বিনিময়ের কথা রয়েছে। ইসরাইলের দাবি, ৩৩ জিম্মির মধ্যে আটজন আর বেঁচে নেই। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলার সময় হামাস মোট ২৫১ জনকে আটক করেছিল।
এদিকে, পুনর্গঠনের অজুহাতে গাজা দখলের পরিকল্পনায় তোলপাড় ফেলে দেয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার পুরানো সিদ্ধান্তেই অনড়। এই অদ্ভূত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আশায় আরব নেতাদের আহ্বানেও সাড়া দিচ্ছেন না তিনি। আশাহত করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাওয়া জর্ডানের বাদশাহ আব্দুল্লাহকেও। হোয়াইট হাউজে বৈঠকে গাজা দখলে ইচ্ছা আবারও উপস্থাপন করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প বলেন, গাজা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শেষ পর্যন্ত আমরা এটা ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের বিপুলসংখ্যক মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
এতে আপত্তি জানানো জর্ডানের বাদশাহকে বিকল্প প্রস্তাব তাৎক্ষনিক সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপনের আহ্বান জানান ট্রাম্প। এতে বিরক্তির ছাপ লুকাতে পারেননি বাদশাহ আব্দুল্লাহ। বরং গাজা আর অধিকৃত পশ্চিম তীর থেকে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জর্ডানের ‘অবিচল অবস্থান’ পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, পাল্টা প্রস্তাব নিয়ে আরব নেতারা একে একে ওয়াশিংটনে আসবেন। এই কাজ কীভাবে করলে সবার জন্য ভালো হয় তা খুঁজে বের করাই মূল বিষয়।
এই বিরোধিতার পরও তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প আশা প্রকাশ করে বলেছেন, পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের শেষ পর্যন্ত নিতে রাজি হবে জর্ডান ও মিশর। এক্ষেত্রে জর্ডান আর মিশরে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল অর্থ বিনিয়োগের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রয়োজনে এই অর্থ প্রবাহের রাশ টেনে ধরার পরোক্ষ হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
গাজায় গত ১৯ জানুয়ারি থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তিন-পর্যায়ের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যে বন্দি বিনিময়, স্থায়ী শান্তি, স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং গাজা থেকে ইসরাইলি বাহিনী প্রত্যাহারের লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে। তবে ইসরাইল এই চুক্তির মূল বিধান লঙ্ঘন করেছে বলে হামাস অভিযোগ তোলার পর চলমান যুদ্ধবিরতির ধারাবাহিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে শনিবার গাজায় আটক থাকা তিন বন্দির মুক্তি লাভের কথা রয়েছে। তিন সপ্তাহের মধ্যে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে মোট ৩৩ বন্দি ও ১৯০০ বন্দি বিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে। ইসরাইল জানিয়েছে, ৩৩ জনের মধ্যে আটজন বেঁচে নেই। ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলার সময় হামাস মোট ২৫১ জনকে আটক করেছিল।
বিভি/এসজি
মন্তব্য করুন: