জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্থায়ন বাতিলের প্রস্তাব ট্রাম্প সরকারে

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তহবিল বন্ধের কথা ভাবছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে তহবিল বন্ধে প্রস্তাব দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। প্রস্তাব কার্যকর হলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্থায়ন সম্পূর্ণরূপে বাতিলের সুপারিশ করেছে হোয়াইট হাউসের অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট তথা ওএমবি। কারণ হিসেবে মালি, লেবাননে ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোয় ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জাতিসংঘের প্রত্যেক সদস্যকে সংস্থার বাজেটে অবদান রাখতে হয়। এই অর্থ প্রদান বাধ্যতামূলক। ১৯৪৫ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বড় দাতা যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের ৩.৭ বিলিয়ন ডলারের মূল পরিচালনা বাজেটের ২২ শতাংশ এবং ৫.৬ বিলিয়ন ডলারের শান্তিরক্ষা বাজেটের ২৭ শতাংশ প্রদান করে দেশটি।
তবে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বব্যাপী সংঘাত সমাধানে জাতিসংঘের অক্ষমতা এবং অন্য ধনী দেশগুলোর প্রদত্ত তহবিলের বৈষম্যের সমালোচনার পাশাপাশি মার্কিন তহবিল পর্যালোচনা করার আহ্বান জানান। ট্রাম্পের নির্দেশেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তহবিল বন্ধের প্রস্তাব এলো।
প্রতিবেদন মতে, আগামী ১ অক্টোবর শুরু হতে যাওয়া আসন্ন অর্থবছরের জন্য শান্তিরক্ষা মিশনে তহবিল বন্ধে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের কাছে সুপারিশ করেছে ওএমবি।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদেও কূটনীতি ও সহায়তা বাজেটের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু কংগ্রেস ট্রাম্পের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করে।
শুধু শান্তিরক্ষা মিশনই নয়, খোদ মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর, বিভিন্ন বিদেশি মিশন, জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন এবং ন্যাটোর জন্যও তহবিল ৫০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে ওএমবির ‘পাসব্যাক’ নামে এই খসড়া প্রস্তাবনায়।
এ ছাড়া শিক্ষামূলক ও সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচির তহবিলও কমিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ফুলব্রাইট প্রোগ্রামের মতো মর্যাদাপূর্ণ বৃত্তিও।
একটি নথির বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জন্য ২০২৬ অর্থবছরে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮.৪ বিলিয়ন ডলার, যেখানে চলতি বছর এর বাজেট বরাদ্দ করা হয় ৫৪.৪ বিলিয়ন।
একই সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এবং ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট-এর মাধ্যমে বিতরণ করা বৈদেশিক সহায়তা ৩৮.৩ বিলিয়ন থেকে ১৬.৯ বিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবে ১০টি দূতাবাস ও ১৭টি কনস্যুলেট বন্ধের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইরিত্রিয়া, লুক্সেমবার্গ, দক্ষিণ সুদান ও মাল্টায় অবস্থিত মিশনগুলো। এছাড়া, ফ্রান্সে পাঁচটি ও জার্মানিতে দুটি কনস্যুলেট বন্ধ করার সুপারিশ রয়েছে। স্কটল্যান্ড ও ইতালির কনস্যুলেটও রয়েছে তালিকায়।
প্রস্তাবিত এই বাজেট কাটছাঁটকে ‘বেপরোয়া ও বিপজ্জনক’ বলে আখ্যায়িত করেছে মার্কিন ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। খসড়া প্রস্তাবটিকে ‘চীনা কমিউনিস্ট পার্টির জন্য বিশাল উপহার’ বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ায় সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল।
বিভি/টিটি
মন্তব্য করুন: