ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল নিয়ে মুখ খুললো ভারত (ভিডিও)
গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। এই সুবিধার মাধ্যমে এতদিন ভারতের বন্দর ব্যবহার করে অন্য দেশে পণ্য পৌঁছাতে পারতো বাংলাদেশ। ফলে এই সুবিধা বাতিলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করা হচ্ছিলো, ভারতের এই সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ হয়তো বড় কোনো সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছে না তারা। উল্টো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে দেওয়া ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টসহ সব সুবিধা বাতিল চেয়ে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব, অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে এ সংক্রান্ত নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের পর ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ফলাও করে বলা হয়েছিলো, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ভারতের সেভেন সিস্টার্স নিয়ে মন্তব্য করার পর ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে তাদের সরকার। তবে বাংলাদেশের পালটা প্রতিক্রিয়ার পর সেই অবস্থান থেকে সরে আসছে তারা। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল নিয়ে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ কথা’ বলেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। এ কূটনীতিক বলেন, দেশটির বিমানবন্দর ও স্থল বন্দরে পণ্য জটের কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত।
রণধীর জয়সওয়ালের সুরের সাথেই মিল রেখে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা বাণিজ্য বিষয়ক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটির বদলে সম্ভবত আর কোনো পাল্টা ব্যবস্থা নেবে না দিল্লি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার দাবি, ভারত সরকার ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের আগেই গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ তিনটি বন্দর বন্ধ ও স্থল বন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। যদিও সুতা আমদানি সংক্রান্ত নির্দেশনা গত সপ্তাহেই জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে তার নিজের ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারার বিষয়টিকে ভালোভাবে দেখছে না ভারত। ভারত চাইছে, বাংলাদেশ যেন ভারতের বলয় থেকে বের না হয়ে যায়। আর এ কারণেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি।
পণ্য রপ্তানির সময় পণ্যের চালানের জন্য যদি আরেক দেশের যানবাহন ব্যবহার করতে হয়, তাহলে একে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বলে। ২০২০ সালের ২৯শে জুন বাংলাদেশ ও ভারতের মাঝে এই মর্মে চুক্তি হয় যে, ট্রান্সশিপমেন্ট প্রক্রিয়ায় ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশের পণ্য তৃতীয় কোনও দেশে পাঠানো যাবে। সীমিত আকারে ব্যবহার হলেও এই সুবিধা এতদিন পেয়ে আসছিলো বাংলাদেশ। যদিও এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ হলে বাংলাদেশের বড় কোনো সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন তারা। তবে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে ইউরোপ-আমেরিকায় তৈরি পোশাকসহ যেসব পণ্য রপ্তানি হয়, ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের কারণে সেগুলো এখন বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়বে দেশের তৈরি পোশাক খাত।
বিভি/এমএফআর
মন্তব্য করুন: