আয়া সোফিয়া মসজিদের ঐতিহাসিক স্মৃতি সংরক্ষণে শুরু হচ্ছে সংস্কার কাজ

ছবি: সংগৃহীত
তুরস্কের ঐতিহাসিক আয়া সোফিয়া মসজিদের গম্বুজের সংস্কার ও মজবুতকরণ কাজ শুরু করতে যাচ্ছে তুর্কি সরকার। রয়টার্সের তথ্যানুসারে, প্রায় ১৪৮৬ বছর পর এই প্রাচীন স্থাপনায় এমন বৃহৎ পরিসরে সংস্কার কাজ পরিচালিত হতে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই প্রকল্পটি ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ সংরক্ষণমূলক উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হতে যাচ্ছে।
এই সংস্কার কার্যক্রমের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই অসাধারণ স্থাপনাটির স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা ও এর ঐতিহাসিক সংরক্ষণ করা। গম্বুজের স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য, গঠন ও শক্তির উপর বিশেষ নজর দিয়ে এটি এমনভাবে পুনর্গঠন করা হবে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এর সৌন্দর্য ও গুরুত্ব অটুট থাকে।
আয়া সোফিয়া মধ্যযুগীয় রোমান সম্রাজ্য ও পরবর্তীকালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল, যা বর্তমানে ইস্তাম্বুল শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। বর্তমানে এটি মুসলিমদের একটি মসজিদ।
আয়া সোফিয়া একসময় বিশ্বের সবচেয়ে বড় গির্জা ছিল। টানা ৯০০ বছর ধরে এটি খ্রিস্টানদের উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৪৫৩ সালে অটোমান সুলতান মুহাম্মদ ফাতিহের ঐতিহাসিক কনস্টান্টিনোপল বিজয়ের পর তুরস্ক মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর তিনি এটিকে একটি মসজিদে রূপান্তরিত করেন, যার নতুন নামকরণ করা হয় ইম্পিরিয়াল মসজিদ হিসেবে। প্রায় ৫০০ বছর ধরে এটি ইসলামের অন্যতম প্রধান মসজিদ হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে।
তবে, প্রায় ৭০ বছর বছর আগে তুরস্কেরই এক সরকার এই স্থাপনাটিকে একটি জাদুঘরে পরিণত করেছিল। আয়া সোফিয়া ছিল ২০১৪ সালে তুরস্কের দ্বিতীয় সর্বাধিক পরিদর্শন করা যাদুঘর। সেখানে প্রতিবছর প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন দর্শনার্থী আসতেন। তুরস্কের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে আয়া সোফিয়া ছিল তুরস্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন স্থান।
২০১৮ সালের ৩১ মার্চ কুরআন তিলাওয়াত করে ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদসহ আয়া সোফিয়ার জন্য কাজ করা সকলের রুহের মাগফিরাতের জন্য মোনাজাত করেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান । ২০২০ সালের ১০ জুলাই শুক্রবার তুরস্কের শীর্ষ আদালত আয়া সোফিয়াকে পুনরায় মসজিদে রূপান্তরের রায় ঘোষণা করেন। আয়া সোফিয়াতে প্রায় ৮৬ বছর পর আবারও মসজিদে আজান দেওয়া হয়। ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটিকে পুনরায় মসজিদ হিসেবে ঘোষণা করেন।
বাইজান্টাইন শিল্পের ইতিহাসবিদ আসনু বিলবান ইয়ালচিন বলেন, গত দশ বছর ধরে স্থাপনাটির বিভিন্ন অংশে সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, এই সংস্কার প্রক্রিয়া আয়া সোফিয়ার ইতিহাসে একটি নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় উন্মোচন করবে।
ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ ওয়াকফ বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কিটেকচার বিভাগের অধ্যাপক হাসান ফিরাত দিকার রয়টার্সকে বলেন, পুনর্গঠন প্রকল্পটি বড় ভূমিকম্পের পর দুর্বল হওয়া কাঠামোগত অংশগুলোতে বিশেষ নজর দেবে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রকৃত কাঠামোগত সমস্যা তখনই আরও স্পষ্টভাবে জানা যাবে যখন মূল কাভারটি উন্মুক্ত করা হবে।
এদিকে, আয়া সোফিয়া সংস্কার কাজ চলাকালীন নামাজ আদায়কারী ও দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে বলে জানানো হয়েছে। যদিও, সাংস্কৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ও মেরামত বিশেষজ্ঞ আহমেত গুলেচ বলেন, এই সিদ্ধান্ত সংস্কার প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। এদিকে, আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির কারণে গম্বুজ সংস্করণের সম্পূর্ণ সময়সীমাও নির্ধারণ করা এখনও সম্ভব হয়ে উঠেনি।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: