ইস্তাম্বুলে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প, ২৩৬ জন আহত

ছবি: সংগৃহীত
তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ২৩ এপ্রিল স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৪৯ মিনিটে এই ভূমিকম্পটি অনুভূত হয়। এই ভূমিকম্পটি প্রায় ১৩ সেকেন্ড ধরে শক্তিশালী কম্পন সৃষ্টি করে। এ সময় ভবনগুলো দুলে ওঠে ও তাক থেকে জিনিসপত্র পড়ে যায়। ফলে, শহরজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। মূল ভূমিকম্পের পর ৩.৫ থেকে ৫.৯ মাত্রার একাধিক আফটারশক অনুভূত হয়। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি, কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের সিলিভরি জেলায়। বর্তমানে ভূমিকম্পে প্রায় ৩৭৮টি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ৯টি বাড়ি উদ্ধার করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
তুরস্ক সরকার জানিয়েছে, আতঙ্ক ও হুড়োহুড়ির কারণে অন্তত ২৩৬ জন আহত হয়েছেন। অনেকে ভীত হয়ে উচ্চ স্থান থেকে লাফিয়ে পড়েছিলেন। বর্তমানে তাদের চিকিৎসা চলমান রয়েছে। এসময়, শত শত মানুষ পার্কে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন। অনেকেই ভয়ে ঘরে ফেরার সাহস পাননি। চারপাশে আতঙ্কের ছায়া যেন কাটছিলই না।
৪১ বছর বয়সী জেইনেপ কারাতাস আল-জাজিরাকে বলেন, তিনি তখন সপ্তম তলায় ছিলেন। রান্না করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হঠাৎ পুরো ভবন কাঁপতে শুরু করে। তিনি দেয়ালে চির ধরতে দেখেন। ফলে, আর সময় নষ্ট করেননি। পোষা বিড়ালটিকে কোলে তুলে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যান।
ভূমিকম্পটি হয়েছে তুরস্কের জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও শিশু দিবসের দিনেই। ফলে, দিনটির সব অনুষ্ঠানে ভাটা পরে। মানুষের ভেতর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ বেড়ে যায়। আল-জাজিরাকে ৬৯ বছর বয়সী বিলগে জানান, তার হাত কাঁপা থামছিল না। হঠাৎ ভবনের লোকজন ‘ভূমিকম্প!’ বলে ছুটতে শুরু করে। তিনি কোনোভাবে নিজেকে সামলে নিচে নেমে আসেন।
প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষের বাস ইস্তাম্বুলে। ইস্তাম্বুলের বাসিন্দারা দীর্ঘ সময় ধরে ভূমিকম্পের ঝুঁকির ভেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এখানকার ইতিহাসও এ ধরনের বিপর্যয়ে পরিপূর্ণ। ১৫০৯, ১৭৬৬, ১৮৯৪ সালে ইস্তাম্বুলে মারাত্মক ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে প্রায় ১৭,০০০ মানুষ প্রাণ হারায়।
এখন পর্যন্ত মোট ১২৭টি আফটারশক অনুভূত হয়েছে। সবচেয়ে শক্তিশালীটির মাত্রা ছিল ৫. ৯। যদিও ভবনের কোড আপডেট করা হয়েছে, তবুও ভয় এখনও রয়ে গেছে। গোকহান নামে এক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, রাতে ঘুমাতে তার ভীষণ ভয় লাগে। যদি আবার আফটারশক হয়, তিনি তো দ্রুত চলাফেরা করতে পারেন না।
এদিকে, সবাইকে সাবধানে থাকার অনুরোধ জানিয়েছে তুরস্কের প্রশাসন। আফটারশক যে কোনো মুহূর্তে আরও কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। সৌভাগ্যবশত, এখন পর্যন্ত কোনো উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটেনি, বলেন এরদোয়ান।
বিভি/আইজে
মন্তব্য করুন: