২০২৬ সালে থার্ড টেম্পল নির্মাণ করার প্রচারণা চালাচ্ছে ইসরাইলিরা

ছবি: সংগৃহীত
আল-আকসা মসজিদকে কেন্দ্র করে ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের হুমকির বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনি সরকার। আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, তারা আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, যাতে পবিত্র এই স্থানটির সম্ভাব্য ধ্বংস বা অবমাননার যেকোনো প্রচেষ্টাকে গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী কিছু সংগঠনের পক্ষ থেকে আল-আকসা মসজিদ ধ্বংসের আহ্বান ছড়িয়ে পড়ায় তারা গভীর উদ্বেগে রয়েছে।
১৯ এপ্রিল ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় জানায়, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হিব্রু ভাষায় ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারী কিছু সংগঠন আল-আকসা মসজিদে হামলার ডাক দিচ্ছে। পাশাপাশি, সেই পবিত্র স্থাপনা ধ্বংস করে সেখানে একটি টেম্পল গড়ে তোলার পরিকল্পনার প্রচারনা চালাচ্ছে।
অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদের প্রাঙ্গণ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন পবিত্র স্থান। এটি ফিলিস্তিনিদের জাতীয় পরিচয়েরও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত। যদিও প্রাঙ্গণটির প্রশাসনিক দায়িত্ব জর্ডানের হাতে। তবে, এর প্রবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করে ইসরাইলি বাহিনী। এই স্থানটি ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের কাছেও ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের বিশ্বাস মতে, এখানেই একসময় প্রথম ও দ্বিতীয় টেম্পল স্থাপিত ছিল, যা খ্রিস্টপূর্ব ৭০ সালে রোমান সাম্রাজ্যের হাতে ধ্বংস হয়।
কিছুদিন আগে থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে তৈরি একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে। সেখানে ইহুদিদের তৃতীয় উপাসনালয় নির্মাণের জন্য মসজিদ ধ্বংস করার দৃশ্য প্রদর্শন করা হয়েছে। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল আগামী বছর জেরুজালেমে।
এক্স-এ পোস্ট করে এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনি মন্ত্রণালয় বলছে, তারা এই ধরনের পোস্টগুলোকে অধিকৃত জেরুজালেমে খ্রিস্টান ও মুসলিমদের পবিত্র স্থানগুলোর উপর হামলা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত উসকানিমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। অতএব, তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় যাতে এসব উসকানিমূলক কার্যকলাপকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় ও আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
আল-আকসা মসজিদ বর্তমানে ডানপন্থী ইসরাইলি রাজনীতিবিদ ও বসতি স্থাপনকারীদের টার্গেটে পরিণত হয়েছে। তারা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় মসজিদের চত্বরে জোরপূর্বক প্রবেশ করছে। পাশাপাশি, সেখানে ধর্মীয় অনুষ্ঠানও পালন করছে।
ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের দীর্ঘমেয়াদি নীতি অনুযায়ী, দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ এলাকাতে নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী ইহুদি ও অন্যান্য অ-মুসলিম দর্শনার্থীদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে, তাদের সেখানে ধর্মীয় আচার পালন বা কোনো ধর্মীয় প্রতীক প্রদর্শনের অনুমতি নেই।
২০২৪ সালের আগস্টে আল-আকসা মসজিদ প্রাঙ্গণে টেম্পল মাউন্ট স্থাপন করার ঘোষণা দিয়ে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনার মুখে পড়েন ডানপন্থী ইসরাইলি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির। ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের একটি অংশের বহুদিনের বিশ্বাস এখন ইসরাইলে তৃতীয় মন্দির নির্মাণের এক জোরালো আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। অনেকেই এই ঘটনাকে হেবরনের ঘটনার সাথে মিলিয়ে দেখছেন, যেখানে ইব্রাহিমি মসজিদ, যা কেভ অব দ্য পেট্রিয়ার্কস নামেও পরিচিত, তাকে মুসলিম ও ইহুদি অংশে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল।
২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির অন্তত ৬বার এই পবিত্র স্থানে গিয়েছেন। প্রতিবারই তার সফরকে ঘিরে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: