ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরাইলি পর্যটকদের নিষিদ্ধ করল মালদ্বীপ

ছবি: সংগৃহীত
এবার সাউথ এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপ ইসরাইলের নাগরিকদের দেশটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ বিষয়ে একটি আইনও পাস করেছে মালদ্বীপ সরকার। গত ১৫ এপ্রিল ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। দেশটির পার্লামেন্টে অভিবাসন আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে সব রাজনৈতিক দলের সদস্যরা দল-মত নির্বিশেষে ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেন। মিডল ইস্ট আইয়ের একটি প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, মালদ্বীপ সরকার তাদের অভিজাত পর্যটন দ্বীপগুলোতে ইসরাইলের নাগরিকদের ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু সংসদে পাস হওয়া একটি বিল অনুমোদনের পর এই নিষেধাজ্ঞায় সই করেন।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি জনগণের উপর ইসরাইল যে সহিংসতা ও গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে, তা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে সরকারের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এতে। বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি মালদ্বীপের অটল সমর্থন আবারও পুনঃনিশ্চিত করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর দপ্তরের এক মুখপাত্র সংবাদ সংস্থা এএফপিকে জানান, অবিলম্বে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হবে।
১ হাজার ১৯২টি ছোট-বড় প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি ছোট ইসলামি প্রজাতন্ত্র মালদ্বীপ। এই দেশটি শান্ত পরিবেশ, ঝকঝকে সাদা বালির সমুদ্রতট, স্বচ্ছ ফিরোজা রঙের অগভীর জলরাশি ও মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মালদ্বীপে ২ লাখ ১৪ হাজার বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেছিলেন, যাদের মধ্যে মাত্র ৫৯ জন ছিলেন ইসরাইলি নাগরিক।
মালদ্বীপে এই প্রস্তাব নতুন নয়। ২০২৪ সালের ২৯ মে বিরোধী দল মালদ্বীপিয়ান ডেমোক্র্যাটিক পার্টি-এমডিপির সংসদ সদস্য মিকাইল আহমেদ নাসিম প্রথম এই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। প্রায় এক বছর পর সংসদের পার্লামেন্টারি নিরাপত্তা পরিষেবা কমিটি প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেয়। পরে এটি সংসদে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে মালদ্বীপ ইসরাইলি পর্যটকদের প্রবেশে থাকা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছিলো। পাশাপাশি তারা ২০১০ সালে দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের উদ্যোগও নেয়। তবে, সাম্প্রতিক সময় গাজা সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে মালদ্বীপের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকারের কিছু মিত্র ইসরাইলি নাগরিকদের মালদ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার জন্য প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর প্রতি চাপ প্রয়োগ করছে। এরইমধ্যে, ২০২৪ সালে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের নাগরিকদের মালদ্বীপ সফর না করার পরামর্শও দিয়েছিল।
এদিকে, বাংলাদেশজুড়ে ইসরাইল বিরোধী ব্যাপক আন্দোলনের মধ্যে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইসরাইলে প্রবেশের উপর পূর্বের নিষেধাজ্ঞা আবারও কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ইসরাইলের আক্রমণে প্রায় ৫০,৯৮৩ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই অসহায় নারী ও শিশু।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: