নতুন কৌশল নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে পুতিন, বিপাকে ট্রাম্প?

অস্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্যে নতুন কৌশল নিয়ে হাজির হচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন? দেশটির সাম্প্রতিক এক পদক্ষেপ সেই বার্তাই দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্রের চলমান আধিপত্যে বাগড়া দিতে এবারে আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবানকে দলে ভেড়াচ্ছেন তিনি।
এর অংশ হিসেবে ঐতিহাসিক এক সিদ্ধান্তে তালেবানকে সন্ত্রাসী তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে রাশিয়া। ২২ বছর ধরে এই তালিকায় ছিল তালেবান গোষ্ঠী। এটি আফগানিস্তানের ব্যাপারে মস্কোর পররাষ্ট্র নীতিতে বড়সড় অবস্থান বদল। এর মধ্য দিয়ে নতুন করে দেশটিতে সক্রিয়তা বাড়াতে পারবে মস্কো।
রুশ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রুশ প্রসিকিউটর জেনারেল অফিসের এক পিটিশনের জবাবে ১৭ এপ্রিল রাশিয়ার সুপ্রিম কোর্ট তালেবানকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর তালিকা থেকে বাদ দেয়ার রায় দেয়। এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা কার্যকর হয়। এর আগ পর্যন্ত ২০০৩ সালের সন্ত্রাস আইন অনুসারে, তালেবানের সাথে যে কোনো ধরনের যোগাযোগ বা সংযোগ শাস্তিযোগ্য অপরাধ ছিল রাশিয়ায়।
মস্কো জানিয়েছে, তারা আফগানিস্তানের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী। এরই অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত এলো। তালেবানের সাথে সম্পর্ক সহজ করার উদ্দেশ্যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ কয়েকবার তাদের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানায় রাশিয়া।
গত বছর আইএসসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তালেবানকে মিত্র বলে উল্লেখ করেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন। অক্টোবরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, আফগানিস্তানের সাথে রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিকে এগিয়ে নেবে মস্কো। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গ্যাস রপ্তানির জন্য আফগানিস্তানের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট পেতে চায় রাশিয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তালেবানের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক গভীর করার বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করবে। এতে করে কৌশলগত ভূ-রাজনীতিসহ নানা ভাবে লাভবান হবে মস্কোর মিত্র ইরান ও চীন। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের যে তৎপরতা তাতেও উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়বে, যা দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য উদ্বেগের। একই সাথে ইসরাইলেরও জন্যও তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অন্যদিকে রাশিয়ার দিক থেকে পাওয়া এই স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বৈশ্বিকভাবে একঘরে হয়ে পড়া তালেবান আন্তর্জাতিক মঞ্চে নতুন করে হাজির হবার সুযোগ পাবে। এর জেরে অন্যান্য দেশকেও স্বীকৃতির জন্য চাপ দিতে পারবে তারা।
এরই মাঝে তালেবানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে চীন, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বেশকিছু দেশ। রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক গভীর করার মাধ্যমে আফগানিস্তানের শাসক হিসেবে তালেবানের বৈধতা আরো পাকাপোক্ত হলো।
১৯৮৯ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের আগে এক দশকব্যাপী যুদ্ধে জড়ায় রাশিয়া। সে সময় তালেবানরাও তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। অতীতের সেই তিক্ততা ডিঙিয়ে এ যাত্রায় বন্ধুত্বের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, সেটাই আশা করছে দুই দেশ।
বিভি/এইচজে
মন্তব্য করুন: